বাবাহারা আফসানার শিক্ষাজীবন শেষ হয়েছিল সফলতার সঙ্গে। কিন্তু সনদ (সার্টিফিকেট) আর নেয়া হলো না। রোববার সকালে মাদারীপুরের ভয়াবহ বাস দুর্ঘটনায় অকালে ঝরেছে তার প্রাণ।
গোপালগঞ্জ জেলা শহরের বাসিন্দা ২৬ বছর বয়সী আফসানা মিমি পড়াশোনা করেছেন ময়মনসিংহ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে। ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের হর্টিকালচার বিভাগ থেকে এমএস (মাস্টার্স) করেছেন তিনি।
আফসানার বাবা আবু হেনা মোস্তফা কামাল একজন সরকারি কর্মকর্তা ছিলেন। ছোটবেলায় বাবাকে হারান আফসানা। অনেক কষ্টে আফসানা ও তার বোন রুকাইয়া ইসলাম রূপার লেখাপড়া চালিয়ে যাচ্ছিলেন মা কানিজ ফাতেমা।
আফসানার বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, ‘সার্টিফিকেট আনতে যাওয়া যেন কাল হলো’- এসব বলে বিলাপ করছেন তার মা কানিজ ফাতেমা। তার আহাজারিতে আশপাশের লোক জড়ো হয়ে সান্ত্বনা দেয়ার চেষ্টা করছেন। কিন্তু কোনোভাবেই তাকে শান্ত করা যাচ্ছে না।
স্বজনরা জানান, রোববার সকালে মা কানিজ ফাতেমা ও ছোট বোন রুকাইয়া ইসলাম রূপা গোপালগঞ্জ শহরের বঙ্গবন্ধু কলেজের সামনে থেকে আফসানাকে ঢাকাগামী ইমাদ পরিবহনের বাসটিতে উঠিয়ে দেন। তার ঢাকা থেকে ময়মনসিংহ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে যাওয়ার কথা ছিল।
পদ্মা সেতুর আগে এক্সপ্রেসওয়ের মাদারীপুর জেলার শিবচরের কুতুবপুর এলাকায় ইমাদ পরিবহনের বাসটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে খাদে পড়ে যায়। এতে আফসানাসহ গোপালগঞ্জের আরও অন্তত পাঁচজনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে।
অন্যরা হলেন, জেলা শহরের সামচুল হক রোডের মাসুদ আলমের মেয়ে সুরভী আলম সুইটি (২২), গোপালগঞ্জ পরিবার পরিকল্পনার উপপরিচালক অনাদী রঞ্জন মজুমদার (৫৩), বাসের সুপারভাইজার মানিকদাহ গ্রামের মিজানুর রহমান বিশ্বাসের ছেলে মিনহাজুর রহমান বিশ্বাস, দুর্ঘটনা-কবলিত বাসটির ড্রাইভার জাহিদ, সদর উপজেলার বনগ্রামের সামসুদ্দিন শেখের ছেলে মোস্তাক শেখ (৪০) ও মুকসুদপুরের আদমপুর গ্রামের আনজু খানের ছেলে মাসুদ খান (৩০)।
পরিবহনের ম্যানেজার জানান, খুলনা থেকে ছেড়ে যাওয়া ঢাকাগামী ইমাদ পরিবহনের বাসটিতে গোপালগঞ্জ জেলা থেকে ১৪ জন যাত্রী ওঠেন। তবে এর মধ্যে কতজন মারা গেছেন তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
এ দুর্ঘটনায় এখন পর্যন্ত মোট ১৯ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে।