বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

সিদ্দিকবাজারে বিস্ফোরণ: স্বামীর ঘরে যাওয়ার আগেই বিধবা জিয়াসমিন

  •    
  • ১০ মার্চ, ২০২৩ ১৮:৪০

নিহত শান্তর মা তাসলিমা কাঁদছেন আর বলছেন, ‘ আমি এখন এই পোলার বউরে কী করুম? আমার তো আরেকটা পোলাও নাই যে তার লাইগা রাইখা দিমু। আর কে আমার অসুস্থ স্বামীরে দেখব? আল্লাহ আমারে এ কোন পরীক্ষার মইধ্যে ফালাইল?’

‘কোরবানি ঈদের পর স্বামীর ঘরে যামু, বিয়ে হইছে পাঁচ মাস আগে। আমার স্বামীর স্বপ্ন ছিলো টাহা পয়সা যোগাড় কইরা বড় অনুষ্ঠান কইরা আমারে ঘড়ে তোলবো। কিন্তু আমার ভাগ্যে সুখ নাই। স্বামীর ঘরে যাওনের আগেই বিধবা হইয়া গেলাম। ’

শুক্রবার সকালে বিলাপ করতে করতে কথাগুলো বলছিলেন রাজধানীর গুলিস্তানের সিদ্দিকবাজারে বিস্ফোরণে নিহত সিরামিকস্ দোকানের কর্মচারী রবিন হোসেন শান্তর নববধূ স্ত্রী জিয়াসমিন (১৮)।

বিস্ফোরণে ধসে পড়া ভবনের ধ্বংসস্তূপ থেকে বিকেল ৫টার দিকে শান্তর লাশ উদ্ধার করে ফায়ার সার্ভিসের উদ্ধারকর্মীরা। শান্তর চাচাতো ভাই শাহাদাত হোসেন ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে গিয়ে তার লাশ শনাক্ত করেন।

নিহত ২৩ বছর বয়সী শান্ত শরীয়তপুরের গোসাইরহাট উপজেলার নাগেরপাড়া ইউনিয়নের ৭ নং ওয়ার্ডের পূর্ব নাগেরপাড়া গ্রামের সোহরাব সরদারের ছেলে।

স্বজনদের ভাষ্য, নারায়ণগঞ্জের সরকারি তুলারাম কলেজ থেকে উচ্চমাধ্যমিক পাস করার পর সংসারের হাল ধরতে সিদ্দিকবাজারের একটি সিরামিকসের দোকানে সাত হাজার টাকা বেতনে চাকরি নেন শান্ত। ওই টাকায় তাদের সংসার ও মস্তিষ্ক রক্তক্ষরণে আক্রান্ত বাবার চিকিৎসার খরচও চলত।

অসুস্থ বাবা-মাকে দেখাশোনার জন্য পাঁচ মাস আগে কাবিনের মাধ্যমে জিয়াসমিনকে বিয়ে করে শান্ত। কিন্তু অর্থাভাবের কারণে বিয়ের অনুষ্ঠান করতে না পারায় বউ ঘড়ে তুলে আনতে পারেননি তিনি। বিয়ে এবং বাবার অসুস্থতার কথা শুনে রোজার পর বেতন বৃদ্ধি ও ঈদুল আজহার পর কিছু টাকা লোন দেয়ার কথা জানিয়েছিলেন সিরামিকস্ দোকানের মালিক। শান্তর আশা ছিল যে, তখন এলাকার মুরুব্বিদের দাওয়াত দিয়ে অনুষ্ঠান করে জিয়াসমিনকে ঘরে তুলবেন। কিন্তু সিদ্দিক বাজারের বিস্ফোরনে সব পরিকল্পনা শেষ হয়ে গেছে। সবাই এখানে বাকরুদ্ধ।

শান্তর বাবা সোহরাব সরদার বলেন, ‘আমার একটা মাত্র পোলা (ছেলে) আছিল। আল্লায় আমারে কোনো মাইয়া দেয়নাই। অনেক কষ্ট কইরা খাইয়া, না খাইয়া শান্তরে মানুষ করছি। সিরামিকের দোকানে যেই ৭ হাজার টাহা পাইত পুরাডাই আমাগো পাডাইয়া দিত। হেই টাহা দিয়াই আমার বুড়া-বুড়ি চলতাম, আমি স্ট্রোকের রোগী হেই টাহা দিয়া ওষুধ কিনতাম। আল্লায় আমার পোলারে লইয়া গেল। কে অহন ওষুধ কেনার টাহা দিব? কে আমাগো খাওয়াইবো?’

নিহত শান্তর মা তাসলিমা কাঁদছেন আর বলছেন, ‘ আমি এখন এই পোলার বউরে কী করুম? আমার তো আরেকটা পোলাও নাই যে তার লাইগা রাইখা দিমু। আর কে আমার অসুস্থ স্বামীরে দেখব? আল্লাহ আমারে এ কোন পরীক্ষার মইধ্যে ফালাইল?’

শান্তর প্রতিবেশী শরিফুল ইসলাম খালাসি বলেন, ‘শান্তর বাবা কিছু টাকা পয়সা জমিয়ে উপজেলার নাগেরপারায় ঘর উঠানোর জন্য পাঁচ শতাংশ জমি কিনছিলেন। শান্তকে ওই জমিতেই দাফন করা হয়েছে। এখন ঘর বানানোর জায়গাও থাকল না। এখন এই পরিবারটি কীভাবে চলবে বুঝতে পারছি না।’

গোসাইরহাট উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা কাফী বিন কবির বলেন , ‘শান্তর মৃত্যুটি খুব দুঃখজনক এবং মর্মান্তিক। খুব শিগগিরই খাদ্য সামগ্রী নিয়ে তার বাড়িতে যাব। তার বিষয়ে একটি প্রতিবেদন তৈরি করে প্রতিবেদনটি দুর্যোগ ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে। সেখান থেকে অর্থ বরাদ্দ আসলে, আমরা তার পরিবারের হাতে তুলে দেব। তবে আমাদের ইচ্ছা আছে ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বরাদ্দ পেতে দেরি হলেও, মন্ত্রণালয়ে প্রতিবেদন পাঠানোর পরই উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে আমরা সেই অর্থ পরিবারটিকে প্রদান করব।’

এ বিভাগের আরো খবর