বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

‘আব্বা তিনবার স্ট্রোক করছে, আজকে আবার করতে পারে’

  •    
  • ৪ এপ্রিল, ২০২৩ ১৫:৩৫

মাহিন নামের ব্যবসায়ী বলেন,“২০০৪ সালে আমি এই মার্কেটে চাকরি শুরু করি। এরপর ২০১১ সালে এসে আমি বঙ্গবাজারের মহানগর কমপ্লেক্সের নিচ তলায় ‘বিকল্প প্যান্ট ফেয়ার’ নামে একটি কাপড়ের দোকান দিই। এরপর আস্তে আস্তে আমার দোকানের পাশে আরও তিনটি দোকান নিই। এখন এই চারটি দোকান মিলে আমার একটা দোকান। এখন সব শেষ। আমার আব্বা তিনবার স্ট্রোক করছে। আজকে আবারও করতে পারে।”

‘ভাই সরকাররে কইয়েন আমাদের দিকে যেন একটু তাকায়। আমার সব শেষ। এখন ভিক্ষা করা ছাড়া কোনো উপায় নাই।’

নিউজবাংলার প্রতিবেদককে পেয়ে কাঁদতে কাঁদতে কথাগুলো বলছিলেন বঙ্গবাজারে ধরা আগুনে পুড়ে যাওয়া মহানগর কমপ্লেক্সের কাপড় ব্যবসায়ী নুর আলম মাহিন।

মহানগর কমপ্লেক্সের সামনে নির্মাণাধীন এলাকার মধ্যে পুড়ে যাওয়া দোকান থেকে বাঁচানো দুই বস্তা কাপড়ের ওপর বসে কান্নায় ভেঙে পড়েন এ ব্যবসায়ী।

তিনি বলেন, ‘আমার বাসা এই বঙ্গবাজারের পেছনেই। বাসা থেকে আমার মার্কেট দেখা যায়। সকালে আমার এক বন্ধুর ফোন পেয়ে উঠে দেখি আমার মার্কেটে আগুন জ্বলতেছে। আমি দৌড়ে আমার দোকানের মাল বের করতে গিয়ে দেখি, দোকানের চাবি বাসায় ফেলে আসছি।

‘তখনও আমার দোকানে আগুন লাগে নাই। আমি আবার বাসার দিকে দৌড় দিই। এরপর বাসা থেকে চাবি এনে দোকানে এসে দেখি আমার দোকানে আগুন জ্বলতেছে। তখন দোকান থেকে কোনো রকম ২ বস্তা মাল বের করে এখানে নিয়ে আসি। কিছু মাল মানুষ লুট করে নিয়ে গেছে। আর বাকি সব পুড়ে গেছে ভাই।’

মাহিন বলেন, ‘এই ঈদে আমি আমার শ্বশুরবাড়ি আর বন্ধুদের কাছ থেকে প্রায় ১০ লাখ টাকা ধার করছি। ঈদে ব্যবসা করে শোধ করে দেব তাদের। এখন তো আমার সব শেষ। এই দুই বস্তায় ১ লাখ টাকার মতো মাল ছাড়া আমার আর কিছুই নাই।’

তিনি আরও বলেন, “আমার দোকানে ৩০ লাখ টাকার মাল ছিল। আমি খুব কষ্ট করে এই দোকান দাড় করছিলাম। ছোটবেলা থেকে খুব কষ্ট করে মানুষ হয়েছি। ২০০৪ সালে আমি এই মার্কেটে চাকরি শুরু করি। এরপর ২০১১ সালে এসে আমি বঙ্গবাজারের মহানগর কমপ্লেক্সের নিচ তলায় ‘বিকল্প প্যান্ট ফেয়ার’ নামে একটি কাপড়ের দোকান দিই।

“এরপর আস্তে আস্তে আমার দোকানের পাশে আরও তিনটি দোকান নিই। এখন এই চারটি দোকান মিলে আমার একটা দোকান। এখন সব শেষ। আমার আব্বা তিনবার স্ট্রোক করছে। আজকে আবারও করতে পারে।”

মহিনের পাশেই কয়েকটি বস্তার ওপর বসে ছিলেন জাভেদ ওমর নামে আরেক কাপড় ব্যবসায়ী। মহানগর মার্কেটে ‘রহমানিয়া ফ্যাশন’ নামে শিশুদের কাপড়ের দোকান ছিল তার।

তিনি বলেন, ‘আমার দোকানে ৭৫ লাখ টাকার মাল ছিল। তার মধ্যে মাত্র এই ৪ বস্তা মাল বাঁচাইতে পারছি। বাদবাকি সব আগুনে গেছে। গতকাল আমি আমার মোটরসাইকেল বেচে ক্যাশ ৪ লাখ টাকাও দোকানে রাখছিলাম। তাও পুড়ে গেছে। আমার সব শেষ হয়ে গেছে। আমি এখন পথের ফকির। এখন ঈদের আগে এই ৪ বস্তা কাপড় আমার ভ্যানে বিক্রি করা লাগবে। না হলে পোলাপাইন নিয়ে চলতে পারব না।

‘আমার আরও ১০ লাখ টাকা ঋণ আছে। সেটা এখন কীভাবে শোধ করব, সেটা মাথায় আসতেছে না।’

দুজনের পাশেই দাঁড়িয়েছিলেন ইমরান হোসেন নামের আরেক কাপড় ব্যবসায়ী। তিনি বলেন, “আমি এক টাকার মালও বের করতে পারিনি ভাই। আমার সব শেষ।

“মহানগর মার্কেটে ‘ইমরান এন্টারপ্রাইজ’ নামে আমার একটা বাচ্চাদের কাপড়ের দোকান ছিল আর অ্যানেক্স মার্কেটের ৭ তলায় একটা গোডাউন ছিল। সব শেষ। আমার ৩০ লাখ টাকার মাল ছিল। গ্রামে চলে যাওয়া ছাড়া আমার আর কোনো পথ খোলা নেই।”

সংখ্যায় বঙ্গবাজারের আগুন

আগুন ধরার তারিখ: ৪ এপ্রিল, ২০২৩

আগুন লাগার সময়: ফায়ার সার্ভিস খবর পায় সকাল ৬টা ১০ মিনিটে

প্রথম ইউনিট পৌঁছার সময়: সকাল ৬টা ১২ মিনিট

আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ করা ইউনিটের সংখ্যা: ৪৮

আগুন নিয়ন্ত্রণের সময়: দুপুর ১২টা ৩৬ মিনিট

ক্ষতিগ্রস্ত দোকানের সংখ্যা: বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির দাবি অনুযায়ী, প্রায় ৫ হাজার

আনুমানিক ক্ষয়ক্ষতি: বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির দাবি অনুযায়ী, আনুমানিক ২ হাজার কোটি টাকা। এর বিপরীতে ৭০০ কোটি টাকা থোক বরাদ্দ চেয়েছে সমিতি।

আগুনে আহত ফায়ার সার্ভিস সদস্য: আটজন, যাদের মধ্যে দুজন আশঙ্কাজনক অবস্থায় চিকিৎসাধীন

আগুন নেভাতে দেরি হওয়ার কারণ: ফায়ার সার্ভিসের ভাষ্য অনুযায়ী, তিনটি। এগুলো হলো পানির অভাব, বাতাস ও উৎসুক জনতা।

এ বিভাগের আরো খবর