রাজধানীর গুলিস্তানের সিদ্দিকবাজারে যে ভবনে বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে, এর বেজমেন্টে থাকার কথা ছিল পার্কিং কিন্তু একসময় সেখানে ছিল রান্নার ঘর। সর্বশেষ সেখানেই বানানো হয়েছিল দোকান।
ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) অতিরিক্ত কমিশনার কে এন রায় নিয়তি বৃহস্পতিবার দুপুরে এ তথ্য দিয়েছেন নিউজবাংলাকে।
তিনি জানান, কুইন সেনেটারী মার্কেট নামের ভবনটি এক সময় কুইন ক্যাফে ছিল। ভবনটির বেইজমেন্টে পার্কিংয়ের কথা থাকলেও সেখানে এক সময় রান্নাঘর ছিল। আর একতলায় ছিল খাবারের হোটেল। এই রান্নাঘরে কমার্শিয়াল গ্যাসের বড় লাইন ছিল। পরে লিখিতভাবে তিতাসের কাছে এই লাইন বুঝিয়ে দেয়া হয়।
পুলিশের এই কর্মকর্তা জানান, বাংলাদেশ সেনেটারি নামের একটি কমার্শিয়াল প্রতিষ্ঠানে সেখানে স্যানেটারি মালামাল বিক্রি করা হতো। আন্ডারগ্রাউন্ডে ১৮০০ স্কয়ার ফিটের দোকানটির ছিল কাচে ঘেরা। বড় বড় দুটি এসিতে ব্যবহার হচ্ছিল এ দোকানে। এ আন্ডারগ্রাউন্ডে আরো আছে একটি বড় পানির ট্যাংকি। সাত তলা ভবনের কোথায় সুয়ারেজ সেপটিক ট্যাংক, তা ভবনের মালিকরা নিশ্চিত না।
পুলিশ বলছে, বেজমেন্টে কার পার্কিং থাকলে বাতাসের ভেন্টিলেশন থাকত। কোনো গ্যাস জমা হতো না। বিস্ফোরণও হয়তো হতো না। সাত তলা ভবনের বেজমেন্টসহ তিনটি ফ্লোরের কমার্শিয়াল লোকজন, বাসা বাড়ির লোকজনের পয়োবর্জ্য যেখানে জমা হয় দীর্ঘ সময়। সেই জায়গা পরিষ্কার না করায় সেখানেও বায়োগ্যাসের জন্ম হতে পারে, যা বিভিন্ন কারণে বিস্ফোরিত হয়ে ব্যাপক ক্ষতি করে।
এক সময় এই বেজমেন্টের রান্নাঘরে কমার্শিয়াল বড় লাইনে গ্যাস সরবরাহ করা হতো, যা পরবর্তীতে বন্ধ করে দেয়া হয়। কিন্তু বাড়ির অন্যান্য ফ্লোরের ডোমেস্টিক লাইন এখনো চলমান। ফলে এই লাইন সম্পূর্ণ বন্ধ না হয়ে সেখান দিয়েও তিতাস গ্যাস লিক হতে পারে। কোনভাবে জমা গ্যাসে স্পার্কের মাধ্যমে বিস্ফোরণের হতে পারে।
পুলিশ জানিয়েছে, ভবন মালিকদের তথ্য মতে, মূল ক্ষতিগ্রস্ত ভবন এবং তার উত্তরপাশে ব্র্যাক ব্যাংকের ভবনের মাঝখানে সরু একটি গলি আছে। এ গলিতে পয়োবর্জ্য পদার্থের সেপটিক ট্যাংকি, এসির আউটার ইত্যাদি অবস্থিত। বিস্ফোরণে সেপটিক ট্যাংকের পাশের দেয়ালগুলো সম্পূর্ণ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। পয়োবর্জ্য পদার্থের বায়ো গ্যাসের বিস্ফোরণে এমনটি হতে পারে। ভবনটিতে যেসব দোকান ছিল সেগুলোতে থাকা এসি সার্ভিসিং না করালে বা ত্রুটিপূর্ণ থাকলে তা থেকেও বিস্ফোরণ হতে পারে।
পুলিশের তথ্য বলছে, ভবনটিতে সার্বক্ষণিক নজরদারি ও সিসি ক্যামেরার সার্ভিলেন্স ছিল। ফলে বিপুল ক্ষয়ক্ষতির জন্য যে পরিমাণ বিস্ফোরক প্রয়োজন তা এখানে সবার অজান্তে জমা রাখা প্রায় অসম্ভব। এখনো পর্যন্ত বিস্ফোরক বা সেবুট্যাজের কোনো আলামত সেখানে পাওয়া যায়নি।
অতিরিক্ত কমিশনার কে এন রায় নিয়তি জানান, ভবনটির বিভিন্ন ফ্লোরের বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানে সিসি ক্যামেরা ছিল। সিসি ক্যামেরার ডিভিআর থেকে ফুটেজ সংগ্রহ করার চেষ্টা চলছে। ভবনের মালিক, দোকানের মালিকদেরকে জিজ্ঞাসাবাদ করে বিস্ফোরণের কারণ জানা চেষ্টা অব্যাহত আছে।
মঙ্গলবার বিকেল পৌনে পাঁচটার দিকে গুলিস্তানে বিআরটিসি বাস কাউন্টারের কাছে সিদ্দিকবাজারের একটি ভবনে ভয়াবহ বিস্ফোরণ ঘটে। এতে পাশাপাশি দুটি বহুতল ভবন ক্ষতিগ্রস্ত হয়। একটি ভবন সাততলা, আরেকটি পাঁচতলা।
এর মধ্যে সাততলা ভবন কুইন টাওয়ারের বেজমেন্ট, প্রথম ও দ্বিতীয় তলা বিধ্বস্ত হয়েছে। এতে আহত হয়েছেন অনেকে। ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল, পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিস সূত্রে বিস্ফোরণের ঘটনায় মঙ্গলবারই ১৮ জন নিহতের তথ্য নিশ্চিত হওয়া যায়। পরে বুধবার দুজন এবং বৃহস্পতিবার সকালে আরেকজনের মরদেহ উদ্ধার হয় ওই ধ্বংসস্তূপ থেকে।