রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) শিক্ষার্থীদের সঙ্গে পার্শ্ববর্তী এলাকার বাসিন্দা ও ব্যবসায়ীদের মধ্যে শনিবার গভীর রাত পর্যন্ত ব্যাপক সংঘর্ষের পর এলাকায় চরম উত্তেজনা বিরাজ করছে। ভাঙচুর আর অগ্নিসংযোগে লণ্ডভণ্ড অবস্থা বিনোদপুর বাজারের। এদিকে ক্যাম্পাসের ভেতরে থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে।
রাতের এই সংঘর্ষে শিক্ষার্থী ও স্থানীয়দের মিলিয়ে শতাধিক আহত হয়েছেন। তাদের মধ্যে রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন ৮৪ জন। সংঘর্ষ থামাতে দফায় দফায় রাবার বুলেট, টিয়ার সেলও নিক্ষেপ করে পুলিশ। টিয়ার সেল ও রাবার বুলেটের আঘাতে বেশ কিছু শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন। এদের মধ্যে গুরুতর অবস্থায় এক শিক্ষার্থীকে রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের (রামেক) আইসিইউতে ভর্তি করা হয়েছে।
রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের তথ্য অনুযায়ী, সংঘর্ষে আহত হয়ে মোট ৮৪ জন রামেকে ভর্তি হন। এদের মধ্যে বেশিরভাগই শিক্ষার্থী।
রামেক হাসপাতালে ভর্তি সমাজবিজ্ঞান বিভাগের ২০১৮-২০১৯ বর্ষের শিক্ষার্থী মশিউর রহমান বলেন, ‘শনিবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে বিনোদপুর গেট এলাকায় অবস্থান করছিলাম। এ সময় ক্যাম্পাসের ভেতরে হঠাৎ গুলি করে পুলিশ। অনেকগুলো গুলি লেগে আমি জ্ঞান হারিয়ে ফেলি। আমার বন্ধুরা আমাকে উদ্ধার করে রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করে। আমার পুরো শরীর জুড়েই বুলেটের চিহ্ন আছে। ডাক্তার ওষুধ ও স্যালাইন দিয়েছে। কিছুটা ভালো লাগছে।’
পাশেই চিকিৎসাধীন আশিক মাহমুদের শরীরে অন্তত ৩০টি বুলেটের চিহ্ন আছে। চক্ষু ওয়ার্ডে ভর্তি রয়েছেন আইন বিভাগের তিন শিক্ষার্থী। তাদের সবার চোখে ব্যান্ডেজ।
তাদের একজন বলেন, ‘কিছু বুঝে ওঠার আগেই গুলি চলে। এতে করে আমাদের চোখে গুলি লেগেছে। এখন চোখ খুব ব্যথা করছে।’
মাথায় গুলি লেগে আইসিইউতে চিকিৎসাধীন আছেন রাবি শিক্ষার্থী মো. রাকিব।
রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগের ভারপ্রাপ্ত চিকিৎসক ডা. জাহিদুল ইসলাম বলেন, ‘রাবি সংঘর্ষের ঘটনায় মোট ৮৪ জন ভর্তি হয়েছে। তাদের অধিকাংশ রাবি শিক্ষার্থী। এর পাশাপাশি পুলিশ ও অন্যান্য সাধারণ জনগণও আছে। তাদের বিভিন্ন ওয়ার্ডে চিকিৎসা চলছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘সাতজন শিক্ষার্থীর অবস্থা কিছুটা জটিল। তাদের শরীরে বুলেটের চিহ্ন আছে। বিশেষ করে তিন শিক্ষার্থীর চোখে রাবার বুলেট লেগেছে। এক শিক্ষার্থীর মাথায় বুলেট লেগেছে তাকে আইসিইউতে ভর্তি রাখা হয়েছে।’
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র উপদেষ্টা তারেক নূর বলেন, ‘রাবির ৬৪ জন শিক্ষার্থী হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে। এর বাইরেও অনেকেই প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়েছেন। আহতদের মধ্যে বেশিরভাগই ইটের আঘাতে আহত। অনেকেই আছে রাবার বুলেটে আহত।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা প্রাথমিকভাবে শিক্ষার্থীদের চিকিৎসার বিষয়টিকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়েছি। সেই সঙ্গে ক্যাম্পাসের শিক্ষার্থীদের শান্ত করার চেষ্টা করেছি। এই ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে মামলা করা হবে। সেই সঙ্গে ক্যাম্পাসে বহিরাগত প্রবেশ বন্ধের সিদ্ধান্তও নেয়া হবে।’
রাজশাহী মহানগর পুলিশ কমিশনার আনিসুর রহমান জানান, রাতে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে উভয় পক্ষকে শান্ত করতে টিয়ার সেল নিক্ষেপ করা হয়েছে। এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত কেউ অভিযোগ করেনি। তাই কোনো মামলা রেকর্ড হয়নি।
শনিবার সন্ধ্যার পর রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে বিনোদপুর বাজারের ব্যবসায়ী ও স্থানীয়দের সংঘর্ষ শুরু হয়। দুই পক্ষের মধ্যে ব্যাপক ইট, পাটকেল নিক্ষেপ, পাল্টাপাল্টি ধাওয়া হয়। রাবি পুলিশ বক্সে আগুন দেয়া হয়। বিনোদপুর বাজারের অন্তত ২৫ থেকে ৩০টি অস্থায়ী দোকান ভাঙচুর করা হয়। কয়েকটি দোকান আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেয়া হয়। এ সময় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ টিয়ার শেল ও রাবার বুলেট ছোঁড়ে। রাতে ক্যাম্পাসের বাইরে সাত প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন করা হয়। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে রোববার ও সোমবার বিশ্ববিদ্যালয়ের সব ক্লাস ও পরীক্ষা স্থগিত করেছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।