বসন্তের হাওয়া বইছে চারদিকে। গাছে গাছে গজিয়েছে নতুন পাতা, ফুটেছে ফুল। ঠিক ৫৩ বছর আগে এমন দিনে বাংলাদেশ নামক এক রাষ্ট্রেরও জন্ম হয়েছিল। ৯ মাসের লড়াই শেষে অভ্যুদয় ঘটেছিল দেশটির। আর সেই লড়াইয়ের আনুষ্ঠানিক শুরুটা ২৬ মার্চ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঘোষণার মধ্য দিয়ে।
প্রতিবছর এ দিনটিকেই স্বাধীনতা দিবস হিসেবে পালন করে পুরো জাতি। মুক্তিযুদ্ধের শহীদ ও বীর মুক্তিযোদ্ধাদের স্মরণে সাভারের জাতীয় স্মৃতিসৌধে জড়ো হয়ে শ্রদ্ধা জানায় সর্বস্তরের মানুষ। অন্যান্য বছরের মতো এবারও এ দিনটিকে ঘিরে প্রস্তুত করা হয়েছে সৌধ প্রাঙ্গণ ও এর আশপাশের এলাকা। পরিচ্ছন্ন হয়ে সেজেছে সৌধ।
২৫ মার্চ দিনে জাতীয় স্মৃতিসৌধে গিয়ে দেখা যায় পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা ও সৌন্দর্য বর্ধনের কাজ এরইমধ্যে শেষ হয়েছে। সৌধস্তম্ভের চূড়া থেকে শুরু করে শহীদ বেদি, পায়ে চলার সড়ক সবখানে ধুয়ে মুছে চকচকে করা হয়েছে। প্রয়োজন মতো করা হয়েছে রঙ। সৌধের মূল ফটক থেকে বেদি পর্যন্ত হাটা পথে লাল ইটের মধ্যে সাদা রংয়ের ছোঁয়া ছড়াচ্ছে শুভ্রতা।
চত্বরজুড়ে শোভা পাচ্ছে লাল, নীল, বেগুনি, হলুদ, সাদাসহ বিভিন্ন রঙের, বর্ণের ফুলের গাছ। সৌন্দর্য বর্ধন করা হয়েছে এসব গাছেরও। নির্দেশক হয়ে দাঁড়িয়ে আছে একেকটি ঝাউগাছ। সৌধ বেদির সামনের অংশে গাছ দিয়ে বানানো হয়েছে জাতীয় পতাকা। লেকের পানিতে নতুন করে রোপন করা হয়েছে লাল শাপলা। পুরো জাতীয় স্মৃতিসৌধের ভেতর ও বাইরে আলোকসজ্জার ব্যবস্থাও করা হয়েছে।
গণপূর্ত বিভাগের সাভার জাতীয় স্মৃতিসৌধের উপ-সহকারী প্রকৌশলী মিজানুর রহমান জানান, মহান স্বাধীনতা দিবস ঘিরে বিগত এক মাস ধরেই আমরা স্মৃতিসৌধ এলাকায় কাজ করছি। এজন্য গত ১২ মার্চ থেকে সৌধ এলাকায় সর্বসাধারণের প্রবেশাধিকার সংরক্ষিত করা হয়েছে। ইতোমধ্যেই ধোয়ামোছা ও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার কাজ শেষে সৌধ এলাকাকে ফুলে ফুলে সাজিয়ে তোলা হয়েছে। রাতের বেলার জন্য লাল-সবুজ আলোকসজ্জার ব্যবস্থা করা হয়েছে। স্বাধীনতা দিবস উদযাপনে সাভার জাতীয় স্মৃতিসৌধ পুরোপুরি প্রস্তুত আছে।
তিনি আরও জানান, ২৬ মার্চ প্রথম প্রহরে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের শ্রদ্ধা জানাবেন। এ ছাড়া স্পীকার, মন্ত্রী পরিষদের সদস্যবৃন্দ, কূটনৈতিক, রাজনৈতিক ও সরকারি কর্মকর্তাবৃন্দ ফুল দিয়ে জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের শ্রদ্ধা জানাবেন। এরপর সর্বসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করে দেয়া হবে সৌধ এলাকা।
এদিকে স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠান ঘিরে সৌধ ও এর আশপাশের এলাকায় নিরাপত্তা জোরদার করেছে ঢাকা জেলা পুলিশ। বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে সিসিটিভির পাশাপাশি বসানো হয়েছে অস্থায়ী ওয়াচ টাওয়ার।
ঢাকা জেলা পুলিশ সুপার মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান জানান, এই দিবসকে ঘিরে স্মৃতিসৌধের আয়োজন ঘিরে আমরা এখানকার নিরাপত্তা ব্যবস্থাকে ঢেলে সাজিয়েছি। এখানে চার স্তুরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। নিরাপত্তার জন্য শুধু স্মৃতিসৌধ নয় সাভার ও আশুলিয়া এলাকা আমরা সিসিটিভির আওতায় আমরা রেখেছি। এর বাইরে বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা কাজ করছে। এ ছাড়া স্মৃতিসৌধের আশপাশের এলাকার বাসিন্দাদের নতুন করে কাউকে বাড়িতে আশ্রয় দিতে নিষেধ করা হয়েছে। আত্মীয়স্বজন আসার ক্ষেত্রেও নিরুৎসাহিত করা হয়েছে।