সমকামীদের চ্যাট অ্যাপ গ্রিন্ডরে (Grindr) আলিফ নামে একজনের সঙ্গে পরিচয় হয় ইন্টেরিয়র ডিজাইনার, স্থপতি ইমতিয়াজ মোহাম্মদ ভূঁইয়ার। আলিফের কথামতো গত ৭ মার্চ রাজধানীর কলাবাগানের ক্রিসেন্ট রোডে আরাফাত নামে একজনের বাসায় যান ইমতিয়াজ। সেখানেই ফাঁদে ফেলে ইমতিয়াজের কাছে বড় অঙ্কের টাকা দাবি করে সমকামীদের একটি চক্র।
টাকা দিতে অস্বীকার করায় বেধড়ক পিটিয়ে হত্যা করা হয় ইমতিয়াজকে। এরপর প্রাইভেটকারে করে তার মরদেহ মুন্সীগঞ্জের সিরাজদিখানে ফেলে দেন চক্রের সদস্যরা।
ইমতিয়াজ হত্যায় জড়িত তিনজনকে রোববার সিরাজগঞ্জ, কলাবাগান ও নারায়ণগঞ্জ থেকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। তাদের জিজ্ঞাসাবাদে উল্লিখিত তথ্য বেরিয়ে আসে।
গ্রেপ্তার তিনজন হলেন মিল্লাত হোসেন মুন্না ওরফে মুন, এহসান ওরফে মেঘ ও আনোয়ার হোসেন।
ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) প্রধান মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ সোমবার জানান, হত্যায় জড়িত আলিফ ও আরাফাত ওরফে ফয়সাল নামে দুজন পলাতক। তাদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।
ডিবি জানায়, আসামিরা সমকামী ও ট্রান্সজেন্ডার। তারা গ্রিন্ডর নামের গে চ্যাটিং অ্যাপের মাধ্যমে সমকামী বিভিন্ন লোকজনকে রুম ডেটের কথা বলে টার্গেট করে বাসায় ডেকে নিয়ে বিভিন্ন কায়দায় ব্ল্যাকমেইল করেন। পরে টাকা-পয়সাসহ গুরুত্বপূর্ণ জিনিসপত্র ছিনিয়ে নিয়ে যান তারা। ভিকটিম ইমতিয়াজ মোহাম্মদ ভূঁইয়ার সঙ্গে আসামি আলিফের সম্পর্ক তৈরি হয় চ্যাটিং অ্যাপে।
ডিএমপি ডিবিপ্রধান জানান, ৭ মার্চ দুপুরে আলিফকে কল করেন ইমতিয়াজ। আলিফ তখন কলাবাগানে আরাফাতের বাসায় যেতে বলেন ইমতিয়াজকে।
গোয়েন্দা কর্মকর্তারা জানান, বাসায় ইমতিয়াজের সঙ্গে আলিফের অন্তরঙ্গ মুহূর্তে পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী আলিফের সহযোগী আরাফাত, মেঘ, মুন্না ও আনোয়ার ওই রুমে প্রবেশ করেন। বিষয়টিকে কেন্দ্র করে তারা ইমতিয়াজকে মারধর করে তার কাছে বড় অঙ্কের অর্থ দাবি করেন। ইমতিয়াজ টাকা দিতে অস্বীকার করলে আসামিরা তার বুকে, পিঠে আঘাতসহ প্রচণ্ড মারধর করেন। তাতে ইমতিয়াজের মৃত্যু হয়।
পুলিশ জানায়, স্থপতির মৃত্যু নিশ্চিত হলে আসামিরা পরিকল্পনা করে বাসা থেকে তার মরদেহ নামিয়ে মেঘের প্রাইভেটকারে উঠিয়ে মুন্সীগঞ্জ জেলার সিরাজদিখান থানা এলাকার কামারকান্দা গ্রামের নবাবগঞ্জ হাইওয়ে রোডের পাশে ঝোঁপে ফেলে দেন। পরে গাড়িতে করে আলিফকে বাসাবো, আনোয়ারকে গ্রিন রোড নামিয়ে দিয়ে আরাফাত, মেঘ, মুন্না প্রথমে নারায়ণগঞ্জ যান। পরে চাঁদপুর, মুন্সীগঞ্জ ও কুমিল্লা হয়ে ব্রাক্ষণবাড়িয়ার আখাউড়া সীমান্ত দিয়ে অবৈধভাবে ভারতে পালিয়ে যান তারা।
পুলিশ জানায়, আসামিদের ভারতে অবস্থান শনাক্ত করলে ভারতীয় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তাদের ধরতে অভিযান পরিচালনা করে। তখন আসামিরা ভারত থেকে পালিয়ে ফের অবৈধভাবে একই পথে বাংলাদেশে ফিরে আসেন। দেশে ফেরার পর ডিবি মিল্লাত হোসেন মুন্না, আনোয়ার হোসেন ও এহসান ওরফে মেঘকে গ্রেপ্তার করে।