বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের ই-মেইল সার্ভার হ্যাক হলেও তাতে তেমন কোনো ক্ষতি হয়নি। তাছাড়া ওই ঘটনায় হ্যাকাররা কোনো ধরনের টাকাপয়সাও দাবি করেনি। এমন দাবি সম্পর্কিত কোনো তথ্য বিমান কর্তৃপক্ষের কাছে নেই।
বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী মাহবুব আলী রোববার এমনটা দাবি করেছেন।
রাজধানীর হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে ‘মুজিবের বাংলাদেশ’ শীর্ষক স্মারকগ্রন্থের মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠান শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন বিমান প্রতিমন্ত্রী।
এ সময় বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) শফিউল আজিম বলেন, ‘ই-মেইল সার্ভার হ্যাক হলেও এ নিয়ে টাকা চাওয়ার বিষয়ে আমাদের কাছে কোনো তথ্য নেই।’
রাষ্ট্রীয় শতভাগ মালিকানাধীন সংস্থা বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের ই-মেইল সার্ভার হ্যাক হয় ১৭ মার্চ। সেদিন বেলা সোয়া ২টার দিকে সার্ভার হাতিয়ে নিয়ে হ্যাকাররা বিমানকে প্রথম নিজেদের দাবির কথা জানায়।
বিমান সূত্রে জানা যায়, ২১ মার্চ হ্যাকাররা জানায় যে তাদের কাছে বিমানের ১০০ গিগাবাইটের বেশি ব্যক্তিগত ও গোপনীয় তথ্য রয়েছে। এ ছাড়া বিমানের অভ্যন্তরীণ নেটওয়ার্ক থেকে অনেক ডেটা তারা ডাউনলোড করে রেখেছে। বিমান তাদের দাবি মেনে না নিলে তারা নিজেদের ব্লগে এগুলো প্রকাশ করে দেবে।
২২ মার্চ বিকেলে হ্যাকাররা বিমানকে আরেকটি বার্তা পাঠায়। ওই বার্তায় বলা হয়, ‘গণমাধ্যমে আপনারা বলছেন যে কোনো তথ্য ফাঁস হয়নি। কিন্তু আপনারা ভুল।’
ফ্লাইট, বিমানের যাত্রী ও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পাসপোর্টের তথ্যসহ আরও বেশকিছু তথ্য হাতিয়ে নেয়া হয়েছে বলে হ্যাকাররা বিমানকে জানায়।
জানা যায়, ১০ দিনের সময় বেঁধে দিয়ে হ্যাকাররা বিমানের কাছে ৫ মিলিয়ন ডলার দাবি করে। অন্যথায় সব তথ্য ফাঁস করে দেয়া হবে বলে হুমকি দেয় তারা।
এ ঘটনার ছয় দিন পর ২৩ মার্চ এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বিমান তাদের ই-মেইল সার্ভার র্যানসমওয়্যার দ্বারা আক্রান্তের কথা জানায়।
হ্যাকাররা বিমানের কাছে ৫ মিলিয়ন ডলার দাবি করেছে- এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বিমান প্রতিমন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেন, ‘হ্যাকাররা টাকা দাবি করেছে বলে যে কথাটা উঠেছে সেটি সঠিক নয়। এ ধরনের কোনো তথ্য আমাদের কাছে নেই। এ বিষয়ে বিমান আনুষ্ঠানিক বিজ্ঞপ্তি দিয়েছে। টাকা দাবি করার এ খবর ভিত্তিহীন। এ ধরনের কোনো প্রমাণ আমাদের কাছে নেই।’
প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘হ্যাকাররা ফায়ারওয়ালের ভেতরে প্রবেশ করতে পারেনি। এ কারণে তারা বেশি ক্ষতি করতে পারেনি। তারা তেমন কোনো তথ্য নিতে পারেনি। সাইবার অ্যাটাক হলে যা কিছু করতে হয় তা বিমানের পক্ষ থেকে করা হয়েছে। জিডি করা হয়েছে, সব ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।’
৯ দিনেও কেন ই-মেইল সার্ভার হ্যাকারদের কাছ থেকে উদ্ধার করা যায়নি- এমন প্রশ্নে এমডি শফিউল আজিম বলেন, ‘বিমানের পরিচালনায় বা অপারেশনাল কাজে কোনো ব্যাঘাত ঘটেনি, যথারীতি কাজ করছে। কোনো বিষয়ে অসুবিধা হয়নি। আজও কাজ চলছে। আমরা আশা করি আগামীকাল সোমবার তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের সঙ্গে সম্মিলিতভাবে এ ঘটনার একটি পরিপূর্ণ চিত্র দিতে পারব।’
বিমান সাইবার হামলার শিকার হতে পারে- এমন আগাম সতর্ক বার্তা দেয়া হয়েছিল কিনা জানতে চাইলে শফিউল আজিম বলেন, ‘এ ধরনের কোনো সতর্ক বার্তা দেয়া হয়নি। যৌথভাবে বিশেষজ্ঞ দল কাজ করছে। এই দলের কাজ শেষ হলে জানা যাবে। তবে বিমানের বড় ধরনের কোনো ক্ষতি হয়নি।’
বিমানের নিরাপত্তা ব্যবস্থায় গাফিলতির কারণে হ্যাকাররা এ ঘটনা ঘটানোর সুযোগ পেয়েছে কিনা জানতে চাইলে বিমানের এমডি বলেন, ‘আমাদের কোনো ঘাটতি থেকে থাকলে সেগুলো আমরা সামনে তুলে নিয়ে আসব। ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনা কিভাবে ঠেকানো যায় তা নিয়েও বিমান কাজ করবে।’