যাত্রী সংকটের কারণে ঝালকাঠি-ঢাকা নৌপথে লঞ্চ চলাচল বন্ধ রেখেছে লঞ্চ কর্তৃপক্ষ।
৫০ জনেরও কম যাত্রী হওয়ায় গত ২৭ মার্চ বিকেলে রাজধানী ঢাকার উদ্দেশে ঝালকাঠি ঘাট ছেড়ে যায়নি সুন্দরবন-১২ যাত্রীবাহী লঞ্চ। ওইদিনের পর থেকে ফারহান-৭ নামক আরেকটি লঞ্চ এ রুটে চলাচল করলেও একই সমস্যার কারণে সেটিও বন্ধ করে দেয় মালিকপক্ষ।
ঝালকাঠি ঘাটে ছয়দিন বেঁধে রাখার পর সুন্দরবন-১২ নামের লঞ্চটি ৪৫ জন যাত্রী নিয়ে ঢাকায় যায়। এরপর ঢাকা থেকে আর ঝালকাঠির উদ্দেশে ছেড়ে আসেনি।
হঠাৎ লঞ্চ চলাচল বন্ধ হয়ে যাওয়ায় বিপাকে পড়েছে লঞ্চ টার্মিনাল সংলগ্ন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী এবং ঘাটে দিনমজুরের কাজ করা ব্যক্তিরা।
মঙ্গলবার সন্ধ্যায় ঝালকাঠি লঞ্চঘাটে গিয়ে দেখা যায় ভিন্ন দৃশ্য। যেই সময় ঢাকাগামী যাত্রীদের ভিড়ে মুখরিত থাকত পুরো ঘাট এলাকা, এখন তা জনমানবশূন্য। ঈদ সামনে রেখে ঘাট সংলগ্ন দোকানিরা জানালেন তাদের কষ্টের কথা। লঞ্চ বন্ধ হবার পর থেকে তাদের দোকানপাট বন্ধ হয়ে গেছে।
ঘাট এলাকার চা দোকানি আবু হোসেন, রফিকুল ইসলাম এবং সুলতান হাওলাদার জানান, লঞ্চ বন্ধ হওয়ার পর তাদের দোকানে মালামাল বিক্রি হয় না। সারাদিনে যে টাকা বিক্রি হয় তা দিয়ে কিস্তির (ক্ষুদ্র লোন) টাকা ওঠে না। ঈদ সামনে রেখে সবাই হিমশিম খাচ্ছে।
ঘাটের শ্রমিকদেরও একই আকুতি। তারা জানান, লঞ্চ বন্ধ থাকলে তাদের পণ্য পরিবহনের কাজও বন্ধ থাকে। দৈনিক মজুরির শ্রমিকরা পরিবারের জন্য ইফতার সামগ্রীও যোগাতে পারছেন না।
এমভি ফারহান-৭ লঞ্চের ঝালকাঠি ঘাট ম্যানেজার মো. সবুজ হোসেন বলেন, ‘ঝালকাঠি থেকে ঢাকা যেতে আমাদের লাস্ট ট্রিপে ৬০ জন ডেক যাত্রী হয়েছে। আর কেবিন ভাড়া হয়েছে ২ থেকে ৩টি। এতে বর্তমানে প্রতিবার ঢাকা আসা যাওয়ায় লঞ্চ মালিকের মোটা অংকের লোকসান গুনতে হয়। তাই এ রুটে লঞ্চ বন্ধ রাখা হয়ছে।’
কবে নাগাদ লঞ্চ চালু হতে পারে সেই প্রশ্নে সবুজ নিউজবাংলাকে বলেন, ‘ঈদের আগে যাত্রীর চাপ বাড়লে লঞ্চ চলবে, তবে ঈদের পর আবারও রুটটি বন্ধ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।’
সুন্দরবন নেভিগেশন কোম্পানির সত্ত্বাধিকারী মো. সাইদুর রহমান রিন্টু বলেন, ‘পদ্মা সেতু চালুর পর দক্ষিণাঞ্চলের নৌপথে যাত্রী হ্রাস পাওয়ায় লঞ্চের ব্যবসায় কিছুটা মন্দা যাচ্ছিল। তবে তাতে লোকসানে পড়তে হয়নি। কিন্তু দুই দফায় জ্বালানি তেলের দাম বাড়ায় পুরো ব্যবসা ঝুঁকিতে পড়ে।
‘ঝালকাঠি-ঢাকা রুটে গত সপ্তাহে পৌনে ২ লাখ টাকা লোকসান হয়েছে। এখন বাধ্য হয়ে লঞ্চ বন্ধ রেখেছি। এরই মধ্যে শ্রমিকরা বেতন বৃদ্ধির দাবি তুলেছে। এ যেনো মরার ওপর খাঁড়ার ঘা। শেষ পর্যন্ত লঞ্চ ব্যবসাটা স্থায়ীভাবে বন্ধ হওয়ার উপক্রম হচ্ছে।’