ভোরের আলো ফোটার পর থেকে বেলা গড়িয়ে ৩টা। তখনও বঙ্গবাজারের আগুন নেভাতে ফায়ার সার্ভিসহ অন্যান্য বাহিনীর সদস্যরা আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছিলেন। আর মার্কেটের পাশে রাস্তা ও ফুটপাতে চলছিল আগুনে সর্বস্ব হারিয়ে পথে বসা স্বল্প পুঁজির ব্যবসায়ী ও স্বজনদের আর্তনাদ।
সকাল থেকে মালামাল বাঁচানোর আপ্রাণ যুদ্ধ শেষে ক্লান্ত ব্যবসায়ীরা রাস্তার ওপর বসেই শূন্য দৃষ্টিতে নিজেদের অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ দেখছেন। এরই মাঝে পথে বসে থাকা এক মায়ের আহাজারি কানে বাজে- ‘আল্লাহ, তুমি সব শেষ কইরা লাইছো; সব ছাই কইরা লাইছো। আমার পুতেরে মাফ কইরা দাও আল্লাহ, আমার পুতেরে বাঁচায় রাখো গো আল্লাহ!’
কাছে যেতেই দেখা গেল এক মা তার ব্যবসায়ী ছেলেকে জড়িয়ে ধরে বিলাপ করছেন। কাঁদছেন আগুনে সর্বস্ব হারানো ব্যবসায়ী ছেলেও। পাশেই ওই ব্যবসায়ীর স্ত্রী, ভাইয়ের বউ, খালাতো বোন, সন্তান। সবারই চোখ অশ্রুসজল। সবাই আগুনের খবর পেয়ে ছুটে এসেছেন বঙ্গবাজারে। কিন্তু ততক্ষণে সব শেষ। সব পুড়ে ছাই হয়ে গেছে।
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবার বাসিন্দা এই ব্যবসায়ীর নাম পারভেজ ভূঁইয়া। নব্বইয়ের দশক থেকে এই বঙ্গবাজারে তাদের পৈতৃক ব্যবসা। শাড়ির দোকান ছিলো তাদের। বাবার পর হাল ধরেছেন তিনি।
বাবার সঙ্গে থেকে পারভেজ একটি দোকান থেকে আজ ছয়টি দোকান কিনেছেন এই বঙ্গবাজারে। দুটি দোকানে নিজেদের শাড়ির ব্যবসা। বাকি চারটি দোকান ভাড়া দিয়ে রেখেছেন।
এই ব্যবসায়ী জানালেন, তার দুই দোকানে প্রায় দুই কোটি টাকার মালামাল ছিল। সেসবের সামান্য অংশও আগুন থেকে বাঁচানো যায়নি। বললেন, ‘আমার আর আমার বাবার জীবনের সব উপার্জন দিয়ে এই দোকানগুলো গড়া। চোখের পলকে সব ছাই হয়ে গেল। আমার মা পাগল হয়ে যাচ্ছে। আমি কিভাবে আবার উঠে দাঁড়াব?
‘সরকারের কাছে আমাদের অনুরোধ- আমাদের দোকানগুলো যেন দখল না হয়, আমরা যেন আমাদের দোকানগুলো বুঝে পাই।’
পারভেজ ভূঁইয়া বলেন, ‘১৯৯৫ সালেও বঙ্গবাজারে এমন আগুন লেগেছিল। তখন মেয়র হানিফ সাহেব আমাদের পাশে ছিলেন। সরকার আমাদের টিন দিয়ে মার্কেট করে দিয়েছিল। আমরা আস্তে আস্তে আবার ঘুরে দাঁড়িয়েছি। এবারও যদি সরকার পাশে থাকলে আমরা আবার ঘুরে দাঁড়াতে পারব। নইলে আমাদের কোনো অস্তিত্ব থাকবে না।’