প্রথম আলো সম্পাদক মতিউর রহমানের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা হওয়ার ঘটনায় সাংবাদিকদের অধিকার নিয়ে কাজ করা সংগঠন রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডারস (আরএসএফ) বিবৃতিতে যে মন্তব্য করেছে তার প্রতিবাদ জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক ড. সেলিম মাহমুদ।
শুক্রবার গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে এই প্রতিবাদ জানান তিনি।
সেলিম মাহমুদ বলেন, বাংলাদেশ সরকার সাংবাদিকদের ভয় দেখানোর জন্য প্রথম আলো সম্পাদক মতিউর রহমানের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি, বরং দেশের সংবিধান, আইন, রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা, সাংবাদিকতার নীতিমালা ও জনশৃঙ্খলার স্বার্থে এই মামলা হয়েছে।
আরএসএফ-এর বিবৃতির প্রসঙ্গ তুলে তিনি বলেন, সেই বিদেশি সাংবাদিকরা হয়তো বাংলাদেশের অতীত ইতিহাস জানেন না। বাংলাদেশের যে সম্পাদককে ভয় দেখানোর কথা বলা হচ্ছে, সেই সম্পাদক এক সময় রাষ্ট্রকেই ভয় দেখাতে তৎপর ছিলেন। বাংলাদেশকে রাজনৈতিক নেতৃত্ব তথা রাজনীতি শূন্য করতে চেয়েছিলেন। নিজের নামে তার পত্রিকায় ফলাও করে লিখেছিলেন, ‘দুই নেত্রীকে সরে যেতে হবে’।
আওয়ামী লীগের এই নেতা বলেন, পৃথিবীর কোনো গণতান্ত্রিক দেশে কোনো পত্রিকার সম্পাদক এ ধরনের ভূমিকা পালন করেছে বলে আমাদের জানা নেই। তিনি শুধু রাজনীতিবিদদের বিরুদ্ধে কিংবা রাজনীতির বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করেননি, দেশের সর্বোচ্চ আইন ও জনগণের পবিত্র ইচ্ছার প্রতিফলন সংবিধানের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করেছেন। তিনি সাংবিধানিক শাসনের পথ রুদ্ধ করে অসাংবিধনিক শক্তিকে ক্ষমতায় রাখতে ষড়যন্ত্র করেছিলেন।
তিনি বলেন, তাদের সেই ষড়যন্ত্র যদি সফল হতো, তাহলে আজ বাংলাদেশের ভাগ্যে কি ঘটতো সেটা আমরা খুব সুনির্দিষ্ট ভাবে বলতে পারি না। তবে এতটুকু ধারণা করা যায়, সংবিধানবহির্ভূত শক্তির হাতে রাষ্ট্রকে তুলে দিতে মতিউর রহমানদের সেই ষড়যন্ত্র সফল হলে বাংলাদেশ পাকিস্তানের মতো একটি ভঙ্গুর রাষ্ট্রে পরিণত হতো।
সেলিম মাহমুদ রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডারসের কাছে প্রশ্ন রাখেন, গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থায় অসংবিধানিক শক্তিকে টিকিয়ে রাখতে একজন সম্পাদকের এই ধরনের কার্যক্রম কি স্বাধীন সাংবাদিকতার নীতির মধ্যে পড়ে?
তিনি বলেন, একটা শিশুর হাতে ১০ টাকা ঘুষ দিয়ে তার নামে একটা সংবাদ পরিবেশন করা, তাও আবার স্বাধীনতা দিবসে স্বাধীনতাকে অবজ্ঞা ও কটাক্ষ করে! এটি কি অপরাধ নয়? সাংবাদিক হলেই কি সবাই আইনের ঊর্ধ্বে ?
সেলিম মাহমুদ বলেন, যেসব বিদেশি সাংবাদিক বিবৃতি দিয়েছেন, তাদের কাছে আমাদের প্রশ্ন, তাদের নিজেদের দেশে কোন একটা শিশুকে যদি এভাবে এক্সপ্লয়েট করা হতো, তারা কি করতো?
আওয়ামী লীগের তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক বলেন, রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডার সংবাদপত্রের স্বাধীনতা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। আমি তাদের বলব, আইনের চোখে সবার সম অধিকার ও সব ক্ষেত্রে আইনের সমভাবে প্রযোজ্যতার বিধান অনুসরণ করেই প্রথম আলো সম্পাদকের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে।
সেলিম মাহমুদ বলেন, ২৬ শে মার্চ আমাদের স্বাধীনতা দিবসে প্রথম আলোতে একটা শিশুকে বরাত দিয়ে লেখা হয়, ‘পেটে ভাত না জুটলে স্বাধীনতা দিয়ে কি করমু।’ ৩০ লাখ শহীদের রক্ত দিয়ে অর্জিত বাংলাদেশের স্বাধীনতা নিয়ে স্বাধীনতা দিবসে এরকম অবজ্ঞা ও কটাক্ষপূর্ণ মন্তব্য সমগ্র জাতিকে ব্যথিত করেছে।