সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির (বার অ্যাসোসিয়েশন) নির্বাচনে জালিয়াতির অভিযোগ তুলে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, এর মধ্য দিয়ে নির্বাচনি ব্যবস্থায় শেষ পেরেক ঠোকা হয়েছে।
রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে শুক্রবার সকালে সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলেন তিনি।
ওই সময় সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির নির্বাচন নতুন করে ‘সুষ্ঠুভাবে’ আয়োজনের দাবি জানান তিনি।
সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির নির্বাচনের ভোটগ্রহণ শেষ হয় বৃহস্পতিবার। নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বুধবার হাতাহাতি, পাল্টাপাল্টি ধাওয়া ও পুলিশের হাতে সাংবাদিক, আইনজীবীদের মারধরের শিকার হওয়ার ঘটনা ঘটে।
নির্বাচনের ফল বৃহস্পতিবার গভীর রাতে ঘোষণা করা হয়। ঘোষিত ফলাফলে সভাপতি-সম্পাদকসহ সব পদেই আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্যানেলের প্রার্থীদের বিজয়ী ঘোষণা করা হয়।
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির নির্বাচনে নাটকের মধ্য দিয়ে দেশের নির্বাচনি ব্যবস্থার কফিনে শেষ পেরেকটি ঠোকা হয়েছে। দেশের অন্য সব নির্বাচনের মতো সর্বোচ্চ আদালতের আইনজীবীদের সমিতির নির্বাচনেও ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের যে রাজনৈতিক চরিত্র, তার নগ্ন বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে।’
তিনি বলেন, ‘আমি কল্পনাও করতে পারিনি যে, সুপ্রিম কোর্টে পুলিশ ঢুকে আইনজীবীদের ওপর আক্রমণ করবে। সুপ্রিম কোর্টের ভেতরে পুলিশ কিছু করবে না, সেটাই মনে করা হতো, কিন্তু সেই জায়গাও এখন প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে গেল।
‘রাজনৈতিকভাবে আওয়ামী লীগ আজ এমন একটি দেউলিয়া দলে পরিণত হয়েছে যে, আইনজীবীদের একটি সমিতির নির্বাচনেও পুলিশের পাশাপাশি বহিরাগতদের ব্যবহার করে নিজেদের প্রার্থীদের বিজয়ী ঘোষণা করতে হয়। এটা বড় লজ্জার বিষয়।’
সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির নির্বাচন নিয়ে বিজ্ঞ আইনজীবীদের পাশাপাশি দেশের সাধারণ মানুষের ব্যাপক আগ্রহ ছিল বলে উল্লেখ করেন বিএনপির মহাসচিব।
তিনি বলেন, ‘আইনগতভাবে কোনো নির্বাচন অনুষ্ঠিত না হলেও নির্বাচনের নাটক সাজিয়ে একতরফাভাবে ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থীদের অবৈধভাবে নির্বাচিত ঘোষণা করা হয়েছে।’
ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও তাদের ‘ছত্রছায়ায়’ দেশের কোথাও কোনো অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠান সম্ভব নয় দাবি করে ফখরুল বলেন, ‘আমরা সবসময় এ কথা বলে আসছি। কারণ তারা গণতন্ত্রে বিশ্বাস করে না। তারা জনগণের ভোটাধিকারে বিশ্বাসী নয়।
‘গত ২০১৪ ও ২০১৮ সালে অনুষ্ঠিত জাতীয় সংসদ নির্বাচনসহ বিভিন্ন স্তরের স্থানীয় নির্বাচনে ইতোপূর্বে বারবার বিষয়টি প্রমাণিত হয়েছে। সর্বশেষ প্রমাণ সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির নির্বাচন।’
এর আগে ঢাকা আইনজীবী সমিতির নির্বাচনেও একই ধরনের প্রহসনের নির্বাচন করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেন বিএনপি মহাসচিব।
তিনি বলেন, ‘আমাদের প্রত্যাশা ছিল, দেশের সাধারণ মানুষের আইনের আশ্রয় নেয়ার শেষ ভরসাস্থল সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবীদের সমিতিতে নগ্ন হস্তক্ষেপ থেকে ক্ষমতাসীন দল বিরত থাকবে, কিন্তু এখানেও নির্বাচনের নামে প্রহসন করা হয়েছে। এটা শুধু আইনজীবী সমাজেরই নয়, পুরো জাতির জন্যই কলঙ্কজনক।’