রাজধানীর বঙ্গবাজারে মঙ্গলবার সকালে ধরা আগুন ৬ ঘণ্টার মধ্যে নিয়ন্ত্রণে এলেও ৩০ ঘণ্টা পরও নির্বাপণ হয়নি।
আগুন ধরার পরের দিন বুধবার পুড়ে যাওয়া বঙ্গবাজারের বিভিন্ন অংশ থেকে ধোঁয়া উড়তে দেখা যায়। কোথাও কোথাও ছোট ছোট আগুনও দেখা যায়।
এমন পরিস্থিতিতে টিন, লোহার ফ্রেম, পুড়ে যাওয়া ক্যাশ বাক্স, দোকানের শাটার সরাচ্ছেন লোকজন। এ কাজে বঙ্গবাজারের ব্যবসায়ীদের পাশাপাশি বহিরাগতদেরও দেখা যায়।
৩০ ঘণ্টার বেশি সময় পরও কেন আগুন পুরোপুরি নির্বাপণ করা যাচ্ছে না, তা জানিয়েছেন ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তারা।
তারা জানান, বঙ্গবাজারের বড় অংশ ছিল কাঠের ফ্রেমের ওপর। আগুনে কাঠের ফ্রেম পুড়ে তিন তলার কাঠামো জমি বরাবর মিশে গেছে। মার্কেটের দোকানগুলোর শাটার, চালাসহ বেশ কিছু কাঠামো লোহার ছিল। এসব লোহার অংশের নিচে চাপা পড়ে আছে ব্যবসায়ীদের আধাপোড়া কাপড়। চাপা পড়া কাপড়ে কোথাও কোথাও আগুন জ্বলছে, কিছু অংশে শুধু ধোঁয়া হচ্ছে।
আগুন নিয়ন্ত্রণ ও নির্বাপণের দায়িত্বে থাকা অন্তত ১০ জন ফায়ার ফাইটারের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, কয়েক শ স্পটে ধোঁয়া হচ্ছে। এসব ধোঁয়া বা আগুনের উৎস খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। ওপরে আবর্জনার স্তূপ সরানোর পর পুরোপুরি নির্বাপণ সম্ভব হবে।
ফায়ার সার্ভিসের পরিচালক (অপারেশন ও মেইনটেন্যান্স) লেফটেন্যান্ট কর্নেল মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, ‘আগুনের প্রকৃত সোর্স যেটি, তা আমরা এখনও খুঁজে বের করতে পারিনি। মালামাল বের করে আনার কারণে এখনও কোথাও কোথাও একটু একটু আগুন জ্বলছে, ধোঁয়া হচ্ছে। আগুন সম্পূর্ণরূপে আমাদের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে, তবে পুরোপুরি নির্বাপণ করতে পারিনি।’
তিনি বলেন, ‘স্পটে এখনও ফায়ার সার্ভিসের ১২ ইউনিট কাজ করছে। আমাদের পানির স্বল্পতা রয়েছে। পর্যাপ্ত পানি কাছাকাছি না পাওয়ার কারণেও আগুন নির্বাপণ করতে দেরি হচ্ছে, তবে আমরা আশা করি আজকের মধ্যে আগুন পুরোপুরি নির্বাপণ করতে পারব।’
এ কর্মকর্তা বলেন, ‘আমাদের ফায়ার ফাইটারা রাত-দিন কাজ করে যাচ্ছে। প্রত্যেকটি জায়গায় তারা অবস্থান করছে। ভবন থেকে মালামাল বের করতে তারা সর্বোচ্চ সহযোগিতা করছে। সকল মালামাল বের করতে পারলেই তবে আমরা সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে নিতে পারব।’
তিনি জানান, ফায়ার সার্ভিসের আটজন মঙ্গলবার আহত হয়েছিলেন, যাদের মধ্যে দুজন আশঙ্কাজনক অবস্থায় রয়েছেন। বাকি ছয়জন শঙ্কামুক্ত।
ক্ষতিগ্রস্ত ভবন ফের ব্যবহারের উপযোগী আছে কি না জানতে চাইলে লেফটেন্যান্ট কর্নেল মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, ‘অ্যানেক্সকো টাওয়ারের বিভিন্ন পিলারে ফাটল ধরেছে। সুতরাং এখন রাজউক এবং তাদের ইঞ্জিনিয়ারদের পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে, তাদের অনুমতি ছাড়া পুনরায় ভবনে ব্যবসা-বাণিজ্য শুরু করা যাবে না।’
সংখ্যায় বঙ্গবাজারের অগ্নিকাণ্ড
আগুন লাগার তারিখ: ৪ এপ্রিল, ২০২৩
আগুন লাগার সময়: ফায়ার সার্ভিস খবর পায় সকাল ৬টা ১০ মিনিটে
প্রথম ইউনিট পৌঁছার সময়: সকাল ৬টা ১২ মিনিট
আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ করা ইউনিটের সংখ্যা: ৪৮
আগুন নিয়ন্ত্রণের সময়: দুপুর ১২টা ৩৬ মিনিট
ক্ষতিগ্রস্ত দোকানের সংখ্যা: বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির দাবি অনুযায়ী, প্রায় ৫ হাজার
আনুমানিক ক্ষয়ক্ষতি: বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির দাবি অনুযায়ী, আনুমানিক ২ হাজার কোটি টাকা। এর বিপরীতে ৭০০ কোটি টাকা থোক বরাদ্দ চেয়েছে সমিতি।
আগুনে আহত ফায়ার সার্ভিস সদস্য: আটজন, যাদের মধ্যে দুজন আশঙ্কাজনক অবস্থায় চিকিৎসাধীন
আগুন নেভাতে দেরি হওয়ার কারণ: ফায়ার সার্ভিসের ভাষ্য অনুযায়ী, তিনটি। এগুলো হলো পানির অভাব, বাতাস ও উৎসুক জনতা।
তদন্ত কমিটি: একটি, যার সদস্য পাঁচ