বঙ্গবাজারে আগুনের ঘটনায় নিঃস্ব হয়েছেন হাজারো ব্যবসায়ী। এখানে যাদের দোকান ছিল তারা তো সব হারিয়েছেনই, একইসঙ্গে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন পণ্য উৎপাদনকারীরাও।
বঙ্গবাজারের দোকানিদের মূলত বাকিতে মালামাল সরবরাহ করেন উৎপাদকরা। দোকানিরা মালামাল বিক্রি করে ধাপে ধাপে সেসব টাকা পরিশোধ করেন। আর সে কারণে ভয়াবহ আগুনে বঙ্গবাজারের দোকানিদের পাশাপাশি নিঃস্ব হয়েছেন গার্মেন্ট পণ্য তৈরির সঙ্গে জড়িত অসংখ্য ব্যবসায়ী।
তাদেরই একজন রুবেল হোসেন। মঙ্গলবার বেলা ২টার দিকে ভষ্মীভূত বঙ্গবাজারের পাশে ফুটপাতে বসে খোলা আকাশের নিচে হতাশা নিয়ে তাকিয়ে ছিলেন এই ব্যবসায়ী। কাছে গিয়ে কথা বলে জানা গেল, তিনি যেসব দোকানে পোশাক সরবরাহ করতেন সেসব দোকানের উদ্ধার করা মালামাল পাহারা দিচ্ছেন তিনি।
দোকানিদের মালামাল পাহারা দিতে আপনি ছুটে এসেছেন কেন- এমন প্রশ্নে রুবেল বললেন, ‘এসব আমারই মালামাল। ৭টা দোকানে আমি রেগুলার মাল দেই। আমার লেডিস ওয়ান পিস আইটেম তৈরির ব্যবসা আছে। পুরান ঢাকার বেচারাম দেউড়িতে আমার কারখানা। আমি মাল বানিয়ে বঙ্গবাজারে ৭টা দোকানে সাপ্লাই দেই। আমার ৫০ লাখ টাকার মাল দেয়া ছিল। সব শেষ। পাশেই গোডাউনে কিছু মাল ছিল, তা বাইরে আনা হইছে। আমি সেগুলা পাহারা দিচ্ছি।’
ব্যবসা সম্পর্কে জানাতে গিয়ে রুবেল বলেন, ‘আমাদের লাইনে নগদের চেয়ে বাকিতে ব্যবসা চলে বেশি। ধরেন আমি কোনো দোকানে এক লাখ টাকার অর্ডার নিলাম। মাল ডেলিভারির সময় হয়তো ১০ হাজার দিলো। বাকিটা সপ্তাহে সপ্তাহে মাল বিক্রি করেএখানকার পাইকার আমারে দেয়। আমার এভাবে ৫০ লাখ টাকার মাল দেয়া ছিলো এইখানে। এখন দোকানদারের তো সবই গেলো; তার সাথে আমারও গেলো।’
আগুন থেকে উদ্ধার করতে পারা যৎসামান্য পণ্য পাহারা দিচ্ছেন আরেক উৎপাদক ব্যবসায়ী। ছবি: নিউজবাংলাএই ক্ষতি পোষাবেন কিভাবে জানতে চাইলে রুবেল বলেন, ‘আল্লাহ জানেন। দেখি কী হয়। পরিস্থিতি একটু ভালো হোক। তারপর দোকান মালিকদের সাথে বসে আলোচনা করে যা করা যায় দেখা যাবে। দোকানদারেরও তো সব গেছে। আমি তো আর তারে চাপ দিতে পারি না। সে যতটুকু আস্তে ধীরে দিতে পারবে সেটাই মানতে হবে।’
আগুন থেকে উদ্ধার করতে পারা যৎসামান্য পণ্য চুরি ঠেকাতে পাহারা দিচ্ছেন ব্যবসায়ী-উৎপাদকরা। ছবি: নিউজবাংলারুবেলের মতোই খোলা আকাশের নিচে দোকানিদের মালামাল নিয়ে বসে থাকা পণ্য উৎপাদক গফুর মিয়া বলেন, ‘আমি গতকাল রাতেও ৭০ লাখ টাকার ঈদের চালান দিয়ে গেছি। গতকাল একবার মনে হয়েছিলো মাল দুই দিন পর দেই। কিন্তু দোকানদারের চাপে রাতেই ডেলিভারি দিলাম। আর সকালেই সব শেষ। এখন কিভাবে কী করব, কত টাকা তুলতে পারব- কিছুই জানি না। খবর পেয়ে বাসায় আর থাকতে পারিনি। এসে দোকানদারদের সাহায্য করছি। তারা তো শেষ! তাদের সাথে আমরাও। এখন তাদের পাশে না থাকলে কখন থাকব?’