বঙ্গবাজারে মঙ্গলবার সৃষ্ট আগুন নিঃস্ব করেছে হাজারো ব্যবসায়ীকে। সব মিলে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন প্রায় ৫ হাজার কাপড় ব্যবসায়ী। স্বল্প পুঁজির এসব ব্যবসায়ী এখন চোখে অন্ধকার দেখছেন। এই ধ্বংসস্তূপের মাঝে দাঁড়িয়েও তারা স্বপ্ন দেখছেন ঘুরে দাঁড়ানোর। একইসঙ্গে তারা দোকানের সেই পজিশনটুকু বেহাত হওয়ার শঙ্কায় পড়েছেন।
ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের প্রত্যাশা, সরকার তাদেরকে ঘুরে দাঁড়ানোর সুযোগটা করে দেবে। দোকানের পজিশন বেহাত হওয়া থেকে রক্ষার পাশাপাশি আর্থিক সহায়তা দিয়ে তাদেরকে নতুন করে ব্যবসা শুরুর ব্যবস্থা করে দেয়া হবে।
ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের সঙ্গে এ বিষয়ে কথা বললে প্রায় সবাই তাদের পুড়ে যাওয়ার দোকান আবার ফিরে পাওয়া নিয়ে শঙ্কা ব্যক্ত করেন। তাদের বক্তব্য- আগুন তো পুরো পুঁজিটাই কেড়ে নিয়েছে। এখন নিশ্চিহ্ন হয়ে যাওয়া দোকানটা ফিরে পাবো তো?
কাঠের ফ্রেমে নির্মিত বঙ্গবাজারের প্রায় পুরোটাই পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। আবার মার্কেট হলেও সেখানে নিজের দোকান পাওয়া নিয়ে অনিশ্চয়তা পড়েছেন দোকান মালিকরা। তারা চান, সরকার যেন ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের নির্দিষ্ট দোকানটা বুঝিয়ে দেয়ার পাশাপাশি পুঁজি দিয়ে পুনর্বাসনের সুযোগ করে দেয়।
দোকান মালিকরা বলছেন, আগুনে কোনো মার্কেট পুড়ে গেলে দোকানের পজিশন অনেক সময় বেহাত হয়ে যায়। আর এই বঙ্গবাজারে প্রায় পুরো কাঠামোই ধ্বংস হয়ে গেছে। নতুন করে মার্কেট হলে সেখানে নিজের দোকান না পাওয়ার শঙ্কা তৈরি হয়েছে। তাই তারা চাইছেন, সরকার ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের তালিকা করে পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করে দিক।
ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের পুনর্বাসিত করার দাবি জানিয়েছেন দোকান মালিক সমিতির নেতারাও। মঙ্গলবার দুপুরে অগ্নি দুর্ঘটনাস্থল পরিদর্শনে আসেন বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির সভাপতি হেলাল উদ্দিন।
তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘বঙ্গবাজারের কাঠের মার্কেটের দোকান মালিকরা আবার এই জায়গায় দোকান পাবে কিনা তা নিয়ে শঙ্কায় আছে।
‘আমাদের জানামতে, শুধু বঙ্গবাজার কাঠের মার্কেটেই আড়াই হাজারের মতো দোকান রয়েছে। এখানে ছোট ছোট ব্যবসায়ীরা দোকান করেন। সামনে ঈদ। সবাই ঈদকেন্দ্রিক বেচাকেনার জন্য নিজেদের সামর্থ্যের পুরোটা দিয়ে দোকানে পণ্য তুলেছিলেন। এমন সময়ে এই অগ্নিকাণ্ড বড় ধরনের ক্ষতি ডেকে এনেছে। আগুন তাদেরকে পথে বসিয়েছে।’
ব্যবসায়ী এই নেতা বলেন, ‘এই ব্যবসায়ীদের পুঁজি বলতে দোকানের মালামালটুকুই। মালামাল পুড়ে যাওয়ায় তাদের পুঁজি বলতে আর কিছু অবশিষ্ট নেই। এখন সর্বস্বান্ত এই ব্যবসায়ীদের জন্য আমরা সরকারের কাছে দাবি জানাচ্ছি, রমজানের ঈদকেন্দ্রিক ব্যবসায় ক্ষতি পুষিয়ে দিতে প্রাথমিকভাবে ৭০০ কোটি টাকা থোক বরাদ্দ দেয়া হোক।’
বঙ্গবাজার আদর্শ মার্কেটের দোকান মালিক নাজমুল বলেন, ‘আমার নিজের দোকান একটা। আরও দুইটা আছে ভাড়া। সব পুড়ে গেছে। মার্কেটটাই শেষ। এখন দোকান কেমনে পাবো জানি না। সরকার আমাদের দিকে না তাকাইলে যাওয়ার আর জায়গা থাকবে না।’
মহানগর কমপ্লেক্সের একজন ব্যবসায়ী বলেন, ‘আমরা কয়েক বছর ধরেই বড় একটা আগুনের আশঙ্কা করছিলাম। শঙ্কাটা ছিল- কেউ আগুন লাগিয়ে দিতে পারে। ঈদের সময় বা যখন মার্কেট বন্ধ থাকে তখন আগুন লাগাইয়া দিতে পারে। এ কারণে ঈদের সময় যখন বন্ধ থাকে তখন মালামাল দোকান থেকে সরিয়ে রাখার চেষ্টা করি। এই মার্কেট সরকারিভাবে নিয়ে যাওয়ার জন্য অনেক চেষ্টাই চলছে। আর এটা সবাই জানে।’
তিনি বলেন, ‘এই জায়গাটা রেলওয়ের। লিজ নিয়ে মার্কেট করা হয়েছে। লিজ তো সরকার যেকোনো সময়ই বাতিল করতে পারে। আমরা এই মার্কেটে ব্যবসা করতে চাই। সরকার যেন এই বিষয়টি দেখে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের তালিকা করে পুনর্বাসনের নির্দেশ দিয়েছেন বলে জানিয়েছেন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ডা. মো. এনামুর রহমান।
মঙ্গলবার বিকেলে বঙ্গবাজারের অগ্নিকাণ্ড নিয়ে বৈঠক করেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস এবং দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ডা. মো. এনামুর রহমান। বৈঠক শেষে প্রতিমন্ত্রী সাংবাদিকদের এ কথা বলেন।
এনামুর রহমান বলেন, ‘অগ্নি-নির্বাপণ, উদ্ধার কার্যক্রমসহ সার্বিক বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী নিজে সমন্বয় করেছেন। সারাক্ষণ আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ রেখেছেন। প্রধানমন্ত্রী নির্দেশনা দিয়েছেন, তদন্ত করে ক্ষয়ক্ষতি নির্ধারণের পর ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের পুনর্বাসনে কাজ করা হবে।