খুলনা ওয়াসার ২ হাজার ৩৩৪ কোটি ১৩ লাখ টাকা ব্যয়সাপেক্ষ মেগা প্রকল্পের কাজ করে দিয়েছে খুলনা সিটি করপোরেশন (কেসিসি)। কেসিসির অভিযোগ, কাজের ধীরগতিসহ রাস্তা খোঁড়াখুঁড়িতে জনভোগান্তি শুরু হয়েছে। এছাড়া কাজ বাস্তবায়নে কারিগরি ত্রুটিও আছে।
ওয়াসা বলছে, নির্বাচনী তফসিল ঘোষণা হওয়ায় আপাতত সড়কের খোঁড়াখুঁড়ি বন্ধ করার নির্দেশ দিয়েছে কেসিসি। তাদের কাজে কোনো কারিগরি ত্রুটি নেই।
নগরবাসীর দীর্ঘদিনের দাবির মুখে বর্তমান সরকারের অনুমোদিত ‘খুলনা পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থার উন্নয়ন’ শীর্ষক প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে ওয়াসা। শহরের পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা শৃঙ্খলার মধ্যে আনার জন্য প্রকল্প কাজের অনেকটাই ইতোমধ্যে শেষ করে এনেছে খুলনা ওয়াসা।
ওয়াসার তথ্যমতে, বর্তমান সরকারের নির্বাচন-পূর্ব প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী, ২০২০ সালের ২৮ জুলাই ‘খুলনা পয়ঃনিস্কাশন ব্যবস্থার উন্নয়ন’ প্রকল্পটি একনেক অনুমোদন দেয়। প্রকল্পের জন্য দুই হাজার ৩৩৪ কোটি ১৩ লাখ টাকার মধ্যে এডিবির ঋণ এক হাজার ৪০৪ কোটি ৭১ লাখ ও সরকারের নিজস্ব তহবিলের ৯২৯ কোটি ৪২ লাখ টাকা।
২০২০ সালের অক্টোবর শুরু হওয়া প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার কথা ২০২৫ সালের ডিসেম্বরে। প্রকল্পের কাজ দ্রুত করতে এর আগেই দুটি শোধনাগার ও আটটি পাম্প স্টেশনের জন্য জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে।
প্রকল্প সূত্রে জানা গেছে, প্রথম পর্যায়ের প্রকল্পে নগরীর ১৫ থেকে ৩১ নম্বর ওয়ার্ডে কাজ হচ্ছে। প্রতিটি বাড়ির সামনেই পয়ঃনিষ্কাশনের পাইপ বসানো হচ্ছে। ওই পাইপের মধ্য দিয়ে পানি ও সেপটিক ট্যাঙ্কের পানি নগরীর ভেতরের আটটি পাম্প স্টেশনে যাবে। সেখান থেকে পাম্প করে বর্জ্য শহরের বাইরে মাথাভাঙ্গা ও ঠিকারা বাঁধে পরিশোধন কেন্দ্র দুটিতে পাঠানো হবে।
নগরবাসীর স্বাস্থ্যঝুঁকি এড়াতে নগরীর প্রায় ৩০ হাজার বাড়ি থেকে পয়ঃবর্জ্য পাইপলাইনে নেয়ার পরিকল্পনা রয়েছে প্রকল্পে। প্রথম প্রকল্পের কাজ শেষে দ্বিতীয় পর্যায়ে ১ থেকে ১৪ নম্বর ওয়ার্ডের জন্য পৃথক প্রকল্প নেয়ার কথা। পরিশোধনের জন্য আড়ংঘাটার শলুয়া এলাকায় জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে। প্রায় ২৫০ কিলোমিটার পাইপলাইন বসবে। এগুলো ১০ ইঞ্চি থেকে ৪ ফুট পর্যন্ত চওড়া। সড়কের প্রশস্ততা অনুযায়ী কোথাও সড়ক খুঁড়ে, আবার কোথাও মেশিনের মাধ্যমে পাইপ বসানোর কথা রয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ইতোমধ্যে নগরীর শেখপাড়া রোড, আহসান আহমেদ রোড, সাউথ সেন্ট্রাল রোড, টিবি ক্রস রোড ও সামছুর রহমান রোডে ম্যানহোল নির্মাণ কাজ শেষ হয়েছে। বর্তমানে নগরীর মির্জাপুর ইউসুপ রো রোড, দারোগাপাড়া ও ট্যাংক রোডে ম্যানহোল তৈরির জন্য সড়কে গর্ত করা হয়েছে। কিন্তু এ অবস্থায় কেসিসি দাপ্তরিক চিঠি দিয়ে সড়কের সব কাজ বন্ধের নির্দেশ দিয়েছে।
কিন্তু চলমান থাকা নির্মাণ কাজে ধীরগতি ও প্রকল্পে ডিজাইনের টেকনিক্যাল দিক নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে কেসিসি। তারা বলছে, একটি রাস্তায় খোঁড়াখুঁড়ি ও ম্যানহোল তৈরিতে ওয়াসার দীর্ঘ সময় লাগছে। এতে অনেক স্থানে নতুন তৈরিকৃত ফুটপাত ও ড্রেন নষ্ট হচ্ছে। এছাড়া যেভাবে ম্যানহোল তৈরি হয়েছে, ভবিষ্যতে এই রাস্তা সংস্কারের সময় তা ভেঙে যেতে পারে। কিংবা রাস্তার ওই অংশ দেবে যেতে পারে। তখন নতুন করে জনদুর্ভোগ সৃষ্টি হবে।
কেসিসির চীফ প্ল্যানিং অফিসার আবির উল জব্বার বলেন, ‘কাজ বন্ধ রাখতে আমরা চিঠি দিয়েছি। কেননা একটি রাস্তায় খোঁড়াখুঁড়ি ও ম্যানহোল তৈরিতে এক বছরের বেশি সময় লাগছে। এতে নতুন ফুটপাত ও ড্রেন নষ্টসহ পুরো রাস্তাই ড্যামেজ হয়ে যাচ্ছে।
‘এছাড়া যেভাবে ম্যানহোল তৈরি করা হয়েছে, ভবিষ্যতে রাস্তা সংস্কারের সময় আবার তা ভেঙে যেতে পারে কিংবা দেবে যেতে পারে। এতে কেসিসি বিপাকে পড়বে। ইতোমধ্যে সবাই কেসিসিকে দোষারোপ করছে। এসব কারণে ডিজাইনে টেকনিক্যাল দিক যাচাই করতে ওয়াসার কাজ বন্ধ রাখতে বলা হয়েছে।’
তবে খুলনা ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ বলেন, ‘নির্বাচনী তফসিল ঘোষণা হওয়ায় কেসিসি থেকে কাজ বন্ধ রাখতে বলা হয়েছে। কেসিসি থেকে আগেও আমাদের বলা হয়েছিল যে তফসিল ঘোষণা হলে সড়ক খোঁড়াখুঁড়ি করা যাবে না।’
তিনি বলেন, ‘যেসব সড়কে খোঁড়া আছে তা দ্রুত ঠিক করে দিচ্ছি। আর নতুন করে কোনো সড়ক আপাতত খোঁড়া হচ্ছে না। শহরের প্রায় সব সড়কের মালিক কেসিসি। তাই তাদের নির্দেশ মানতে হচ্ছে। তবে কাজে টেকনিক্যাল কোনো সমস্যা নেই। প্রকল্পের সব কাজ ঠিকমতোই চলছে।’