বরিশাল জেলা শ্রমিক লীগ সভাপতি শাহজাহান হাওলাদারের মালিকানাধীন ভবন ভাঙতে অভিযান চালিয়েছে বরিশাল সিটি করপোরেশন। নকশাবহির্ভূতভাবে ভবনটি নির্মানের অভিযোগে বুধবার এই অভিযান চালানো হয়। ভবন মালিকের দাবি, বিনা নোটিশে সিটি করপোরেশন বুলডোজার নিয়ে ভবনটি ভাঙতে এসেছে।
এদিকে ঘটনাস্থলের ছবি তুলতে সাংবাদিকদের বাধা দেয়ার অভিযোগ উঠেছে রোড ইন্সপেক্টরের সহযোগীদের বিরুদ্ধে। সাধারণ মানুষের সঙ্গে রুঢ় আচরণেরও অভিযোগ করেছেন অনেকে।
বুধবার বিকেল পৌনে ৩টার দিকে নগরীর নতুন বাজারের টেম্পু স্ট্যান্ড এলাকায় ভবনটি ভাঙতে আসে সিটি করপোরেশন। তবে ভবন মালিককে কিছু সময় দিয়ে বুলডোজার তার ভবনের সামনেই রেখে দেন করপোরেশনের রোড ইন্সপেক্টররা।
রোড ইন্সপেক্টর রাকিবুল ইসলাম রাকিব বলেন, ‘ভবনটির প্ল্যান রয়েছে ছয়তলার। প্ল্যানে গ্যারেজও রয়েছে। কিন্তু ভবনটি অনিয়মের মাধ্যমে সাততলা করা হয়েছে এবং গ্যারেজ রাখা হয়নি। এ কারণে ভবন মালিককে একাধিক বার নোটিশ দিলেও কোনো জবাব মেলেনি।
‘সবশেষ বুধবার এই বাড়িতে এসে নোটিশ দিয়ে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের প্রক্রিয়া নেয়া হয়। ভবন মালিক আমাদের কাছে সময় চেয়েছেন। বাকিটা ঊর্ধ্বতন কতৃপক্ষ বলতে পারবেন।’
সিটি করপোরেশন সূত্রে জানা গেছে, ১৯ নম্বর ওয়ার্ডের নতুন বাজারের বাসিন্দা এবং বরিশাল পৌরসভার টানা ১৮ বছর কমিশনার পদে দায়িত্বে থাকা শাহজাহান হাওলাদারকে ভবনটির ব্যাপারে গত ৬, ২০ ও ২৭ মার্চ চূড়ান্ত নোটিশ দেয়া হয়। তিনি কোনো জবাব দেননি করপোরেশনকে। তাছাড়া নোটিশপ্রাপ্তির ২৪ ঘণ্টার মধ্যে অনুমোদিত প্ল্যান করপোরেশনে দাখিলের নির্দেশ দেয়া হলেও তিনি তা করেননি।
ভবনটির মালিক বরিশাল জেলা শ্রমিক লীগের সভাপতি ও বরিশাল জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডের সাবেক ডেপুটি কমান্ডার শাহজাহান হাওলাদার। তিনি বলেন, ‘সিটি করপোরেশন থেকে আমরা আগে কোনো ধরনের নোটিশ পাইনি। এখানে বুলডোজার নিয়ে আসার ৩০ মিনিট আগে প্ল্যান বহির্ভূতভাবে ভবন তৈরির কথা জানিয়ে আমাদেরকে নোটিশ দেয়া হয়েছে। সিটি করপোরেশন উদ্দেশ্যমূলকভাবে এটা করেছে।’
এদিকে বুধবার বিকেলে শ্রমিক লীগ নেতার ভবন ভাঙার প্রস্তুতির আগেই নতুন বাজার টেম্পু স্ট্যান্ড থেকে গুপ্ত কর্নার মোড় পর্যন্ত যান চলাচল বন্ধ করে দেয় সিটি করপোরেশন। ব্যস্ততম সড়কটি বন্ধ করে দেয়ায় ভোগান্তিতে পড়া অনেকে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানান।
ভবন ভাঙার কার্যক্রম না করে বুলডোজার শাহজাহান হাওলাদারের বাড়ির সামনে রেখে দিয়ে বিকেল ৪টার দিকে ঘটনাস্থল ত্যাগ করেন সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। পরে বুলডোজারটিও সরিয়ে নেয়া হয়।
মহানগর আওয়ামী লীগের বিশ্বস্ত একটি সূত্রের দাবি, বরিশাল নগরী থেকে বিভিন্ন রুটে থ্রি হুইলার মাহিন্দ্রা চলাচলে চাঁদাবাজি নিয়ে শ্রমিক লীগ নেতা শাহজাহান হাওলাদারের সঙ্গে সিটি মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহর দ্বন্দ্ব হয়। মেয়র নিজ ফেসবুক পেজে লাইভে এসেও শাহজাহান হাওলাদারের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির অভিযোগ এনে কথা বলেন থ্রি হুইলার মাহিন্দ্রা শ্রমিকদের সঙ্গে নিজ বাসায় আলোচনার সময়। ওই বিষয়কে কেন্দ্র করেই শাহজাহান হাওলাদারের মালিকানাধীন ভবন ভাঙার প্রক্রিয়া নেয় সিটি করপোরেশন।