'শুক্রবারে কে এসে আমায় মা বলে ডাক দেবে? আমার কাছে ভাত খেতে চাইবে? আমার আগে তুই চলে গেলি কেন বাজান? '
ছেলের মৃত্যুর সংবাদ পেয়ে কান্নায় ভেঙে পড়ে কথাগুলো বলছিলেন আব্দুল্লাহ আল মামুন রাজার মা নুরুন নাহার।
পূবালী ব্যাংকের ঢাকার মোগলটুলী ব্রাঞ্চ শাখার প্রিন্সিপাল অফিসার হিসেবে কাজ করতেন ৪২ বছর বয়সী রাজা। ১০ বছরেরও বেশি সময় ধরে তিনি স্ত্রী ও সন্তানকে নিয়ে ঢাকাতে বসবাস করতেন।
পরিবারের ভাষ্য, সম্প্রতি রাজা খুলনায় বদলির জন্য আবেদন করেছিলেন। তাই তিন মাস আগে স্ত্রী ও সন্তানকে খুলনার রায়েরবাগ এলাকায় ভাড়া বাড়িতে রেখে গিয়েছিলেন। এরপর প্রতি বৃহস্পতিবার রাতে ঢাকার কর্মস্থল থেকে তিনি খুলনা চলে আসতেন, আবার রোববার সকালে কর্মস্থলে ফিরে যেতেন।
প্রতি সপ্তাহের মতো এবারও রোববার বাড়ি থেকে কর্মস্থলের দিকে রওনা হন রাজা। কিন্তু মাদারীপুরের শিবচরের এক্সপ্রেসওয়ের কুতুবপুর এলাকায় সড়ক দুর্ঘটনায় তিনি নিহত হন। এ দুর্ঘটনায় নিহতের সংখ্যা বেড়ে ১৯ জনে দাঁড়িয়েছে।
রাজার বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, স্থানীয়রা তাদের বাড়তে ভিড় করেছন। লাশ দাফনের জন্য বাড়িতে নিয়ে আসা হয়েছে খাটিয়া। তার মা শোকে বারবার কেঁদে উঠছেন।
নুরুন নাহার বলেন, 'সকাল ৫ টায় আমার বাজান ঢাকাতে রওনা দেন। তার ১০ টার ব্যাংকে পৌঁছানোর কথা। তবে ব্যাংক থেকে আমাদের জানানো হয়, রাজা ব্যাংকে যাননি। তখন আমরা ধারাবাহিকভাবে তাকে মোবাইল করতে থাকি। তবে কেউ রিসিভ করেনি। পরে এক অটোরিকশা চালক এসে জানান, যে বাসে আমার বাজান ঢাকা যাচ্ছিল, সেটা এক্সিডেন্ট করেছে।'
রাজার বাবা শেখ মোহাম্মদ আলী বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ছিলেন। ২০০৯ সালে তিনি অবসরে যান।
শেখ মোহাম্মদ আলী বলেন, 'আমার ৩ ছেলে ও এক মেয়ে রয়েছে। এর মধ্যে রাজা ছিল মেজো সন্তান। সন্তানদের মধ্যে রাজাই একমাত্র চাকরি করতেন।'
তিনি জানান, রাতেই রাজাকে সরকারি গোরস্থানে দাফনের সিদ্ধান্ত হয়েছে।