আর্থিক অনটনে পরীক্ষার ফরম ফিল-আপ করতে পারেননি বলে দাবি করেছেন নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সংসদ সদস্য শামীম ওসমান।
নারায়ণগঞ্জের কানাইনগর ছোবহানিয়া স্কুল অ্যান্ড কলেজে বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতা, পুরস্কার বিতরণী ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে বুধবার সন্ধ্যায় তিনি এমন কথা বলেন।
ওই অনুষ্ঠানে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের মেয়র সেলিনা হায়াৎ আইভীকে উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘নারায়ণগঞ্জে নৌকা মার্কা নিয়ে নির্বাচিত এক জনপ্রতিনিধির কাছে পরিচ্ছিন্নতাকর্মী তাদের কষ্টের কথা বলতে গেছিল। যিনি ভোটের আগে সবাইকে বাপ-মা বলে অভিহিত করেন, আর ভোটের পরে তুই-তুকারী করেন।’
সিটির পরিচ্ছন্নকর্মীদের সমস্যার সমাধান না করে তাদের বলা হয়েছে যে, ‘ভাত খাইতে ভাত পাছ না, তুই ফোন পাছ কই থেকা।’
শামীম বলেন, ‘তার এমন কথায় লজ্জা পেয়েছি। আমাদেরকে প্রশ্নবিদ্ধ করবেন না। পরিচ্ছন্নকর্মীরাও কিন্তু মানুষ। আমি ওই সকল পরিচ্ছন্নকর্মীদের কাছে ক্ষমা চাই। জনপ্রতিনিধির এমন কথা শুনে লজ্জা হয়। আপনাদের কাছে ট্যাক্সের ফাইলে টাকা না থাকলে এত বড় বড় বাড়ি-ঘরে কীভাবে থাকেন।’
আইভীর উদ্দেশে সংসদ সদস্য শামীম আরও বলেন, ‘যখনই গরীব মানুষের ওপর আঘাত হয় তখনি সেটার প্রতিবাদ করি, সে যেই দলেরই হোক না কেন। একটি রাজনীতিবিদকে যখন পুলিশের পাহাড়ায় থাকতে হয়, তখন আমার মনে হয় সে সাধারণ মানুষের কাছ থেকে অনেক দূরে সরে যাচ্ছেন।’
মেয়র আইভীর প্রতি ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি বলেন, ‘অনেকেই বলে যে নারায়ণগঞ্জ ওসমানীয় সাম্রাজ্য। কিন্তু কেন? আমরা নাকি গুম-খুন করে সাম্রাজ্য কায়েম করেছি। আমরা জমি দখল করে সাম্রাজ্য করি নাই। আমরা সাম্রাজ্য করেছি মানুষের মনের ভেতর জায়গা করে। আমি কোনো ওলি আউলিয়ার ছেলে না। আমার বাবা কোনো ওলি-আউলিয়া ছিলেন না, খেলাফতও পান নাই; সাধারণ মানুষ ছিলেন, কিন্তু বাংলাদেশের সবচেয়ে ধনী পরিবারের সন্তান ছিলেন।
‘খান সাহেব ওসমান আলীর ছেলে শামসুজ্জোহা। আমার বাবা দুইবারের এমপি ছিলেন, তবে আমাদের ভাই-বোনদের জন্য এক টাকাও রেখে যান নাই। টাকার অভাবে পরীক্ষার ফরম ফিলআপ করতে পারি নাই। আমার বাবা চাইলে নারায়ণগঞ্জের অর্ধেক কিনতে পারতেন, কিন্তু আমার বাবা কোনো জমি দখল করেন নাই, ভূমিদাস্যতা করেন নাই। স্বাধীনতার পরে আমার বাবা কোনো কিছু লুট করে নাই, হিন্দুদের দেবত্তর সম্পত্তি লুট করেন নাই।’
আওয়ামী লীগ নেতা শামীম বলেন, ‘মানুষকে সম্মান করো, মানুষকে সম্মান করলে আল্লাহ সম্মানিত করে। তুই-তুকারী আল্লাহ পছন্দ করেন না। ভোটের আগে যদি একরকম ব্যবহার করে, আর ভোটের পর যদি আরেক রকম করে; আমাদেরকে প্রশ্নবিদ্ধ করবেন না। আমি ওই সকল পরিচ্ছন্নকর্মীদের কাছে ক্ষমা চাই। আপনারা পরিচ্ছন্নতাকর্মী, আপনারা মানুষ।’