আশা ছিল বড় চাকরি করে বাবা-মায়ের স্বপ্ন পূরণ করবেন। বাড়িতে বড় দালান বানিয়ে পরিবারকে সুখে রাখবেন। কিন্তু সেই আশা অধরাই থেকে গেল মাসুদ খানের।
পদ্মা সেতুর এক্সপ্রেসওয়ের শিবচরের কুতুবপুর এলাকার রোববার সকাল ৮টার দিকে দুর্ঘটনায় নিহত হন মাসুদ।
গোপালগঞ্জের আদমপুর গ্রামের আমজেদ আলী খানের মাস্টার্স পাস করা ছেলে ২৭ বছর বয়সী মাসুদ খান। তিনি ঢাকা কলেজ থেকে দর্শন বিভাগের মাস্টার্স পাস করেন।
নিহত মাসুদের পরিবারের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, গত তিন দিন আগে ঢাকা থেকে মা-বাবা ও পরিবারের সঙ্গে দেখা করতে বাড়িতে আসেন মাসুদ। রোববার খুব ভোরে ইমাদ পরিবহনে ঢাকা যাচ্ছিলেন। কিন্তু ঢাকা আর যাওয়া হলো না। বাস খাদে পড়ে সমাধি হলো একজন স্বপ্নবাজ তরুণের।
মরদেহ নিতে এসে মাসুদের বড় ভাই শফিক খান বারবার ভাইয়ের জন্য মূর্ছা যাচ্ছিলেন। কোনোভাবেই ভাইয়ের এমন করুণ মৃত্যু তিনি মেনে নিতে পারছেন না। কান্নায় ভেঙ্গে পড়ছেন শফিক খান।
মাসুদ খানের ভাই শফিক খান বলেন, ‘কথা ছিল বড় চাকরি করে পরিবারের দায়িত্ব নিবে মাসুদ। মাস্টার্স পাস করে ঢাকাতেই ছোটখাটো কম্পিউটারের কাজ করত। যা ইনকাম করতো তা দিয়ে নিজে চলে বাড়িতেও টাকা-পয়সা পাঠাত। আর মাঝে মাঝে বড় চাকরিতে যোগ দিতে পরীক্ষা দিত। অল্প দিনের মধ্যেই চাকরি পাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু সেই চাকরি আর করা হলো না। কীভাবে এই শোক মেনে নিব। আমার প্রাণের ছোট ভাইকে আর পাব না, এটা মানতে পারছি না।’
মাসুদের বন্ধু শাকিব হোসেন বলেন, ‘আমরা একই গ্রামে ছোট থেকে বড় হয়েছি। মাসুদ আমার চেয়েও অনেক মেধাবী ছিল। সে মুকসেদপুর উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এইচএসসি পাস করে ঢাকা কলেজে দর্শন বিভাগের অর্নাস ও মাস্টার্স শেষ করে। আমাকে মাঝে মাঝেই বলতো, বড় চাকরি করে বাবা-মায়ের স্বপ্ন পূরণ করবে। কিন্তু সেই চাকুরি আর তার করা হলো না। তার জন্য বুকটা ভেঙে চৌচির হয়ে যাচ্ছে।’
মাদারীপুরের পুলিশ সুপার মাসুদ আলম জানান, রোববার সকাল ৮টার দিকে খুলনা থেকে ছেড়ে আসা ইমাদ পরিবহনের একটি বাস পদ্মা সেতুর আগে এক্সপ্রেসওয়ের শিবচরের কুতুবপুর এলাকায় নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে খাদে পড়ে যায়। এ সময় দুমড়ে-মুচড়ে যায় বাসটি। এ ঘটনায় নারীসহ ১৯ জনের মৃত্যু হয়েছে। মাদারীপুর জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ঘটনার তদন্তের জন্যে চার সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।