বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কেন সংলাপ নয়, জানাল বিএনপি

  • নিজস্ব প্রতিবেদক   
  • ১৪ মার্চ, ২০২৩ ১৫:১০

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘তার (প্রধানমন্ত্রী) সঙ্গে আমরাও কোনো সংলাপ করব না। কারণ তিনি কথা দিয়ে কথা রাখেন না।’

প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার সঙ্গে কোনো সংলাপে বিএনপি যাবে না জানিয়ে এর কারণ ব্যাখ্যা করেছেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

রাজধানীর গুলশানে মঙ্গলবার দুপুরে দলের চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে বিএনপির সঙ্গে সংলাপ নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে বিএনপি মহাসচিব তার দলের অবস্থান ব্যক্ত করেন।

কাতারে সাম্প্রতিক সফর নিয়ে সোমবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সংবাদ সম্মেলনের প্রশ্নোত্তর পর্বে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ছায়া সরকারের উদাহারণ দিয়ে এক সাংবাদিক বাংলাদেশে এমন সরকার না থাকার কারণ জানতে চান।

জবাবে বিএনপির দিকে ইঙ্গিত করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘ছায়া সরকার কে করবে? যে দল বেশি লাফায় সে দলের দুই নেতাই হচ্ছে সাজাপ্রাপ্ত আসামি। সাজাপ্রাপ্ত আসামিরা না পারবে ইলেকশন করতে, না পারবে ক্ষমতায় আসতে।

‘বিএনপি তো তার নিজের গঠনতন্ত্র নিজে ভঙ্গ করছে। তাদের গঠনতন্ত্রে আছে যে, সাজাপ্রাপ্ত আসামি দলের নেতা হতে পারে না, কিন্তু তারা সেই সাজাপ্রাপ্ত আসামিকেই দলের নেতা বানিয়ে রেখে দিয়েছে। এখন সেই দলের কাছে কী আশা করবেন?’

ওই বক্তব্যের এক দিন পর মির্জা ফখরুল বলেন, ‘তার (প্রধানমন্ত্রী) সঙ্গে আমরাও কোনো সংলাপ করব না। কারণ তিনি কথা দিয়ে কথা রাখেন না।’

বিদ্যুৎ খাতে ‘অসম’ চুক্তি, ‘দুর্নীতি’, ‘অব্যবস্থাপনা’ ও বিদ্যুৎ, গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদে এ সংবাদ সম্মেলন করে বিএনপি।

২০১৮ সালের নির্বাচনের আগে ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনায় বসেছিল বিএনপি। সেই প্রসঙ্গে টেনে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘ওই সংলাপে প্রধানমন্ত্রী বলেছিলেন, আর কোনো গ্রেপ্তার (বিএনপি কর্মীদের) হবে না, পুলিশি হয়রানি হবে না, গায়েবি মামলা হবে না, কিন্তু এর তিন দিন পর থেকে আমাদের প্রার্থীদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে, নির্যাতন করা হয়েছে।’

‘যত চুক্তি তত লাভ’

সরকারের বিদ্যুৎ উৎপাদন ও ব্যবস্থাপনা নীতি সম্পূর্ণ মুখ থুবড়ে পড়েছে মন্তব্য করে বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘গত ১৪ বছরে বর্তমান ফ্যাসিস্ট আওয়ামী সরকারের শাসনামলে দেশের সমগ্র বিদ্যুৎ খাতে ভয়াবহ দুর্নীতি, লুট ও অব্যবস্থাপনা হয়েছে। এর কুফল এখন সমগ্র দেশবাসীকে ভোগ করতে হচ্ছে। দেশকে একটি ভয়াবহ অর্থনৈতিক ও সামাজিক বিপর্যয়ের দিকে ঠেলে দিয়েছে। এরই মধ্যে ভারতের আদানি পাওয়ারের সাথে সরকারের আরেকটি একপেশে ও দেশের জন্য অত্যাধিক ক্ষতিকর চুক্তি প্রকাশ হলো।’

ফখরুল বলেন, ‘অপরিকল্পিতভাবে চাহিদার অতিরিক্ত বিদ্যুৎকেন্দ্রের অনুমোদন, অযোগ্য কোম্পানিকে রাজনৈতিক বিবেচনায় প্রকল্প প্রদান, প্রতিযোগিতা ছাড়া বিনা টেন্ডারে অতিরিক্ত দরে বিদ্যুৎ কেনার চুক্তি এবং স্বল্প মেয়াদের রেন্টাল ও কুইক রেন্টালগুলোর মেয়াদ বাড়িয়ে বিদ্যুৎ খাতে বছরের পর বছর খরচ বাড়ানো হয়েছে। সরকার পরিণাম না ভেবে দেশের স্বার্থবিরোধী প্রাইভেট সেক্টরেও যৌথ মালিকানার নামে একের পর এক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের আনন্দে বিভোর ছিল, এখনও আছে।

‘এখন এক শ্রেণির ক্ষমতাবান ব্যক্তি ও সরকারি কর্তাদের পৌষ মাস। যত চুক্তি তত লাভ। কুইক রেন্টাল ও আইপিপি চুক্তিগুলো এমনভাবে প্রস্তুত করা হয়েছে যাতে সরকার-ঘনিষ্ঠ অলিগার্কদের কৌশলে অবৈধ ও অনৈতিক আর্থিক সুবিধা পাইয়ে দেয়া যায়।’

‘দুই মাসে দাম বেড়েছে তিনবার’

বিদ্যুৎ, গ্যাসের দাম বাড়ানোর সমালোচনা করে মির্জা ফখরুল ইসলাম বলেন, ‘সরকার গত দুই মাসে তিনবার বিদ্যুৎ ও গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধি করেছে। গত ২৮ ফেব্রুয়ারি বিদ্যুতের মূল্য আরও ৫ শতাংশ বাড়িয়েছে সরকার। এ নিয়ে গত ১২ বছরে বিদ্যুতের দাম বেড়েছে ১২ বার। এতে পাইকারি পর্যায়ে বিদ্যুতের দাম ১১৮ পারসেন্ট বাড়ানো হলো।

‘অপরদিকে সরকার গত সাড়ে ১৩ বছরে গ্যাসের দাম বাড়িয়েছে ৪০০ শতাংশ। গ্যাসের দাম বৃদ্ধি উসকে দেবে মূল্যস্ফীতি, জীবনযাপন কষ্টকর হয়ে পড়বে, কিন্তু জবাবদিহিহীন এ সরকারের তাতে কিছু যায় আসে না।’

সরকারের ‘অদূরদর্শিতা’ ও ‘দুর্নীতি’ দেশের বিদ্যুৎ ও জ্বালানি ব্যবস্থাকে ভয়াবহ সংকটে নিক্ষেপ করছে মন্তব্য করে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘দেশের মানুষ আজ বিদ্যুৎ পাচ্ছে না। বিদ্যুতের অভাবে দেশের কলকারখানায় উৎপাদন বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। রপ্তানি ব্যাহত হচ্ছে। ফলে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বিদ্যুৎ বেগে কমছে।

‘দেশের গড় মুদ্রাস্ফীতি ১০ শতাংশে গিয়ে ঠেকেছে। জনগণের কাছে জবাবদিহিতা নেই বলেই সরকারের পক্ষে জাতীয় স্বার্থবিরোধী এসব কাজ করা সম্ভব হচ্ছে।’

বিএনপি মহাসচিব তার লিখিত বক্তব্যে বলেন, ‘ট্যারিফ কমিশন সূত্র বলছে, অক্টোবর থেকেই আন্তর্জাতিক বাজারে কয়লার দাম কমছে। বিদ্যুৎ সচিবও বলছেন, কয়লার দাম কমছে এবং আও কমবে। প্রশ্ন হলো কয়লার কমতি দামের মধ্যেও বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হলো কেন? এদিকে রামপাল ও বরগুনার বিদ্যুৎ কেন্দ্রের কয়লার দাম বেশি ধরা হচ্ছে মর্মে খোদ বাংলাদেশ ব্যাংক আপত্তি জানিয়েছে বলে জানা যায়।’

বিদেশি কোম্পানির সঙ্গে ‘অসম চুক্তির’ দায় সরকারের মন্তব্য করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘এসব চুক্তি সম্পাদনের আগে দেশের স্বার্থ সুরক্ষার দায়িত্ব অবশ্যই সরকারের, কিন্তু সরকার সে গুরু দায়িত্ব পালনে চরমভাবে ব্যর্থ হয়েছে। আমরা বাকরুদ্ধ হয়ে যাই এই ভেবে যে, একটি দেশের সরকার দেশ ও জনগণের এত বড় ক্ষতি কীভাবে করতে পারে!’

মির্জা ফখরুল আরও বলেন, ‘বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকারের অপরিণামদর্শী ভ্রান্ত নীতি, অব্যবস্থাপনা ও নানাবিধ দুর্নীতির মাধ্যমে দেশের অর্থনীতিকে মহাবিপর্যয়ের মধ্যে ঠেলে দিয়েছে। এটি কাটিয়ে ওঠা পরবর্তী যেকোনো সরকারের পক্ষেই হবে এক বড় চ্যালেঞ্জ। বিএনপি সরকার গঠন করলে দেশের স্বার্থ বিনষ্টকারী সব চুক্তি এবং বিদ্যুৎ ও জ্বালানি (বিশেষ বিধান) আইনসহ সব আইন বাতিল করা হবে, কিন্তু তার আগে গণতন্ত্রকে মুক্ত করতে হবে।’

দলমত জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে বিএনপির চলমান আন্দোলনে সবাইকে যোগ দেয়ার আহ্বান জানিয়ে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘দুর্নীতিতে আকণ্ঠ নিমজ্জিত বর্তমান সরকারকে দুর্বার গণআন্দোলনের মাধ্যমে ক্ষমতাচ্যুত করে একটি নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের পরিচালনায় অবাধ ও গ্রহণযোগ্য সাধারণ নির্বাচনের মাধ্যমে প্রকৃত অর্থে জনগণের একটি সরকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে। সে জন্য দলমত জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে প্রত্যেককে চলমান গণআন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়ার উদাত্ত আহবান জানাচ্ছি।’

এ বিভাগের আরো খবর