সম্প্রতি সভা করে কুমিল্লা নগরীর যানজট নিরসনে কান্দিরপাড় থেকে দেশওয়ালী পট্টি পর্যন্ত সড়কে রিকশা, ইজিবাই ও ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা চলাচল বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। এতে করে ফিডার ও সংযোগ সড়কে চাপ বেড়েছে। আগের তুলনায় যানজট বেড়েছে। বেড়েছে ভোগান্তি। বিশেষ করে অফিস সময়ে যানজটে থমকে যায় পুরো কুমিল্লা নগরী।
যানজটের ভোগান্তিতে শিকার সাধারণ মানুষজন সরাসরি এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেইসবুকে ক্ষোভ উগড়ে দিচ্ছেন।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, অফিস খোলার দিন সকাল থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত কুমিল্লা নগরীর বাদুড়তলা, ঝাউতলা, টমসমব্রীজ, রাজগঞ্জ, পুলিশ লাইন থেকে ফৌজদারি সড়কে তীব্র যানজট হয়। রানীরবাজার ও ঠাকুরপাড়ার ফিডার রোডগুলোতে ভয়াবহ যানজটের রেকর্ড সৃষ্টি হয়। এ নিয়ে নগরবাসীর মনে ক্ষোভের সঞ্চার হয়েছে। গত কয়েক দিন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে এ নিয়ে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে।
নগরীর মর্ডান, ফয়জুন্নেছা ও ওয়াই ডব্লিউ সিএ স্কুল শুরুর আগে বাদুড়তলা এলাকায় তীব্র যানজট সৃষ্টি হয়। বিকেলে ছুটির সময়ও একই অবস্থার সৃষ্টি হয়।
স্থানীয়রা জানান, চকবাজার থেকে সরাসরি নজরুল এভিনিউ, রামঘাট, বাদুরতলা-ঝাউতলা এলাকায় যেতে না পারার কারণে রাজগঞ্জ এলাকার যানজটের ওপর অতিরিক্ত চাপ পড়েছে। মোঘলটুলী তিন রাস্তার মোড়ের যানজট এখন নিত্যদিনের ঘটনা। কুমিল্লা হাই স্কুল শুরু এবং ছুটির সময়ে এখানকার যানজট এখন নতুন দৃশ্য। ছাতিপট্টি-রাজগঞ্জ এই এলাকায় যানজট থাকায় বিকল্প হিসেবে গাংচর-থানা রোড ব্যবহার করতে বাধ্য হচ্ছে নাগরিকরা। সরু ওই সড়কে থানা পুকুর পাড় চার রাস্তার মোড়ে একবার জটলা বেঁধে গেলে তা সারতে সময় লাগছে ঘণ্টারও বেশি সময়।
বুধবার সকালে সকাল সাড়ে ৯টায় বাদুড়তলায় যানজটে আটকে পড়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন গৃহিণী আসমা আক্তার। তিনি বলেন, ‘এমন কোনো রাস্তা নাই, যে রাস্তায় যানজট নাই। মেয়েটাকে ফয়জুন্নেছা স্কুলে দিতে গিয়ে একবার রানীর বাজার দিয়ে আসি আরেকবার বাদুরতলা দিয়া আসি। কি যে যন্ত্রণা। আগে শুনতাম ঢাকায় এমন যানজট। স্কুল কলেজ অফিসে যেতে এক ঘণ্টা আগে বের হতে হয়। এখন কুমিল্লার অবস্থাও একই রকম।’
বেসরকারি কোম্পানির বিক্রয় প্রতিনিধি আশিক রহমান বলেন, ‘টমসমব্রিজ দিয়ে এসে দেখি পুরো রাস্তায় জ্যাম। ঠাকুরপাড়া দিয়ে বাইক নিয়ে এসে দেখি অলিগলিতে জ্যাম। ভাইরে কি যে যন্ত্রণা। কিছু কইতে পারি না সইতে পারি না। শুধু বসদের ধমক সহ্য করতে হয়।’
সম্প্রতি কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশনের সামনের সড়কে যানজট সৃষ্টি হচ্ছে। ফৌজদারী এলাকার ব্যবসায়ী সিয়াম হোসেন বলেন, স্বাধীনতার পর থেকে এই সড়কে কখনো যানজট হতে দেখি নাই। এই কয়েক দিন এই সড়কটাতে যানজট হয়। এটা সামনের দিনগুলোর জন্য ভয়াবহ অবস্থার সংকেত দিচ্ছে।
নাম না প্রকাশ করার শর্তে কুমিল্লা জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে চাকরি করা এক কর্মচারী জানান, তিনি সদর দক্ষিণ উপজেলা থেকে আসেন। গত কয়েকদিন ধরে তিনি প্রথমে টমসমব্রীজে যানজটে আটকা পড়েন।
তিনি বলেন, ‘বিকল্প সড়ক হিসেবে ঠাকুরপাড়া দিয়ে আসতে চাইলে সেখানেও যানজটে আটকা পড়ি। তারপর রানীরবাজারে একবার যানজটে পড়ি। তারপর বাদুড়তলায় পরি। এভাবে একটা শহরে চার থেকে পাঁচবার যানজটে আটকে যাই। শুধু অফিসটা শুরুর আগে এত যানজটের শিকার হই। এই কষ্টের কথা কাউরে বলতে পারি না, কারণ সরকারি চাকরি করি।’
পরশু রমজান শুরু হবে। প্রতি বছর রমজানে কুমিল্লা নগরীতে ভ্রাম্যমান পেশাজীবির সংখ্যা বাড়ে। এতে করে সামনের দিনগুলোতে আরও তীব্র যানজট সৃষ্টি হওয়ার আশংকা দেখা দিয়েছে।
নগরীর যানজটের ভোগান্তি বিষয়ে জানতে চাইলে কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ড. শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘কুমিল্লা নগরীর যানজট নিরসন নিয়ে যে সভা হয়েছে তার অনেক সিদ্ধান্তই এখনও রেজুলেশন ভুক্ত হয় নি এবং সংশ্লিষ্টদের জানানো হয় নি। যানজট নিরসনে যারা ভূমিকা রাখতে পারে তাদের সবাইকে ওই সভার সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে এগিয়ে আসতে হবে। এটি একটি লম্বা প্রক্রিয়া, বাস্তবায়ন করতে সময় লাগবে। এরই মধ্যে বিভিন্ন এলাকায় যে সমস্যা হচ্ছে তা নিয়ে কেউ কেউ ফেসবুকে লেখালেখি করছেন।’
কান্দিরপাড়ের আশেপাশের সড়কগুলোতে যানজটের নতুন ভোগান্তির বিষয়ে জানতে চাইলে জেলা পুলিশের ট্রাফিক ইন্সপেক্টর জিয়াউল হক টিপু বলেন, ‘নতুন যেসব এলাকায় যানজট তৈরি হচ্ছে সেসব এলাকার যানজট নিরসনে আমাদের বাড়তি জনবল লাগছে। আমরা পুলিশ লাইন্স থেকে নতুন সদস্য নিচ্ছি। আগামীতে রোজা এবং ঈদের ছুটি শুরু হতে যাচ্ছে তখন কিছুটা চাপ কমবে।’
তবে কান্দিরপাড়ে থ্রিহুইলার চলাচল সিদ্ধান্তে অটল থাকবে কি না এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমরা ঈদ পর্যন্ত পর্যবেক্ষণ করছি। আশা করছি মানুষ এই সিদ্ধান্তের সুফল পাবে।’