বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

কলা গাছের সুতা থেকে শাড়ি, পোশাক শিল্পে নতুন দিগন্ত

  •    
  • ২ এপ্রিল, ২০২৩ ১৪:৩৮

বান্দরবানের জেলা প্রশাসক ইয়াছমিন পারভীন তিবরীজি বলেন, ‘এখন আমরা আরও বড় তাঁত বসিয়ে এটাকে চলমান রাখব। আরেকটি কাজ হলো সুতা তৈরি ও কাপড় বানানোটা মূল ধারায় বস্ত্র শিল্পের সঙ্গে সম্পৃক্ত করে দেয়া। বর্তমানে স্থানীয় পদ্ধতিতে সুতাকে নরম করার চেষ্টা করা হচ্ছে। মন্ত্রণালয় ও বুটেক্সের সঙ্গে যোগাযোগ করে এ সুতাকে কীভাবে আরও মানসম্মত করা যায় তা নিয়ে কাজ করছি।’

কলাগাছের তন্তু থেকে সুতা তৈরি করে সেই সুতায় শাড়ি বানিয়ে সারা দেশে প্রশংসায় ভাসছেন রাধাবতী দেবী। বান্দরবান জেলা প্রশাসকের অনুরোধে মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার মনিপুরী অধ্যুষিত মাঝেরগাঁও গ্রামের এই নারী মাত্র আট দিনে কলাগাছের তন্তু থেকে সুতা বের করে তা দিয়ে শাড়ি বানিয়েছেন।

যা ইতোমধ্যে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আলোচনার জন্ম দিয়েছে। বাংলাদেশে এর আগে কখনও কলাগাছের সুতা দিয়ে শাড়ির তৈরির তথ্য পাওয়া যায়নি। এই শাড়ি বানাতে পেরে গর্বিত রাধাবতী দেবী।

তিনি বলেন, ‘আট দিনে এই শাড়িটি তৈরি করেছি। প্রথম যখন এই চ্যালেঞ্জ নিই তখন আমার প্রতিবেশী বা সহকর্মী বলেছিল কঠিন কাজ সফল না হওয়ার সম্ভাবনা বেশি কিন্তু আমার আত্মবিশ্বাস ছিল যে পারব। তবুও প্রথমে কিছু দ্বিধা ছিল । এখন সবাই এত প্রশংসা করছেন যে, খুব ভাল লাগছে। আমিই প্রথম কলা গাছের সুতা দিয়ে শাড়ি তৈরি করেছি।

‘সুতা লেগেছে পৌনে এক কেজি। কলা গাছ দিয়ে এমন একটি শাড়ি তৈরিতে খরচ পড়বে সাড়ে তিন থেকে চার হাজার টাকার মতো। তবে প্রযুক্তির সাহায্যে বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদন করতে পারলে খরচ আরও কমে আসবে। এই শাড়িটি তৈরিতে এক কেজি সুতা লেগেছে। একটি কলা গাছ থেকে ২০০ গ্রাম সুতা হয়। সেই হিসাবে ৫টি কলা গাছ থেকে ১ কেজি সুতা হয়।’

স্থানীয় সূত্র ও বান্দরবান জেলা প্রশাসকের অফিসের সূত্রে জানা যায়, চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ থেকে রাধাবতী দেবীকে বান্দরবান নিয়ে যাওয়া হয়। তিনি সেখানে স্থানীয় নারীদের ১৫ দিনের প্রশিক্ষণ দেন। মনিপুরীরা যে তাঁতের শাড়ি বুনন করেন, ওখানেও সেই তাঁত বসানো হয়। পরে মার্চ মাসে রাধাবতী সেই তাঁতে কলা গাছের সুতা দিয়ে শাড়ি বুনন করেন। এর আগে কখনও বাংলাদেশে কলাগাছের সুতা হতে শাড়ি তৈরি হয়েছে কি না জানা যায়নি।

কলা গাছের সুতা থেকে শাড়ি বানিয়েছেন রাধাবতী দেবী। ছবি: সংগৃহীত

সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, কলা গাছের সুতা থেকে শাড়ি তৈরি হওয়ায় তাঁত শিল্পে নতুন দিগন্তের উন্মোচন হয়েছে। এখন এটিকে বাণিজ্যিক করতে গবেষণা ও পৃষ্ঠপোষকতা প্রয়োজন। এই সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে পারলে অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির পাশাপাশি পিছিয়ে পড়া বান্দরবান জেলায় কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে। আবার জেগে ওঠবে জেলার তাঁত শিল্প।

জেলা প্রশাসক ইয়াছমিন পারভীন তিবরীজি বলেন, ‘যতটুকু জেনেছি এটাই দেশের প্রথম কলা গাছের বাকলের সুতা থেকে তৈরি হওয়া শাড়ি । ২০২১ সালে এ জেলায় যোগদানের পর এ অঞ্চলের পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর ভাগ্য উন্নয়নের লক্ষ্যে এই ফেলে দেয়া কলা গাছের বাকল থেকে সুতা তৈরির পাইলট প্রকল্প হাতে নিই। এই প্রকল্পে সহায়ক হিসেবে ছিল বেসরকারি সংস্থা ওয়ার্ল্ড ভিশন, গ্রাউস ও উদ্দীপন।’

২০২২ সালে স্থানীয় মহিলাদের প্রশিক্ষণ দিয়ে কলা গাছের সুতা দিয়ে হস্তশিল্প পণ্য বানানোর উদ্যোগ নেয়া হয়। ঢাকা থেকে প্রশিক্ষক এনে কলা গাছের সুতা দিয়ে হস্তশিল্পজাত পণ্য তৈরির ওপর মহিলাদের আরও ভাল করে প্রশিক্ষণ দেয়া হয়। এতে ভালোই ফল হয়। এখন উৎপাদিত শতরঞ্জি, ব্যাগ, জুতা, শোপিস, টেবিল ম্যাট, প্লান্টার বক্স, কলমদানি, ফাইল ফোল্ডার হস্তশিল্পজাত পণ্য নীলাচল পর্যটন কেন্দ্রের ব্র্যান্ডিং বান্দরবান শপসহ স্থানীয় উদ্যোক্তাদের দোকান ও বাজারে বিক্রি হচ্ছে।

পরে জেলা প্রশাসক এ কাজকে জেলার অন্যান্য উপজেলায় ছড়িয়ে দেন। ২০২২ সালের শেষেরদিকে জেলা প্রশাসক মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তাও বান্দরবান বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষিকাকে সঙ্গে নিয়ে রাধাবতী দেবীর মাধ্যমে কাপড় তৈরির উদ্যোগ নেন। সুতা দিয়ে বিভিন্ন হস্তশিল্প তৈরির সফলতাই শাড়ি তৈরির চিন্তার জন্ম দেয় জেলা প্রশাসকের মনে।

বান্দরবান বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদের প্রভাষক ও স্থানীয় পিস মহিলা কল্যাণ সমিতির সভানেত্রী সান সান উ বলেন, ‘বান্দরবানের তাঁত শিল্প এখন মৃত। কলা গাছের তন্তু দিয়ে সুতা তৈরির মাধ্যমে শাড়ি বানানো সম্ভব হওয়ায় এখানে নতুন ধরনের শিল্প বিপ্লবের সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। এখন এর প্রসার ঘটাতে পারলে জেলার কর্মক্ষেত্র সম্প্রসারণ হবে। ইতোমধ্যে ওয়ার্ল্ড ভিশন এই শিল্পের সঙ্গে সম্পৃক্ত হওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করেছে।

বান্দরবান জেলা মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরের উপপরিচালক আতিয়া চৌধুরী বলেন, ‘একটি কলা গাছ থেকে ২০০ গ্রাম সুতা হয়। সেই হিসাবে ৫টি কলা গাছ থেকে ১ কেজি সুতা হয়। কলা গাছের সুতা দিয়ে শাড়ি বানাতে পারলে আমরা অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হব। এখন আমাদের টেক্সটাইল কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় বা অন্যান্য গবেষণা প্রতিষ্ঠান থেকে এই সুতা নিয়ে গবেষণা করা প্রয়োজন। তাহলে আমরা জানতে পারবো কীভাবে সুতাটাকে আরও মোলায়েম করা যাবে।’

বান্দরবানের জেলা প্রশাসক ইয়াছমিন পারভীন তিবরীজি বলেন, ‘এখন আমরা আরও বড় তাঁত বসিয়ে এটাকে চলমান রাখব। আরেকটি কাজ হলো সুতা তৈরি ও কাপড় বানানোটা মূল ধারায় বস্ত্র শিল্পের সঙ্গে সম্পৃক্ত করে দেয়া। বর্তমানে স্থানীয় পদ্ধতিতে সুতাকে নরম করার চেষ্টা করা হচ্ছে। মন্ত্রণালয় ও বুটেক্সের সঙ্গে যোগাযোগ করে এ সুতাকে কীভাবে আরও মানসম্মত করা যায় তা নিয়ে কাজ করছি।’

এ বিভাগের আরো খবর