গাজীপুর সিটি করপোরেশনের সাময়িক বরখাস্ত মেয়র জাহাঙ্গীর আলমকে পুনর্বহাল চেয়ে স্থানীয় সরকার মন্ত্রীর কাছে আবেদন করেছেন এই সিটির ৬১ জন কাউন্সিলর। মন্ত্রণালয়ে জমা দেয়া ওই আবেদনে তারা স্বাক্ষর করেছেন।
সচিবালয়ে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয় বিভাগে রোববার এই আবেদন জমা দেয়া হয়। এতে গাজীপুর সিটির উন্নয়ন ও আগামী নির্বাচনে বিজয় নিশ্চিতকরণের লক্ষ্যে জাহাঙ্গীর আলমকে মেয়রের দায়িত্ব ফিরিয়ে দেয়ার আবেদন জানানো হয়।
আবেদনে বলা হয়েছে, ‘জাহাঙ্গীর আলম নির্বাচিত কাউন্সিলর ও দলের নেতাকর্মীদের সঙ্গে আলোচনা করে গাজীপুর সিটির উন্নয়ন কার্যক্রম চালাতেন। কিন্তু বিগত ১৫ মাসে গাজীপুর সিটি করপোরেশনের প্যানেল মেয়র আসাদুর রহমান কিরনের স্বেচ্ছাচারিতা, অনিয়ম-দুর্নীতি ও সমন্বয়হীতা চরম সীমায় পৌঁছে গেছে। এর ফলে গাজীপুর সিটি করপোরেশন পুরোপুরি অকার্যকর হয়ে পড়েছে।
‘নির্বাচিত মেয়র জাহাঙ্গীর আলম সিটির উন্নয়নে যে ধারা চালু করেছিলেন বর্তমান প্যানেল মেয়রের (কাউন্সিলর) সমন্বয়হীনতা ও জনগণের চেয়ে নিজের উন্নয়নে অধিক মনোযোগী হওয়ার কারণে তা নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়েছে। এর ফলে লাখ লাখ নগরবাসী তাদের প্রাপ্য নাগরিক সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। কার্যত সিটি করপোরেশন অকার্যকর হয়ে পড়েছে। এতে সরকার ও দলের সুনাম নষ্ট হচ্ছে।’
আবেদনপত্রে আরও উল্লেখ করা হয়, ‘হাইকোর্টে প্যানেল মেয়র আসাদুর রহমান কিরনের বিরুদ্ধে অনিয়ম-দুর্নীতি ও দ্বৈত নাগরিকত্বসহ ২১টি বিষয় নিয়ে রিট হয়। ওই রিটের পরিপ্রেক্ষিতে হাইকোর্ট দুর্নীতি দমন কমিশনকে (দুদক) নির্দেশনা দিয়েছে।
‘উন্নয়নের চাকা সচল রাখার সংগ্রামে শরিক করতে জাহাঙ্গীর আলমকে মেয়রের দায়িত্বে ফিরিয়ে আনার জন্য আমরা আপনার কাছে বিশেষভাবে অনুরোধ জানাচ্ছি।’
গাজীপুর সিটির ১৯ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর তানভীর আহমেদ বলেন, ‘বিগত ৫০ বছরে যে উন্নয়ন হয়নি জাহাঙ্গীর আলম মেয়র থাকাকালে মাত্র তিন বছরেই তার চেয়ে বেশি উন্নয়ন করেছেন। তার অনুপস্থিতিতে সিটি করপোরেশনের উন্নয়নের গতি মন্থর হয়ে পড়েছে। জাহাঙ্গীর আলম জনগণের ভোটে নির্বাচিত মেয়র। তাই আমরা উন্নয়নের স্বার্থে এবং জনগণের ভোটের আমানত রক্ষায় জাহাঙ্গীর আলমকে মেয়র পদে দেখতে চাই।’
জাহাঙ্গীর আলম এ বিষয়ে বলেন, ‘জনগণ আমাকে ভোট দিয়ে মেয়র নির্বাচিত করেছেন। তাদের কাছে আমি দায়বদ্ধ। পাশাপাশি কাউন্সিলররাও নানা প্রত্যাশা দিয়ে জনগণের কাছে ভোট চেয়েছেন। অথচ গত ১৫ মাসে নিজ নিজ এলাকায় কাজ করতে না পারায় তাদেরও নাগরিকদের কথা শুনতে হচ্ছে।
‘কাউন্সিলররা আমাকে মেয়র হিসেবে চান। তারা সবাই জানেন আমাকে ষড়যন্ত্র করে দূরে রাখা হয়েছে। আর এটা প্রমাণও হয়েছে। তাই সিটি করপোরেশনের ৬১ জন কাউন্সিলর নিজ উদ্যোগে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে আবেদন করেছেন।’
প্রসঙ্গত, ২০২১ সালের সেপ্টেম্বরে জাহাঙ্গীর আলমের একটি অডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়। সেই ভিডিওতে বিতর্কিত মন্তব্য করায় ওই বছরের ১৯ নভেম্বর তাকে আওয়ামী লীগ থেকে বহিষ্কার করা হয়। তারই পরিপ্রেক্ষিতে ২৫ নভেম্বর তাকে মেয়র পদ থেকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়।
প্রায় দেড় বছর পর গত ১ জানুয়ারি এক চিঠির মাধ্যমে গাজীপুর সিটি করপোরেশনের বহিষ্কৃত মেয়র ও গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলমের বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করে নেয় আওয়ামী লীগ।