বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

খনন হচ্ছে ‘গড়ের খাল’, অবদান রাখবে অর্থনীতিতে

  •    
  • ১১ মার্চ, ২০২৩ ১৩:৫০

জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের প্রধান প্রকৌশলী শামীম হাসনাইন মাহমুদ বলেন, ‘৩১ দশমিক ৬ কিলোমিটার খাল খননে ব্যয় হচ্ছে ৭ কোটি ১২ লাখ টাকা। খালের মধ্যে এই অর্থ ব্যয়ের কারণে পরিবেশের ভারসাম্য ঠিক রাখার পাশাপাশি জীবন-জীবিকায় ব্যাপক ভূমিকা রাখবে। গাণিতিকভাবে যদি এই খালের অবদান হিসেব করা হয়, তাহলে প্রতি বছর কয়েক কোটি টাকার অবদান রাখবে খালটি।’

পৃথিবীর বৃহত্তম গ্রাম হবিগঞ্জের বানিয়াচং উপজেলার বানিয়াচংয়ের চারপাশ ঘিরে ১৯ দশমিক ২ কিলোমিটারের দৃষ্টিনন্দন খালটি এক সময় এখানকার ঐতিহ্য ছিল। স্থানীয়দের কাছে ‘গড়ের খাল’ নামে পরিচিত এটি। এই খালটির ওপর নির্ভর ছিল এ অঞ্চলের মানুষের জীবন-জীবিকা-অর্থনীতি।

সময়ের পরিক্রমায় দখল-দূষণে অস্তিত্ব সংকটে পড়েছে খালটি। ফলে বানিয়াচং উপজেলা শহর ও বিভিন্ন পাড়া মহল্লায় অল্প বৃষ্টিতেই সৃষ্টি হয় জলাবদ্ধতা। বোরো মৌসুমে সেচ সংকটে পড়েন হাজার হাজার কৃষক।

বানিয়াচংবাসীর দীর্ঘদিনের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে খালটি পুনরুদ্ধার ও খননের উদ্যোগ নেয় পানি উন্নয়ন বোর্ড। চলতি বছরের ১২ জানুয়ারি থেকে দুটি এক্সেভেটর দিয়ে খাল খনন কাজ চলছে। এরইমধ্যে ১৫ কিলোমিটার জায়গা খনন সম্পন্ন হয়েছে।

প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এই খালটি খননের ফলে অল্প বৃষ্টিতে জলাবদ্ধতা থেকে মুক্তির পাশাপাশি সেচ সুবিধা পাবেন কয়েক হাজার কৃষক। এলাকার আর্থসামাজিক উন্নয়নে বছরে কয়েক কোটি টাকার অবদান রাখবে খালটি।

জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ড জানায়, মোট ৩১ দশমিক ৬ কিলোমিটার খাল খনন করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এরমধ্যে বানিয়াচং উপজেলা সদরকে চারদিক থেকে ঘিরে রাখা ১৯ দশমিক ২ কিলোমিটার মূল ‘গড়ের খাল’। সেই সঙ্গে খনন করা হবে ১২ দশমিক ৪ কিলোমিটারের আরও ৫টি শাখা খাল। খননের পর সবুজায়নের জন্য একই প্রকল্পের অধীনে খালের দুই তীরে লাগানো হবে ৪ হাজার গাছ। মোট প্রকল্প ব্যয় ধরা হয়েছে ৭ কোটি ১২ লাখ টাকা।

সংশ্লিষ্টরা জানান, বানিয়াচংয়ের অধিকাংশ এলাকায় ড্রেনেজ ব্যবস্থা না থাকায় সামান্য বৃষ্টি হলেই উপজেলা সদরসহ প্রতিটি পাড়া মহল্লায় জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। খালটি খনন হলে সহজেই খাল দিয়ে বৃষ্টির পানি নিষ্কাশন হওয়ায় জলাবদ্ধতা থেকে মুক্ত পাবেন এলাকাবাসী।

কৃষি উৎপাদনে অমূল পরিবর্তন আনবে এই খাল। প্রতি বছর বর্ষার শেষে হাওরের পানি ধীর গতিতে নিষ্কাশন হওয়ায় পিছিয়ে যায় চাষাবাদ। খালটি খননের ফলে হাওরের পানি দ্রুত নিষ্কাশন হবে। একইভাবে বোরো মৌসুমে স্বল্প খরচে জমিতে সেচ দিতে পারবেন কৃষকরা। ফসল রক্ষা পাবে আগাম বন্যা থেকে। এমনকি এই খালের মাধ্যমে উৎপাদিত শস্য কম খরচে ও সহজে পরিবহন করতে পারবেন এলাকাবাসী।

৩১ কিলোমিটার খালজুড়ে তৈরি হবে দেশীয় মাছের অভয়াশ্রম। সবসময় খালে পানি থাকায় ওপরে উঠবে ভূগর্ভস্থ পানির স্তর। এতে ফাল্গুন-চৈত্র মাসে ভূগর্ভস্থ পানির সংকট দূর হবে। খালের দুই তীরে ৪ হাজার গাছ লাগানোর ফলে পরিবেশের ভারসাম্য ঠিক থাকার পাশাপাশি সেখানে কয়েক বছর পর তৈরি হবে পাখিদের অভয়াশ্রম।

বানিয়াচংয়ের বাসীয়াপাড়া গ্রামের চাঁন মিয়া বলেন, ‘কি খাল ছিল আর এখন কি হইল। এই খালকে ঘিরেই আমাদের বানিয়াচংবাসীর জীবন-জীবিকা চলতো। মাছ ধরা থেকে শুরু করে ব্যবসা-বাণিজ্য সবকিছু হতো এই খাল দিয়েই। এখন বৃষ্টির পানিও যেতে পারে না।’

তিনি আরও বলেন, ‘যেহেতু খালটি খনন হচ্ছে, আশা করি আমাদের জন্য এটি অনেক উপকারে আসবে। মাছ পাব, জমিতে সেচ দিতে পারব, জলাবদ্ধতা থাকবে না। এছাড়া, এই খালটি হলে আমাদের এলাকার সৌন্দর্য কয়েকগুণ বেড়ে যাবে।’

ব্যবসায়ী আতাউর রহমান বলেন, ‘এই খালটি বানিয়াচংয়ের ঐতিহ্য। আমাদের দীর্ঘদিনের দাবি ছিল খালটি উদ্ধার করে খনন করার। অবশেষে সেই দাবি পূরণ হচ্ছে। এই খাল খনন হলে এলাকার আর্থসামাজিক অবস্থার ব্যাপক পরিবর্তন হবে। বিশেষ করে কৃষি ও জলাবদ্ধতা নিরসনে বড় ভূমিকা রাখবে খালটি।’

জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের প্রধান প্রকৌশলী শামীম হাসনাইন মাহমুদ বলেন, ‘৩১ দশমিক ৬ কিলোমিটার খাল খননে ব্যয় হচ্ছে ৭ কোটি ১২ লাখ টাকা। খালের মধ্যে এই অর্থ ব্যয়ের কারণে পরিবেশের ভারসাম্য ঠিক রাখার পাশাপাশি জীবন-জীবিকায় ব্যাপক ভূমিকা রাখবে। গাণিতিকভাবে যদি এই খালের অবদান হিসেব করা হয়, তাহলে প্রতি বছর কয়েক কোটি টাকার অবদান রাখবে খালটি।’

তিনি আরও বলেন, ‘প্রকল্পের মেয়াদ ধরা হয়েছে ২০২২ সালের আগস্ট থেকে ২০২৩ সালের মে পর্যন্ত। তবে সার্ভেসহ নানা জটিলতায় সঠিক সময়ে কাজ শুরু করা সম্ভব হয়নি। এখন দ্রুত গতিতে খনন কাজ এগিয়ে চলেছে। আশা করি মেয়াদের আগেই কাজ সম্পন্ন করতে পারব।’

এ বিভাগের আরো খবর