রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও বিনোদপুরের এলাকাবাসীর মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনার পর রোববার ও সোমবার বিশ্ববিদ্যালয়টির সব শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে বিনোদপুরে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) মোতায়েন করা হয়েছে।
শনিবার সন্ধ্যায় ৬টার দিকে এ সংঘর্ষ শুরু হয়। এ ঘটনায় শতাধিক শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন। তাদের মধ্যে ৩৮ জনকে রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
প্রত্যক্ষদর্শীদের ভাষ্য, সংঘর্ষের সময় বিনোদপুর বাজারের বেশ কিছু দোকানপাটে ভাংচুর ও অগ্নিংযোগের ঘটনা ঘটে। এ সময় একাধিক মোটরসাইকেল ভাংচুর করা হয়েছে। আগুন দেয়া হয়েছে বিনোদপুর গেট সংলগ্ন পুলিশ বক্সেও।
রাত ১০টার দিকে পরিস্থিতি কিছুটা শান্ত হলেও রাত সোয়া ১০টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা আবারও ক্যাম্পাসের বাইরে বেরিয়ে পড়ে। এসময় তারা বিনোদপুর বাজারে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করতে থাকে। পরে পুলিশ টিয়ারশেল ছুড়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। রাত পৌনে ১১টার দিকে বিনোদপুর এলাকায় ৭ প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন করা হয়।
রাজশাহীর বিনোদপুরে শনিবার স্থানীয়দের সঙ্গে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষের এক পর্যায়ে রাতে বিজিবি মোতায়েন করা হয়। ছবি: নিউজবাংলা
স্থানীয় সূত্র সংঘর্ষের নেপথ্যে দুটি কারণের কথা জানিয়েছে। একটি সূত্র বলছে, শনিবার বিকেলে বিনোদপুর বাস কাউন্টারের কর্মীদের সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের কয়েকজন শিক্ষার্থীর বাগবিতণ্ডা ও হাতাহাতি হয়। এ বিষয়ে কথা বলার জন্য সন্ধ্যা ৬টার দিকে সেখানে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি গোলাম কিবরিয়া উপস্থিত হলে স্থানীয়রা তার ওপর চড়াও হয়। এ সময় দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ বেধে যায়।
তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের আরেকটি সূত্র বলছে, বগুড়া থেকে ‘মোহাম্মদ’ নামের একটি বাসে রাজশাহী আসছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী আলামিন আকাশ। বাসে বসাকে কেন্দ্র করে তার সঙ্গে বাসের চালক শরিফুল ও সহকারী রিপনের কথা কাটাকাটি হয়। পরে বাসটি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিনোদপুর ফটকে পৌঁছলে রিপনের সঙ্গে ওই শিক্ষার্থীর আবার বাগবিতণ্ডা হয়।
এ সময় স্থানীয় এক দোকানদার এসে ওই শিক্ষার্থীর সঙ্গে তর্কে জড়ান। একপর্যায়ে উভয়ের মধ্যে ধাক্কাধাক্কির ঘটনা ঘটে। পরে শিক্ষার্থীরা ঘটনাস্থলে জড়ো হয়ে ওই দোকানদারের ওপর চড়াও হন। একপর্যায়ে স্থানীয় ব্যবসায়ীরা এক জোট হয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা চালান। তখন শিক্ষার্থীরাও তাদের পাল্টা ধাওয়া করেন।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক আসাবুল হক বলেন, ‘আমরা পরিস্থিতি শান্ত করার চেষ্টা করছি। ’
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক হুমায়ুন কবীর বলেন, ‘উদ্ভূত পরিস্থিতিতে সার্বিক দিক বিবেচনা করে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা কার্যক্রম আগামীকাল ও পরশু বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। ’
রাজশাহী মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত উপ কমিশনার রফিকুল আলম বলেন, ‘পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে পুলিশ চেষ্টা করে যাচ্ছে। ’