নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
রাজধানীর লালবাগে শুক্রবার এক ইফতার মাহফিলে অংশ নিয়ে বক্তব্য দিতে গিয়ে এই আহ্বান জানান তিনি।
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আমার কথা খুব সোজা। ১৪ বছর বহু জ্বালাইছেন এ দেশের মানুষকে। এখন মানুষ আপনাদের দেখতে চায় না, আওয়ামী লীগকে দেখতে চায় না। সোজাসুজি বলতে চাই, এই রমজানের মাসে এই ইফতারে আগে যে, দয়া করে মানে মানে সরে পড়ো।’
তিনি বলেন, ‘আমাদের সব কিছুকে তোমরা ধবংস করে দিয়েছো, আমাদের অর্থনীতিকে ধবংস করেছো, আমাদের রাষ্ট্রব্যবস্থাকে ধবংস করেছো, চুরি-দুর্নীতিকে জাতীয়করণ করেছো। দয়া করে সরে পড়েন, একটা তত্ত্বাবধায়ক সরকারের হাতে ক্ষমতা দেন। মানুষ একটা ভোট দিক, ভোট দিয়ে মানুষ যাকে খুশি তাকে নির্বাচন করুক।’
বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘বঙ্গবাজার পুড়ে গেছে-এই বাজার বড় লোকের বাজার নয়, সাধারণ মধ্যবিত্তদের বাজার। দুর্ভাগ্য আমাদের এর আগে সিদ্দিক বাজারে অগ্নিকাণ্ডে ২২ জন মানুষ মারা গেল। এর আগে চট্টগ্রামে হয়েছে। কিন্তু এই সরকারের এসব ব্যাপারে কোনো মাথা ব্যথা নেই।’
তিনি বলেন, ‘তারা উদোর পিন্ডি বুদোড় ঘাড়ে চাপাতে চায়। তারা নাকি এখন বলে যে, নাশকতার গন্ধ পায়। আওয়ামী লীগের অবস্থা হয়েছে যে, তারা সারাক্ষণ একটা দুঃস্বপ্ন দেখে। এই বলে বিএনপি আসলো, এই বলে আন্দোলন করলো, এই বলে তারেক রহমান আসলো।
‘রাত্রি বেলা অনেক মানুষ খারাপ স্বপ্ন দেখলে আতকে ওঠে না, চিৎকার করে না? আওয়ামী লীগও সারাক্ষণ দুঃস্বপ্ন দেখে এই বিএনপি এই বিএনপি আসলো…।’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আওয়ামী লীগের দেয়ার কিছু নাই। তারা অত্যন্ত পরিকল্পিতভাবে জোর করে ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য সমস্ত নির্বাচনী ব্যবস্থাকে ধবংস করে দিয়েছে। ভোট দিতে পারছেন না আপনারা… ভোট আগের রাত্রে হয়ে গেছে আর ওরা (আওয়ামী লীগ) সরকারে বসে গেছে।’
তিনি বলেন, ‘২০১৪ সালে ভোটই হয়নি ১৫৩টি আসনে নির্বাচিত ঘোষণা হয়ে গেল। আর প্রত্যেক কথায় কথায় তারা খালি বলে উন্নয়নও করেছে। আমি এখানে আসার পথে দেখলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের দেয়ালে লেখা- উন্নয়ন কি চুবাইয়ে খাবো? উন্নয়ন তো চিবাইয়ে খাওয়া যায় না। আমার পেটে যদি ভাত না থাকে, ১০টা উড়াল সেতু বানান আমার তাতে কি আসে যায়।’
পদ্মা সেতুসহ বিভিন্ন প্রকল্পের ব্যাপক দুর্নীতির কথা উল্লেখ করে সরকার চুরি-দুর্নীতিকে জাতীয়করণ করেছে বলে অভিযোগ করেন তিনি।
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘প্রধান নির্বাচন কমিশনার অনেক দুঃখে সঙ্গে বলেছেন যে, ইভিএম-ব্যালট কোনটাই কাজে দেবে না যদি বিরোধী দল অংশ নেয়, অর্থাৎ বিএনপি যদি নির্বাচনে অংশ না নেয় সেটা কাজে দেবে না। কেউ মানবে না। সুতরাং একটাই দাবি যে, পদত্যাগ করো আর তত্ত্বাবধায়ক সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করো।’
লালবাগের সাবেক সাংসদ নাসিরউদ্দিন পিন্টুকে স্মরণ করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘লালবাগের মানুষ ঢাকার সবচেয়ে পুরনো মানুষ। আপনাদের এই এলাকায় অনেক নামকরা নেতা ছিলেন। সবশেষে আমাদের নাসিরউদ্দিন পিন্টু ভাই।
‘এই সরকার তাকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করেছে, জেলখানার মধ্যে হত্যা করেছে, কাস্টডিওতে হত্যা করেছে, এরকম কাস্টডিওতে বহু লোককে হত্যা করেছে, এই এলাকায় মানুষকে হত্যা করেছে, গুম করে নিয়ে গেছে। এই জুলুমবাজ নির্যাতনকারী সরকারকে কেউ দেখতে চান না।’
লালবাগে ‘হৃদয় কমিউনিটি সেন্টারে’ থানা বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের যৌথ উদ্যোগে এই ইফতার মাহফিল ও আলোচনা সভা হয়। এতে লালবাগ থানার নেতা-কর্মী-সমর্থকরা অংশ নেন।
মহানগর দক্ষিনের যুগ্ম আহ্বায়ক মোশাররফ হোসেন খোকনের সভাপতিত্বে এই ইফতারে মহানগর দক্ষিণের যুগ্ম আহ্বায়ক নবী উল্লাহ নবী, তাঁতী দলের আবুল কালাম আজাদসহ ওয়ার্ড নেতারা বক্তব্য দেন।