কিছু মানুষের কারণে শান্তির ধর্ম ইসলামের দুর্নাম হচ্ছে মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মুসলমানদের আল্লাহর নির্দেশনা ও মহানবী (সা.)-এর পদাঙ্ক অনুসরণ করার আহ্বান জানিয়েছেন।
দেশের বিভিন্ন স্থানে বৃহস্পতিবার ৫০টি মডেল মসজিদ উদ্বোধন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে দেয়া বক্তব্যে তিনি এ আহ্বান জানান।
গণভবন থেকে বিভিন্ন প্রান্তের সঙ্গে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘জীবন আল্লাহ দিয়েছে; আল্লাহ রাব্বুল আলামিন দিয়েছে। জীবন দেবার মালিকও তিনি, নেবার মালিকও তিনি। আমার বাবা, মা, ভাই, বোন সবাইকে হত্যা করা হয়ছে। আমরা দুইজন বেঁচে গিয়েছি বিদেশে ছিলাম বলে, কিন্তু ৮১ সালে দেশে ফেরার পর কতবার আমি…কখনও বোমা ফাটা, কখনও গ্রেনেড হামলা, নানাভাবে আমার ওপর আক্রমণ হয়েছে। বারবার আমি বেঁচে গিয়েছি।
‘আমি এটা বিশ্বাস করি যে, আল্লাহ রাব্বুল আলামিনই আমাকে রক্ষা করেছেন। কারণ আল্লাহ রাব্বুল আলামিন সবসময় মানুষকে কিছু সময় দেন কিছু কাজ করার। আমি সবসময় বিশ্বাস করি যে, সে কাজগুলো সম্পন্ন না হওয়া পর্যন্ত তিনি আমাকে রক্ষা করবেন।’
আল্লাহর ওপর বিশ্বাসকে জীবনে চলার পাথেয় করে নিয়েছেন জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘সেই বিশ্বাস নিয়েই আমি বাংলাদেশে এসেছিলাম। সেই বাংলাদেশে, যেই বাংলাদেশে আমার বাবা, মা, ভাই, বোনকে তারা হত্যা করেছে। তারা লাশ ফেলে রেখেছিল, দাফন-কাফনটা পর্যন্ত করতে দেয়নি। জানাজাটাও করতে দেয়নি। তারাই কিন্তু ক্ষমতায় ছিল এবং তারা আত্মস্বীকৃত।’
তিনি বলেন, ‘আল্লাহর ওপর আমার বিশ্বাস আছে। সেই বাংলাদেশে আমি ফিরে আসি। ঘাত-প্রতিঘাতের মধ্য দিয়ে, চড়াই-উতরাইয়ের মধ্য দিয়েই আমি চলেছি শুধুমাত্র আল্লাহর ওপর বিশ্বাস রেখে। নিশ্চয়ই আল্লাহ আমাকে বাঁচিয়ে রেখেছেন, কিছু কাজ আমাকে দেবেন। সেই কাজগুলো আমাকে সম্পন্ন করতে হবে।
‘সে জন্য আমার কখনও কোনো মৃত্যুভয় হয়নি। কারণ আমি আল্লাহর ওপর বিশ্বাস রেখেছি। সেইভাবেই আমি কিন্তু চলার চেষ্টা করেছি এবং দেশের মানুষের কল্যাণে কাজ করে যাচ্ছি।’
ইসলাম ধর্মাবলম্বীদের সহিষ্ণু হওয়ার আহ্বান জানিয়ে সরকারপ্রধান বলেন, ‘কাজেই আমি এটা বলব যে, যারা সত্যিকার ইসলাম বিশ্বাস করে, তাদের অন্য ধর্মের প্রতিও সহনশীল হতে হবে। আমাদের বাংলাদেশে আমরা চাই আমাদের সকল ধর্মের সমান অধিকার। যার যার ধর্ম সে সে পালন করবে। শেষ বিচার তো আল্লাহ করবেন। বিচারের ভার আল্লাহ আমাদেরকে, মানুষকে দেয় নাই; কোনো মানুষকে দেননি। এ কথাটা সকলকে মনে রাখতে হবে। কেউই বিচার করতে যাবেন না যে, এই ধর্ম করে না বলে তাকে খুন করে ফেলতে হবে। এটা ইসলামের শিক্ষা না। এটা আমি বিশ্বাস করি।’
কিছু মানুষ ইসলামের দুর্নাম করছে মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমি মনে করি যারা সত্যিকার আল্লাহর ওপর ভরসা রাখে, নবী করিম (সা.)-এর নির্দেশ মানে, তারাই সেই বিশ্বাস করে; বরং এই খুনখারাবি করতে যেয়ে আমাদের ধর্মের অসম্মান করা হচ্ছে বিশ্বে। আমাদের ধর্মকেই একটা দুর্নাম দেয়া হচ্ছে। এটাই সব থেকে আমাদের জন্য দুঃখজনক। যে ধর্মটা সব থেকে শান্তির ধর্ম, সেই ধর্মের নামেই এই কুৎসা দেয়া হচ্ছে কিছু লোকের জন্য। কেন এটা আমরা মেনে নেব?’
আল্লাহর নির্দেশ ও মহানবীর (সা.) পদাঙ্ক অনুসরণের আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা শান্তিতে বিশ্বাস করি, সহনশীলতায় বিশ্বাস করি, মানবজাতির কল্যাণে বিশ্বাস করি। আল্লাহ আমাদের যে শিক্ষা দিয়েছে, আমাদের পবিত্র কোরআনে যে নির্দেশ আছে, নবী করিম (সা.) যে কথা বলেছেন, তার বিদায় হজে যে নির্দেশ দিয়েছেন, সেটা মেনেই সকলকে চলতে হবে; সহনশীল থাকতে হবে। সেটাই আমি বিশ্বাস করি।’
দশম হিজরিতে মহানবী (সা.) তার বিদায় হজের ভাষণে বেশ কিছু নির্দেশনা দিয়েছিলেন। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল অন্যায়ভাবে রক্তপাত না করা, মানুষে মানুষে বৈষম্য বন্ধ করা, স্বজনপ্রীতি বন্ধ করা, মানুষের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, ইনসাফভিত্তিক বিচারব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করা, শ্রমিকের অধিকার রক্ষা করা, ধর্মের বিষয়ে বাড়াবাড়ি না করা।