গড় হিসেবে একটি পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে, সবমিলিয়ে মোটরসাইকেলে সঠিকভাবে হেলমেট পরেন ৪৭ শতাংশ যাত্রী। তবে নারী ও শিশুদের মধ্যে হেলমেট পরার প্রবণতা খুবই কম।
ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের সম্মেলন কক্ষে সোমবার এক কর্মশালায় এই পর্যবেক্ষণ প্রতিবেদন আকারে তুলে ধরা হয়।
টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) অর্জন নিশ্চিত করতে এবং সড়ক দুর্ঘটনাকে সহনীয় মাত্রায় রাখতে বেসরকারি প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর ইনজুরি প্রিভেনশন অ্যান্ড রিসার্চ বাংলাদেশ (সিআইপিআরবি) এবং ভাইটাল স্ট্র্যাটেজিসের সহায়তায় ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি) এবং জন্স হপকিন্স ইন্টারন্যাশনাল ইনজুরি রিসার্চ ইউনিট যৌথভাবে এ কর্মশালার আয়োজন করে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, গবেষণার সময়কালে মোট ৩ লাখ ৫৬ হাজার ৮৭২টি পর্যবেক্ষণ করা হয়। সামগ্রিকভাবে হেলমেট ব্যবহারের হার (৯২ শতাংশ) ছিল সন্তোষজনক। তবে যাত্রীদের মধ্যে সঠিকভাবে হেলমেট ব্যবহারের হার ছিল মাত্র ৪৭ শতাংশ, যেখানে নারী এবং শিশুদের মধ্যে হেলমেট ব্যবহারের প্রবণতা ছিল খুবই কম।
এতে বলা হয়, চালকদের মধ্যে সিট বেল্ট ব্যবহারের হার ছিল প্রায় ৬০ শতাংশ। তবে গাড়িতে যাতায়াতকারী শিশুদের কাউকেই নিরাপদ শিশু সুরক্ষিত আসন ব্যবহার করতে দেখা যায়নি। ২০২২ সালের নভেম্বর মাসে ১০ শতাংশ যানবাহনের গতি পর্যবেক্ষণ করা হয় এবং স্থানীয় রাস্তায় চলাচলকারী যানবাহনের প্রায় অর্ধেক যানবাহনকে প্রস্তাবিত গতির (৩০ কিলোমিটার/ঘণ্টা) বেশি গতিতে চলতে দেখা যায়।
ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের পক্ষে ইঞ্জিনিয়ার তাবাসসুম আবদুল্লাহের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ডিএনসিসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (অতিরিক্ত সচিব) মো. সেলিম রেজা।কর্মশালায় ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনসহ বিভিন্ন সরকারি সংস্থার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা এবং বাংলাদেশের বিআইজিআরএস অংশীদার সংস্থার প্রতিনিধিরা (যেমন- জন্স হপকিন্স ইন্টারন্যাশনাল ইনজুরি রিসার্চ ইউনিট, ভাইটাল স্ট্র্যাটেজিস, জি এইচ এ আই, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এবং ডব্লিউ আর আই), একাডেমিক প্রতিষ্ঠান এবং সুশীল সমাজের বিভিন্ন সংস্থাউন্মুক্তভাবে অংশগ্রহণ করে।
জন্স হপকিন্স ইন্টারন্যাশনাল ইনজুরি রিসার্চ ইউনিট থেকে ডা. শিরিন ওয়াধানিয়া এবং সেন্টার ফর ইনজুরি প্রিভেনশন অ্যান্ড রিসার্চ, বাংলাদেশ থেকে ডা. সেলিম মাহমুদ চৌধুরী গবেষণার ফলাফল উপস্থাপন করেন।
বিশেষ অতিথি বক্তব্যে উল্লেখ করেন, সড়ক দুর্ঘটনার ফলে বাংলাদেশ বিশেষ করে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন অর্থনৈতিকভাবে ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে। এ ছাড়াও তিনি তার এলাকায় সড়ক এলাকায় সড়ক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের গৃহীত উদ্যোগ ও চলমান কার্যক্রমের কথা বলেন।
প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা প্রতিষ্ঠানের ভবিষ্যৎ কার্যক্রম পরিকল্পনা করার সময় রোডসাইড অবজারভেশনাল স্টাডি-এর ফলাফল ব্যবহার করার জন্য কর্মশালার অংশগ্রহণকারীদের অনুরোধ করেন।
অনুষ্ঠানের বিশেষ অতিথি অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী মো. শরিফ উদ্দিন বলেন, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন সড়ক নিরাপত্তা নিশ্চিতকল্পে নানাবিধ কার্যক্রম বাস্তবায়ন করে যাচ্ছে। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো, অত্যাধুনিক সুযোগ-সুবিধা সহ (লিফট, এক্সেলেটর ইত্যাদি) ৩৬টি নতুন ফুট ওভারব্রিজ নির্মাণ, পথচারীদের অনিরাপদ রাস্তা পারাপার বন্ধ করতে সড়ক দ্বীপে বেড়া স্থাপন, বিমানবন্দর সংযোগ সড়কের কতিপয় গুরুত্বপূর্ণ মোড়ে সড়ক উন্নয়ন কাজ, সড়ক বাতি স্থাপন, ফুটপাত তৈরি, ড্রেন তৈরি, আরসিসি পাইপলাইন নির্মাণ এবং রোড সাইন ও মার্কিং পুরাতন ফুট ওভারব্রিজ মেরামত ও রক্ষণাবক্ষেণ ইত্যাদি।
সড়ক নিরাপত্তা নিশ্চিতকল্পে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের নেয়া উদ্যোগ ও চলমান কার্যক্রমের সাফল্য কামনা করে সংশ্লিষ্টদের দক্ষতা ও সততার সঙ্গে কাজ করার পরামর্শ দিয়ে অনুষ্ঠানের সমাপ্তি ঘোষনা করেন ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. জোবায়দুর রহমান।