‘ভারত-বাংলাদেশ মৈত্রী পাইপলাইন’ উদ্বোধনকে দুই বন্ধুপ্রতিম দেশের উন্নয়নের ক্ষেত্রে পারস্পরিক সহযোগিতার একটি মাইলফলক হিসেবে বর্ণনা করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
প্রধানমন্ত্রী শনিবার বিকেলে গণভবন থেকে এবং ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ভারত থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে বোতাম টিপে ভারত-বাংলাদেশ মৈত্রী পাইপলাইন উদ্বোধন করেন।
ভারতীয় লাইন অফ ক্রেডিট (এলওসি) থেকে নেয়া প্রায় ৩ দশমিক ৪৬ বিলিয়ন ভারতীয় রুপি ব্যয়ে নির্মিত ১৩১ দশমিক ৫ কিলোমিটার দীর্ঘ ভারত-বাংলাদেশ মৈত্রী পাইপলাইনের (আইবিএফপিএল) মাধ্যমে বাংলাদেশে ডিজেল রপ্তানি করবে ভারত।
পাইপলাইন উদ্বোধনের পর উভয় প্রধানমন্ত্রী আশা প্রকাশ করেন যে এটি বাংলাদেশের অর্থনীতিকে গতিশীল করার ক্ষেত্রে কার্যকর ভূমিকা রাখবে। পারস্পরিক সুবিধার জন্য দেশ দুটির মধ্যে কানেক্টিভিটি বাড়ানোর প্রয়োজনীয়তার ওপরও জোর দেন তারা।
শনিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গণভবন থেকে এবং ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ভারত থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে বোতাম টিপে মৈত্রী পাইপলাইন উদ্বোধন করেন। ছবি: পিআইডি
শেখ হাসিনা বলেন, ‘এটি বাংলাদেশের জ্বালানি নিরাপত্তা বৃদ্ধির পাশাপাশি অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ত্বরান্বিত করবে। ভারত আমাদের অকৃত্রিম বন্ধু। আমাদের দুই দেশের এই বন্ধুত্ব অটুট থাকুক সেটাই আমি চাই।
‘বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পেয়েছে। সেটাকে আমরা কার্যকর করতে চাই। আর ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে আমরা আরও উন্নত করতে চাই।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ভারতের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক রেখে দুই দেশের জনগণের সার্বিক উন্নয়ন ও কল্যাণে আমরা যেন একসঙ্গে কাজ করে যেতে পারি সেটাই আমাদের লক্ষ্য। কারণ আমরা চাই আমাদের দেশের এই উন্নয়ন আরও ত্বরান্বিত হোক।
‘মোংলা ও চট্টগ্রাম বন্দর এবং সিলেট, চট্টগ্রাম আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ও সৈয়দপুর বিমানবন্দরকে আঞ্চলিক বিমানবন্দর হিসেবে উন্নত করেছি। এগুলো ভারতের জন্য সম্পূর্ণ উন্মুক্ত করে দিচ্ছি যাতে এই বন্দরগুলো ব্যবহারে ভারতের কএনা অসুবিধা না হয়। এর ফলে ব্যবসা-বাণিজ্য আরও সহজ হবে এবং দুই দেশের মানুষই লাভবান হবে।’
সরকার প্রধান বলেন, ‘আমরা সারাদেশে এক শ’ বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তুলছি। আমি চাই, ভারতের বিনিয়োগকারীরা সেখানে আরও বিনিয়োগ করুন। আমরা দুই দেশই তাতে লাভবান হব।’
তিনি আশা প্রকাশ করে বলেন, আগামী দিনেও ভারত-বাংলাদেশ মৈত্রী পাইপলাইনের মতো আরও সফলতা দুই দেশ যৌথভাবে উদযাপন করবে এবং জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে একইসঙ্গে কাজ করবে।’
প্রধানমন্ত্রী পাইপলাইনটি চালু হওয়ায় সন্তোষ প্রকাশ করে উভয় দেশের প্রকল্প-সংশ্লিষ্টদের বিশেষ করে ভারতের যারা দিন-রাত পরিশ্রম করে এই পাইলাইন নির্মাণ করেছেন তাদের ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানান।
পাইপলাইন নির্মাণে আর্থিক ও প্রযুক্তিগত সহায়তা দেয়ায় ভারত সরকার ও আসামের মুখ্যমন্ত্রীসহ আসামের জনগণের প্রতিও ধন্যবাদ জানান তিনি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বর্তমানে রেলওয়ে ওয়াগনের মাধ্যমে ভারত থেকে বছরে ৬০ থেকে ৮০ হাজার টন ডিজেল আমদানি করা সম্ভব হয়। এখন পাইপলাইন নির্মাণের ফলে বছরে প্রায় ১০ লাখ টন ডিজেল আমদানি করা সম্ভব হবে।
‘এর মাধ্যমে আসামের একটি ভাল বাজার বাংলাদেশে সৃষ্টি হলো যেখানে এই ডিজেল মানুষের উন্নয়নের কাজে লাগবে এবং আসামবাসীও লাভবান হবে, ভারতবাসীও লাভবান হবে।
‘পার্বতীপুরে বর্তমানে আমাদের স্টোরেজ ক্যাপাসিটি ১৫ হাজার টন। এই স্টোরেজ ক্যাপাসিটি বৃদ্ধিতে আমরা কাজ করে যাচ্ছি।’
তিনি রামপাল মৈত্রী তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের একটি ইউনিট এবং ৫ দশমিক ১৩ কিলোমিটার দীর্ঘ রূপসা রেলওয়ে সেতু উদ্বোধনের জন্য পুণর্বার ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা কৃতজ্ঞ, আমাদের মুক্তিযুদ্ধে ভারতের সরকার ও জনগণ অকুন্ঠ সমর্থন জানিয়েছিল। বাংলাদেশ-ভারত মিত্রবাহিনীর যৌথ অভিযানেই একাত্তরের ১৬ ডিসেম্বর আমরা চূড়ান্ত বিজয় অর্জন করি।’
তিনি বলেন, ‘দুই দেশের মধ্যে বিদ্যমান সমস্যাগুলো একে একে সমাধান করা হয়েছে। তার মধ্যে রয়েছে- গঙ্গার পানিবণ্টন চুক্তি, ১৯৬৫ সালে ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধের সময় বন্ধ হয়ে যাওয়া সড়ক ও রেল যোগাযোগগুলো একে একে উন্মুক্ত করা, ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসার, উন্নয়নে একযোগে কাজ করে যাওয়া এবং ভারতের কাছ থেকে উন্নয়নে বিভিন্ন সহযোগিতা প্রাপ্তি, সাংস্কৃতিক সহযোগিতা জোরদারকরণ, দুই দেশের জনগণের মধ্যে যোগাযোগ বৃদ্ধি প্রভৃতি।
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশে শতভাগ মানুষের জন্য বিদ্যুৎ নিশ্চিত করতে আমরা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। ইতোমধ্যে তা বাস্তবায়ন করা হয়েছে। ভারত থেকে ১ হাজার ১৬০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানি করছি। বিদ্যুৎ খাতে উপ-আঞ্চলিক পর্যায়সহ দ্বিপাক্ষিক আরও কয়েকটি উদ্যোগ বাস্তবায়নাধীন। আর এই সহযোগিতার ফলে আমাদের বন্ধুত্ব আরও গভীর হচ্ছে।’
এ প্রসঙ্গে সমুদ্র সীমানার পাশাপাশি স্থল সীমানা নিয়ে দুই দেশের পারস্পরিক সমস্যার সমাধান করতে পারায় ভারতের রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ এবং জনগণকে ধন্যবাদ জানান প্রধানমন্ত্রী।
২০১৮ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও তিনি ভার্চুয়ালি এই পাইপলাইন প্রকল্পের কাজ উদ্বোধন করেন উল্লেখ করে শেখ হাসিনা ভারতের প্রধানমন্ত্রীকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানান।