বান্দরবানের সদর উপজেলার টংকাবতী এলাকায় বিশেষ অভিযানে জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়ার প্রশিক্ষণ কমান্ডার দিদার হোসেনসহ ৯ জঙ্গিকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব।
এ সময় ৬টি দেশি বন্দুক ও একটি বিদেশি অস্ত্র, ৫টি কার্তুজ, দূরবীন, সুইজ গিয়ার, ইলেক্ট্রনিক সামগ্রী উদ্ধার করা হয়েছে।
আটকরা হলেন, পার্বত্য এলাকার প্রশিক্ষণ কমান্ডার কুমিল্লা সদরের দিদার হোসেন মাসুম, নারায়ণগঞ্জ সদরের আল আমিন সর্দার ওরফে আব্দুল্লাহ, ঢাকা কামরাঙ্গী চরের সাইনুন, ওরফে রায়হান, সিলেট বিরানী বাজারের তাহিয়াত চৌধুরী, ওরফে পাবেল, সিলেট শাহপরান এলাকার লোকমান মিয়া, কুমিল্লা লাকসাম এলাকার ইমরান হোসেন, ওরফে শান্ত, ঝিনাইদহ কোর্টচাদপুর এলাকার আমির হোসেন, বরিশাল সদরের আরিফুর রহমান, ময়মনসিংহ জেলার ফুলপুরের শামিম মিয়া।
র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র্যাব) আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন সোমবার সকালে জেলা শহরের মেঘলাস্থ র্যাব কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
র্যাবের মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক খন্দকার আল মঈন জানান, র্যাব প্রতিষ্ঠার পর থেকে জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাস মুক্ত বাংলাদেশ গড়তে কাজ করে যাচ্ছে, আর তারই ধারবাহিকতায় নতুন জঙ্গি সংগঠন ‘জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়ার’র বেশ কয়েকজন সদস্য পাহাড়ে অবস্থান করে সশস্ত্র প্রশিক্ষণ নিচ্ছে, এমন খবর পেয়ে র্যাব গত বছরের অক্টোবর মাস থেকে বান্দরবানে সন্ত্রাস দমনে কাজ করে যাচ্ছে। র্যাবের অভিযানে এরই মধ্যে বেশ কয়েকজন জঙ্গি ও পাহাড়ি বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠনের সদস্যকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে এবং তাদের নামে মামলা শেষে পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।
এ সময় র্যাবের মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক খন্দকার আল মঈন আরও জানান, পার্বত্য এলাকা থেকে জঙ্গি সংগঠন ‘জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়ার’র ও পাহাড়ি বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠনের সদস্যদের দমন না করা পর্যন্ত এ অভিযান চলবে।
সংবাদ সম্মেলনে র্যাবের গোয়ান্দা শাখার প্রধান লেফটেন্যান্ট কর্নেল মোহাম্মদ মশিউর রহমান, আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন, লেফটেন্যান্ট কর্নেল তানভীর মাহুম্মদ পাশাসহ সংবাদকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।
অন্যদিকে কুকি-চিন ন্যাশনাল আর্মি (কেএনএ) হেডকোয়ার্টার লে. পাবিক প্রেরিত বার্তায় জানান, আটক জঙ্গীদের প্রশিক্ষণ ও আশ্রয় দেয়ার কেএনএফ এর বিরুদ্ধে যে অভিযোগ তা সত্য নয়।
২০২০ সাল থেকে পাহাড়ের ১১টি সম্প্রদায়ের মধ্যে বম সম্প্রদায়ের কিছু বিপথগামী যুবক কুকি চিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট (কেএনএফ) নামে একটি সশস্ত্র সংগঠন গড়ে তুলে, আর পরবর্তীতে তাদের আশ্রয়ে সশস্ত্র প্রশিক্ষণে যুক্ত হয় সমতল থেকে আসা নব্য জঙ্গী সংগঠন জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারকিয়ার বেশ কিছু সদস্য। তাদের দমনে গত বছরের অক্টোবর মাস থেকে পাহাড়ে অভিযান চালাচ্ছে যৌথবাহিনীর বাহিনীর সদস্যরা।
সূত্রে জানা যায়, গত ৭ ফেব্রুয়ারি জেলার থানচি উপজেলার লোয়াংমুয়াল রেমাক্রি ব্রিজ সংলগ্ন এলাকায় টানা ১২ ঘণ্টা রুদ্ধশ্বাস অভিযানে র্যাব জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়ার দুর্ধর্ষ ১৭ জঙ্গি ও কুকি চিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট কেএনএফ এর ৩ সদস্যকে আটক করে। এ সময় র্যাবের অভিযানে বিপুল পরিমাণ দেশি ও বিদেশি অস্ত্র, বোমা তৈরির সরঞ্জামাদি, গোলাবারুদ ও নগদ ৭ লাখ টাকা উদ্ধার করা হয়। এর আগে জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়ার ৫৫ সদস্যকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল।
বান্দরবানের সীমান্ত এলাকায় জঙ্গী সংগঠন ও কুকি চিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট (কেএনএফ) এর বিরুদ্ধে নিরাপত্তা বাহিনীর যৌথ অভিযানের কারনে বম সম্প্রদায়ের অন্তত ৫০০জন সীমান্ত অতিক্রম করে মিজোরামে আশ্রয় নেয় এবং মারমা সম্প্রদায়ের ১৪০ জন রুমা সদরে আশ্রয় গ্রহণ করলে পরে তারা নিজের বাসায় ফিরে যায়।
গত বছরের ১৭ অক্টোবর থেকে শুরু হওয়া পর্যটক যাতায়াতে নিষেধাজ্ঞা রুমা উপজেলায় জারি আছে, এতে জেলায় পর্যটকের আগমন কমে যাওয়ায় বিরুপ প্রভাব পড়ছে পর্যটন শিল্পে।