রমজান মাসে সারা দেশে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম বাড়লেও ব্যতিক্রমী উদ্যোগ নিয়েছেন কিশোরগঞ্জের করিমগঞ্জের খামারি এরশাদ উদ্দীন।
তার খামার থেকে সংগৃহীত দুধের পুরোটা তিনি মাত্র ১০ টাকা লিটার বিক্রির ঘোষণা দিয়েছেন। পুরো রমজান মাস এ কাজ চালিয়ে যাবেন। এর আগে বিগত দুই বছর যাবৎ এভাবে দুধ বিক্রি করে আসছেন তিনি। যে কেউ তার খামার থেকে নাম মাত্র ১০ টাকা লিটার দরে সর্বোচ্চ এক লিটার দুধ কিনতে পারবেন।
বাজারভেদে এখন প্রতি লিটার দুধ ৯০ থেকে ১০০ টাকা দরে বিক্রি হয়। তাই মানুষের সেবার তার এই ব্যতিক্রমী উদ্যোগে প্রশংসায় ভাসছেন তিনি।
এরশাদ উদ্দীনের বাড়ি উপজেলার নিয়ামতপুর ইউনিয়নে। বাংলাদেশ মিলস্কেল রি-প্রসেস অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি তিনি। এ ছাড়া নিয়ামতপুর ইউনিয়ন পরিষদের রৌহা এলাকায় তিনি গড়ে তুলেছেন জেসি এগ্রো ফার্ম।
শুক্রবার বেলা ১১টার দিকে সেখানে গিয়ে দেখা গেছে তার খামারে বিভিন্ন এলাকার শতাধিক হতদরিদ্র নারী ও পুরুষ লাইন ধরে দাঁড়িয়ে আছেন। কেউ কেউ ১০ টাকায়, আবার কেউ বিনামূল্যে দুধ সংগ্রহ করছেন সেখান থেকে।
এরশাদ উদ্দিন জানান, খামারে দুগ্ধ ও মোটাতাজাকরণের ৪০০টির মতো গরু রয়েছে। বর্তমানে ৬৫টি গাভী রয়েছে। তার মধ্যে ২৫টি গাভী নিয়মিত দুধ দিচ্ছে সেখানে। প্রতিদিন ৭০ থেকে ৮০ লিটার দুধ পাওয়া যায়।
রৌহা এলাকার কৃষক আবদুল হেলিম বলেন, ‘এরশাদ উদ্দিন অনেক ভালো মানুষ। গত বছরও তিনি ১০ টাকা লিটার দুধ দিয়েছেন, এবারও দিচ্ছেন।’
নিয়ামতপুর ইউনিয়নের দেওপুর গ্রামের বাসিন্দা করফুলা বেগম বলেন, ‘বাজারে সব কিছুরই মূল্য অনেক। আমরা গরীব মানুষ। রমজানে ১০০ টাকা লিটার দরে দুধ কিনে খাওয়া সম্ভব না। এরশাদ ভাই ১০ টাকা করে দুধ দিতেছে। এই দুধ দিয়েই আমরা সেহরি খেয়ে রোজা রাখব। মন থাইক্যে দোয়া করি, আল্লাহ এরশাদরে আরও বড় করুক।’
রৌহা গ্রামের হারেস উদ্দিন বলেন, ‘এরশাদ সাহেব প্রতি লিটার দুধ ১০ টাকায় দিচ্ছেন। আমরা অনেক খুশি। বাজার থেকে কেনা দুধে অনেক সময় পানি মেশানো থাকে। আবার দামও নাখালের বাইরে। এখান থেকে নামমাত্র মূল্যে ফ্রেস দুধ পাচ্ছি।’
মনসন্তোষ এলাকার বাসিন্দা অটোরিকশাচালক সাদির মিয়া বলেন, ‘এরশাদ সাহেব অনেক কষ্ট করে বড় হইছেন, তাই গরিবের কষ্ট বোঝেন। প্রতি বছরই রোজার মাস ছাড়াও বিভিন্ন সময়ে মানুষকে সহযোগিতা করেন তিনি। এলাকায় স্কুল-কলেজেও সহযোগিতা করেন তিনি।’
এরশাদ উদ্দিন বলেন, ‘রমজান মাসে অনেক জিনিসপত্রের দাম বেড়েছে। অনেক কিছুই গরিব ও অসহায় মানুষের নাগালের বাইরে। চিন্তা করলাম, ব্যবসা তো সারা বছরই করি, এক মাস না হয় লাভ না করলাম। তাই আমার অবস্থান থেকে এই উদ্যোগ নিয়েছি।’
তিনি বলেন, ‘সারা বছর জেলার বিভিন্ন হোটেলে ৬০ টাকা লিটার দুধ বিক্রি করি, তবে পুরো রমজানে প্রতি লিটার ১০ টাকা দরে প্রায় দুই টন দুধ বিক্রি করব এলাকাবাসীর কাছে।
‘শুক্রবার সকাল থেকে শুরু করেছি ঈদের আগের দিন পর্যন্ত চালু থাকবে। এলাকার সবাই যেন পায় সে জন্য প্রাথমিকভাবে একটি পরিবারকে একবারই দিচ্ছি। এলাকার কোনো পরিবার যেন বাদ না পড়ে সে জন্য এই পদ্ধতি চালু করেছি।’