ছোটদের নোবেল প্রাইজখ্যাত ‘বিশ্ব শিশু পুরস্কার’-এর জন্য নির্বাচিত হয়েছেন বাংলাদেশের স্থপতি মোহাম্মদ রেজোয়ান। এবার বিশ্বের লাখ লাখ শিশু ‘বিশ্ব শিশু পুরস্কার’ বিজয়ী নির্বাচনের জন্য বৈশ্বিক ভোটাভুটিতে অংশ নেবে।
সারা বিশ্বের শিশুদের প্রতিনিধিদের নিয়ে গঠিত বিচারকমণ্ডলী ইতোমধ্যে নৌকাস্কুলের উদ্ভাবক রেজোয়ানসহ শিশুদের কল্যাণে নিবেদিত আরও দুই কীর্তিমান ব্যক্তিকে ‘শিশু অধিকার নায়ক’ নির্বাচন করেছে। তারা হলেন- কানাডার সিন্ডি ব্ল্যাকস্টক ও ভিয়েতনামের থিচ নু মিন তু।
এবার লাখ লাখ শিশুর বৈশ্বিক ভোটাভুটির মাধ্যমে এই তিনজনের একজনকে সেরা নির্বাচনের পালা, যার হাতে উঠবে ‘বিশ্ব শিশু পুরস্কার (ডাব্লিউসিপি), ২০২৩’।
সুইডেনভিত্তিক এই পুরস্কারটিকে বিশ্বজুড়ে সংবাদমাধ্যমগুলোতে ‘ছোটদের নোবেল প্রাইজ’ আখ্যা দেয়া হয়।
এ পর্যন্ত যারা এই পুরস্কারের জন্য মনোনীত হয়েছেন তারা গত প্রায় ১০০ বছর ধরে বিশ্বের সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের অধিকার রক্ষার জন্য কাজ করে চলেছেন। বাংলাদেশের স্থপতি মোহাম্মদ রেজোয়ান তাদেরই একজন। গত সিকি শতাব্দী ধরে তিনি বাংলাদেশে জলবায়ু বিপর্যয়ের কারণে ক্রমবর্ধমান বন্যা ও দারিদ্র্য সত্ত্বেও সব শিশু, বিশেষ করে সুবিধাবঞ্চিত কন্যাশিশুদের স্কুলে পড়ালেখা শেখার অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য সংগ্রাম করে চলেছেন।
নৌকা স্কুলে পাঠদান কার্যক্রম চলাকালে উদ্যোক্তা মোহাম্মদ রেজোয়ান। ছবি: নিউজবাংলা
রেজোয়ান ও তার প্রতিষ্ঠান ‘সিধুলাই স্ব-নির্ভর সংস্থা’ শিশুদের জন্য ২৬টি ভাসমান স্কুল প্রতিষ্ঠা করেছেন, যেগুলো দেশ-বিদেশে খ্যাতি পেয়েছে রেজোয়ানের নৌকা স্কুল নামে। বিশেষভাবে ডিজাইনকৃত নৌকায় ডিজিটাল শ্রেণিকক্ষের পাশাপাশি রয়েছে ভাসমান লাইব্রেরি ও স্বাস্থ্যসেবা ক্লিনিক। কিশোরী-তরুণীদের জন্য রয়েছে কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র। রেজোয়ানের উদ্ভাবিত ভাসমান স্কুলের এই ধারণাটি বাংলাদেশের গণ্ডি পেরিয়ে পৃথিবীর আরও কয়েকটি দেশে বাস্তবায়ন হয়েছে।
সিনডি গত ৩০ বছর ধরে আদিবাসী শিশুদের সুশিক্ষা, সুস্বাস্থ্য, ঘরে নিরাপদে বেড়ে ওঠা এবং নিজের ভাষা ও সংস্কৃতি নিয়ে গর্ব করার অধিকার আদায়ের জন্য সংগ্রাম করছেন।
আর বৌদ্ধ নান থিচ নু এতিম ও অসহায় পরিবারের শিশুদের রক্ষায় প্রায় ৪০ বছর ধরে সংগ্রাম করে চলেছেন।
২০০০ সাল থেকে এই পুরস্কারের মাধ্যমে বিশ্বের ৪ কোটি ৬০ লাখ শিশু জেনে আসছে ‘শিশু অধিকার নায়ক’রা কীভাবে সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের জন্য কাজ করে যাচ্ছেন। পরে এই শিশুরাই বৈশ্বিক ভোটাভুটিতে অংশ নিয়ে তিনজন শিশু অধিকার নায়কের মধ্য থেকে একজনকে বিশ্ব শিশু পুরস্কারের জন্য নির্বাচন করে।
আগামী ৪ অক্টোবর সুইডেনের মেরিফ্রেডে গ্রিপশোলম প্রাসাদে এবারের ২০তম বিশ্ব শিশু পুরস্কার প্রদান অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের মোহাম্মদ রেজোয়ানসহ তিনজন শিশু অধিকার নায়ককে সম্মাননা দেয়া হবে। অনুষ্ঠানের হোস্ট হিসেবে থাকবে ১২টি দেশের শিশুরা। পুরস্কার প্রদান করার কাজে সেখানে উপস্থিত থেকে শিশুদের সহযোগিতা করবেন সুইডেনের রানী সিলভিয়া।
এই পুরস্কারের অর্থমূল্য সুইডিশ মুদ্রায় ৫ লাখ ক্রোনা, যা প্রায় ৫০ লাখ টাকার বেশি। এই অর্থ তিনজন শিশু অধিকার নায়ককে ভাগ করে দেয়া হবে, যা তাদের কাজে সহায়তা করবে। এভাবে এই অর্থ সেই ২০০০ সাল থেকে বিশ্বের লাখ লাখ অসহায় শিশুর জীবনমান উন্নয়নে অবদান রেখে চলেছে।
মর্যাদাশীল এই পুরস্কারের পৃষ্ঠপোষকদের মধ্যে রয়েছেন মালালা ইউসুফজাই, প্রয়াত নেলসন ম্যান্ডেলা ও ডেসমন্ড টুটু, রানী সিলভিয়াসহ সুইডেনের বেশ কয়েকজন সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রী। তাছাড়া এই ‘বিশ্ব শিশু পুরস্কার’ প্রোগ্রামে ১২০টি দেশের ৭৬ হাজার স্কুল ও ৮৪৯টি সংগঠনের সহযোগিতা রয়েছে।