রাজধানীর বঙ্গবাজারের পুড়ে যাওয়া অংশ পরিষ্কার করে ব্যবসার সুযোগ দেয়ার দাবি জানিয়েছেন আবু তাহের নামের এক হকার।
মার্কেটে আগুন ধরার পরের দিন বুধবার তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমাদের দাবি, আমাদের দোকান করার সুযোগ দিক। এই স্থান পরিষ্কার করে যে যেভাবে পারে, তাকে দোকান করতে দেয়া হোক।
‘এরপর সরকার এটাকে বিল্ডিং বা মার্কেট করুক, এতে আমাদের আপত্তি নাই। সরকারের প্রতি আমাদের আহ্বান, ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীরা যেন ছেলে-মেয়ে নিয়ে একটু খেতে পারে, সরকার যেন তাদের একটু সহযোগিতা করে।
‘সহযোগিতা করলে তারা মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারবে। অন্যথায় তারা চিন্তায় আরও নিঃস্ব হয়ে যাবে। অনেকে হার্ট অ্যাটাকও করতে পারে।’
বঙ্গবাজার কমপ্লেক্সের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও অ্যানেক্সকো টাওয়ারের পরিচালক নাজমুল হুদা বলেন, ‘বিভিন্ন সংস্থা যদি আমাদের দিকে একটু মনোযোগ দেয়, তাহলে আমরা খুব দ্রুত সময়ের মধ্যে উঠতে পারব।’
কত ব্যবসায়ী ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এখানে কিছু সিটি করপোরেশনের মার্কেট আছে। অনেকে আবার ব্যক্তি মালিকানাধীন মার্কেট নিয়েছে। তাই সব হিসাব করে মোট সংখ্যা বলতে আমাদের একটু সময় লাগবে।’
তিনি বলেন, ‘আমাদের এই মার্কেট ঘিরে তিনটা গোষ্ঠী। একটি পক্ষ হলো যারা আমরা ব্যবসা করি। আরেকটা কর্মচারী, আরেকটা হলো পাওনাদার। যারা আমাদের মালামাল দেন, তারাও কিন্তু আজকে ক্ষতির সম্মুখীন। ‘তারা ভাবতেছে কীভাবে আবার ব্যবসাটা দাঁড়াবে। তারা কীভাবে তাদের পাওনা পাবে।’
তিনি বলেন, ‘ঈদ নিয়ে আমাদের যে আয়োজন সেখানেও আমরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি। সব বেসামাল হয়ে গেছে। আমরা সবার সহযোগিতা চাই। এটা কোনো রাজনৈতিক বিষয় নয়, মানবিক বিষয়। আমরা রাত-দিন পরিশ্রম করব। ভুল থাকলে সংশোধন করব।’
ফায়ার সার্ভিসের পক্ষ থেকে বারবার সাবধান করা হয়েছে। এ বিষয়ে আগামীতে ব্যবসায়ীরা সতর্ক হবেন কি না জানতে চাইলে নাজমুল হুদা বলেন, ‘এটা আমরা মনে করি না। আমরা মনে করি, একটা ধারাবাহিক অবস্থা এসেছে। সেটা নির্ভরযোগ্য অবস্থা। পূর্বে আমরা মাঠে থেকেছি। ১০-১২ বছর বিলম্ব করেও আমরা পাই না। এটা একটা ঐতিহ্যবাহী মার্কেট।
‘এটা ভেঙে দিলে আমরা দুই-তিন বছরের মধ্যে পুনর্বাসিত হয়ে যেতে চাই। বিলম্ব হলে তো আমাদের অস্তিত্ব থাকবে না, তবে বর্তমান মেয়র সিটি করপোরেশনের কাজগুলো খুব দ্রুত সময়ে করে দেখাচ্ছেন। উনাকে নির্ভরযোগ্য অভিভাবক হিসেবে আমরা মনে করি। উনি যদি পদক্ষেপ নেন আমরা উনার সাথে থাকবো।
‘আমরা বিরুদ্ধাচারণ করতে চাই না। উনার নেতৃত্বে বর্তমান পরিস্থিতি সামাল দিয়ে আমরা কীভাবে এগিয়ে যাব, সেটি দেখতে চাই।’
৩০ ঘণ্টায়ও নির্বাপণ হয়নি আগুন
রাজধানীর বঙ্গবাজারে মঙ্গলবার সকালে ধরা আগুন ৬ ঘণ্টার মধ্যে নিয়ন্ত্রণে এলেও ৩০ ঘণ্টা পরও নির্বাপণ হয়নি।
আগুন ধরার পরের দিন বুধবার পুড়ে যাওয়া বঙ্গবাজারের বিভিন্ন অংশ থেকে ধোঁয়া উড়তে দেখা যায়। কোথাও কোথাও ছোট ছোট আগুনও দেখা যায়।
এমন পরিস্থিতিতে টিন, লোহার ফ্রেম, পুড়ে যাওয়া ক্যাশ বাক্স, দোকানের শাটার সরাতে দেখা যায় লোকজনকে। এ কাজে বঙ্গবাজারের ব্যবসায়ীদের পাশাপাশি বহিরাগতদেরও দেখা যায়।
ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তারা জানান, বঙ্গবাজারের বড় অংশ ছিল কাঠের ফ্রেমের ওপর। আগুনে কাঠের ফ্রেম পুড়ে তিন তলার কাঠামো জমি বরাবর মিশে গেছে। মার্কেটের দোকানগুলোর শাটার, চালাসহ বেশ কিছু কাঠামো লোহার ছিল। এসব লোহার অংশের নিচে চাপা পড়ে আছে ব্যবসায়ীদের আধাপোড়া কাপড়। চাপা পড়া কাপড়ে কোথাও কোথাও আগুন জ্বলছে, কিছু অংশে শুধু ধোঁয়া হচ্ছে।
সংখ্যায় বঙ্গবাজারের আগুন
আগুন লাগার তারিখ: ৪ এপ্রিল, ২০২৩
আগুন লাগার সময়: ফায়ার সার্ভিস খবর পায় সকাল ৬টা ১০ মিনিটে
প্রথম ইউনিট পৌঁছার সময়: সকাল ৬টা ১২ মিনিট
আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ করা ইউনিটের সংখ্যা: ৪৮
আগুন নিয়ন্ত্রণের সময়: দুপুর ১২টা ৩৬ মিনিট
ক্ষতিগ্রস্ত দোকানের সংখ্যা: বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির দাবি অনুযায়ী, প্রায় ৫ হাজার
আনুমানিক ক্ষয়ক্ষতি: বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির দাবি অনুযায়ী, আনুমানিক ২ হাজার কোটি টাকা। এর বিপরীতে ৭০০ কোটি টাকা থোক বরাদ্দ চেয়েছে সমিতি।
আগুনে আহত ফায়ার সার্ভিস সদস্য: আটজন, যাদের মধ্যে দুজন আশঙ্কাজনক অবস্থায় চিকিৎসাধীন
আগুন নেভাতে দেরি হওয়ার কারণ: ফায়ার সার্ভিসের ভাষ্য অনুযায়ী, তিনটি। এগুলো হলো পানির অভাব, বাতাস ও উৎসুক জনতা।
তদন্ত কমিটি: একটি, যার সদস্য পাঁচ