সীতাকুণ্ডে সীমা অক্সিজেন প্ল্যান্টে বিস্ফোরণের ঘটনায় গ্রেপ্তার প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক পারভেজ উদ্দীনকে হাতকড়া ও কোমরে দড়ি বেঁধে আদালতে হাজির করার একটি ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে।
পরে এ ঘটনায় দায়িত্বরত শিল্প পুলিশের উপপরিদর্শক (এসআই) অরুণ কান্তি বিশ্বাসকে শো-কজ করে শিল্প পুলিশ।
চট্টগ্রাম জেলা শিল্প পুলিশের পুলিশ সুপার মো. সোলায়মান মামুন উদ্দিন নিউজবাংলাকে বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, ‘দায়িত্বরত পুলিশ সদস্যদের মধ্যে মূল দায়িত্ব ছিল উপপরিদর্শক অরুণ কান্তি বিশ্বাসের। তাকে বুধবারই শো-কজ করা হয়েছে।’
বন্দি নাগরিকদের প্রতি সদাচরণ প্রদর্শন করতে উচ্চ আদালতের নির্দেশনাও রয়েছে বলে জানান বাংলাদেশ হিউম্যান রাইটস ফাউন্ডেশনের (বিএইচআরএফ) মহাসচিব অ্যাডভোকেট জিয়া হাবিব আহসান।
তিনি বলেন, ‘অভিযুক্তকে আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ দেয়া, দোষী সাব্যস্ত না হওয়া পর্যন্ত অপরাধী হিসেবে আচরণ না করা, আইনজীবী নিয়োগের সুযোগ দেয়া প্রভৃতি আটক বন্দিদের মানবাধিকার। যেকোনো ইন্দর প্রতি নিষ্ঠুরতা প্রদর্শন, অপমানজনক আচরণ মানবাধিকারের চরম লঙ্ঘন। বন্দি নাগরিকদের প্রতি সদাচরণ প্রদর্শন করতে উচ্চ আদালতের নির্দেশনাও রয়েছে।’
এদিকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিষয়টি ছড়িয়ে পড়লে অনেকেই এ নিয়ে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানান।
মো. হাসান নামের একজন লেখেন, ‘যার কারখানায় কাজ করে ৯০ শতাংশ স্থানীয় মানুষ, করোনার সময় যিনি আক্রান্ত মানুষের জন্য অক্সিজেন ফ্রি করে দিয়েছিলেন, দুর্ঘটনায় হতাহতদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করেছেন, দুর্ঘটনার এক সপ্তাহের মধ্যেই শ্রম আইনের নিয়মের বেশি ক্ষতিপূরণ দিয়েছেন, তার কোমরে জুটলো রশি।’
মো. রিয়াদ নামের একজন লেখেন, ‘সমাজে ভালো মানুষের মূল্যায়ণ করতে না পারলে সে জনপদ ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে চলে যায়। সম্মানিত একজন মানুষকে কোমরে এভাবে দড়ি বেঁধে আদালতে তোলা মোটেও সমীচীন নয়। এমন নির্মমতা কখনও সমর্থনযোগ্য নয়।’
নগরীর জিইসি মোড় এলাকা থেকে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় তাকে গ্রেপ্তার করে শিল্প পুলিশ। তিনি সীমা অক্সিজেন প্ল্যান্টের পরিচালকের দায়িত্বে ছিলেন।
পরদিন তাকে আদালতে হাজির করে সাত দিনের রিমান্ড আবেদন করেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা। এতে আদালত তার একদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
সীতাকুণ্ডের সীমা অক্সিজেন প্ল্যান্টে বিস্ফোরণের দুদিন পর ১৬ জনকে এজহারনামীয় ও অজ্ঞাত ব্যক্তিদের আসামি করে মামলা করেন নিহত এক শ্রমিকের স্ত্রী। মামলায় কারখানা মালিক তিনভাই মো. মামুন উদ্দিন, পারভেজ হোসেন সন্টু এবং মো. আশরাফ উদ্দিন বাপ্পি ছাড়াও কারখানার ১৩ কর্মকর্তা কর্মচারীকে এজহারনামীয় আসামি করা হয়।
মালিকপক্ষের তিন ভাইয়ের মধ্যে মামুন উদ্দিন ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও বাকি দুজন পরিচালক হিসেবে রয়েছেন।
মামলার বাকি আসামিরা হলেন, ম্যানেজার আব্দুল আলীম, অপারেটর ইনচার্জ শামসুজ্জামান শিকদার, অপারেটর খুরশিদ আলম, অপারেটর সেলিম জাহান, নির্বাহী পরিচালক মো. কামাল উদ্দিন, অফিসার সামিউল এবং শান্তনু রায়, সুপারভাইজার ইদ্রীস আলী, সানাউল্লাহ, সিরাজ উদ-দৌলা, রাকিবুল এবং রাজিব। এ ছাড়াও দায়িত্বে অবহেলাকারী সীমা অক্সিজেন প্ল্যান্টের অজ্ঞাত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের আসামি করা হয়েছে মামলায়।