রাষ্ট্রের মালিক জনগণ, প্রশাসকরা হলেন কর্মচারী। তাদের কেন মালিকরা স্যার ডাকবেন- এই প্রশ্ন তুলেছেন রংপুরের জেলা প্রশাসক চিত্রলেখা নাজনীনের বিরুদ্ধে ‘স্যার’ ডাকতে বাধ্য করার অভিযোগ তুলে প্রতিবাদ কর্মসূচিতে বসা শিক্ষক উমর ফারুক।
জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে হাতে লেখা প্ল্যাকার্ড নিয়ে বুধবার রাতে বসেছিলেন বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাউন্টিং অ্যান্ড ইনফরমেশন সিস্টেমস বিভাগের এই সহযোগী অধ্যাপক। সঙ্গে তার কন্যাশিশুও ছিল। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এ ঘটনা ছড়িয়ে পড়লে ব্যাপক সমালোচনা হয়। এক পর্যায়ে রাতেই অবশ্য জেলা প্রশাসক দুঃখ প্রকাশ করলে বিষয়টি সমাধান হয়ে যায়।
সার্বিক বিষয় নিয়ে শিক্ষক উমর ফারুক নিউজবাংলাকে বৃহস্পতিবার দুপুরে বলেন, ‘শুধু আমার জন্য আমি বসিনি। মনে হয়েছে সাধারণ মানুষ, বাকিরা প্রতিবাদ করলে এটার সমাধান হবে।’
তিনি বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুকে অনেকেই মুজিব ভাই বলে ডাকতেন। রাষ্ট্র কাঠামোতে এক ধরনের আধিপত্যবাদ বিরাজ করছে। রাষ্ট্রকে যারা সেবা দেন, তারা ভুলে যান যে তিনি রাষ্ট্রের সেবক, আর মালিক জনগণ। জেলা প্রশাসক তো জনগণের সেবক। রাষ্ট্রের মালিক জনগণ। মালিক কেন সেবককে স্যার বলে ডাকবেন?’
অনেক প্রশাসক আছেন যারা সত্যিকার অর্থেই জনগণের সেবক, এমন মন্তব্য করে এই শিক্ষক বলেন, ‘অনেক প্রশাসক আছেন যারা জনগণের সঙ্গে মায়ের মতো, ভাইয়ের মতো আচরণ করেন। সংশোধনটা হতে হবে এখানেই।’
উমর ফারুক বলেন, ‘আর যেন কোথাও এমন ঘটনা না ঘটে। আমি এটাই চেয়েছি। এ জন্যই বসেছিলাম। আমি এটি ইস্যু করার জন্য সেখানে বসিনি। আমি একটা সামধান চেয়েছিলাম।’
রংপুরের প্রথম শহীদ শংকু সমজদারের নামে প্লে গ্রুপ থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত একটি স্কুল পরিচালনা করে আসছেন শিক্ষক উমর ফারুক। বুধবার সেই স্কুলের বিষয়ে জেলা প্রশাসকের কাছে যান তিনি।
উমর ফারুক বলেন, ‘আমি সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে জেলা প্রশাকের দপ্তরে তার সঙ্গে দেখা করতে যাই একটি স্কুলের বিষয়ে। এক পর্যায়ে কথা বলে চলে আসার সময় তাকে আপা বলে সম্বোধন করে ধন্যবাদ বলে চলে আসছিলাম।’
তিনি বলেন, ‘এ সময় জেলা প্রশাসক সম্বোধন নিয়ে আপত্তি তোলেন। তিনি বলেন, একজন পুরুষ এই পদে থাকলে তিনি স্যার না সম্বোধন করে পারতেন কি না। জেলা প্রশাসক বলেন, এই চেয়ারকে সম্মান করে স্যার বলে ডাকা উচিত। আমি বলেছি, একজন শিক্ষককে আপনি স্যার বলেতে বলছেন? স্যার কেন বলব।’
সেখান থেকে বেরিয়ে এসে শিক্ষক উমর ফারুক জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের নিচে প্রধান ফটকের সামনে অবস্থান নিয়ে অবস্থান কর্মসূচি শুরু করেন। তার হাতে থাকা প্ল্যাকার্ডে লেখা ছিল ‘রংপুরের জেলা প্রশাসক স্যার ডাকতে বাধ্য করায় অবস্থান কর্মসূচি।’
বিষয়টি জানাজানি হলে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শিক্ষার্থীরা এসে কর্মসূচিতে অংশ নেন। একপর্যায়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের আরও কয়েকজন শিক্ষকও সেখানে উপস্থিত হন। ফেসবুকেও ঘটনা ছড়িয়ে পড়ে।
পরে রাত পৌনে ৯টার দিকে সেখানে বিক্ষুব্ধ শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে জেলা প্রশাসক চিত্রলেখা নাজনীন পরিস্থিতির জন্য দুঃখ প্রকাশ করেন। বলেন, বিষয়টি নিয়ে ভুল বোঝাবুঝি হয়েছে।
সরকারি কর্মকর্তাদের ‘স্যার’ বলে ডাকতে হবে, এমন কোনো নিয়ম নেই বলে ২০২১ সালের ৭ সেপ্টেম্বর জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন এক অনুষ্ঠানে জানিয়েছিলেন।
ওইদিন সচিবালয়ে কর্মরত সাংবাদিকদের আয়োজিত মিট দ্য প্রেস অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, ‘সরকারি কর্মকর্তাদের স্যার বা ম্যাডাম বলে সম্বোধন করতে হবে, এমন কোনো নীতি নেই।’