বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

গুলিস্তানে বিস্ফোরণ: ভবনের দুই মালিক, দোকান মালিককে গ্রেপ্তার

  •    
  • ৯ মার্চ, ২০২৩ ১৫:৪৭

ডিএমপি ডিবির প্রধান হারুন অর রশীদ জানান, ভবনে বিস্ফোরণের ঘটনায় তিনজনকে হেফাজতে নিয়েছিল পুলিশ, যাদের পরবর্তী সময়ে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। গ্রেপ্তারকৃতদের মধ্যে ওয়াহিদুর রহমান ও মশিউর রহমান ভবনের মালিক। আবদুল মোতালেব মিন্টু ওই ভবনে ‘বাংলাদেশ স্যানিটারি’ নামের যে দোকান ছিল, তার মালিক।

রাজধানীর গুলিস্তানের নর্থ সাউথ রোডে মঙ্গলবার বিকেলে প্রাণঘাতী বিস্ফোরণ হওয়া ‘ক্যাফে কুইন টাওয়ার’ নামের ভবনের দুই মালিক ও সেখানকার একটি দোকানের স্বত্বাধিকারীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।

ভবনটিতে বিস্ফোরণে বৃহস্পতিবার দুপুর পর্যন্ত ২২ জনের প্রাণহানি হয়। আহত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন অনেকে।

গ্রেপ্তারের বিষয়টি নিয়ে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশনস বিভাগ বৃহস্পতিবার সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে।

এতে ডিএমপি ডিবির প্রধান হারুন অর রশীদ জানান, ভবনে বিস্ফোরণের ঘটনায় তিনজনকে হেফাজতে নিয়েছিল পুলিশ, যাদের পরবর্তী সময়ে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। গ্রেপ্তারকৃতদের মধ্যে ওয়াহিদুর রহমান ও মশিউর রহমান ভবনের মালিক। আবদুল মোতালেব মিন্টু ওই ভবনে ‘বাংলাদেশ স্যানিটারি’ নামের যে দোকান ছিল, তার মালিক।

তিনি বলেন, ‘রাজধানীর গুলিস্তানের সিদ্দিকবাজার এলাকায় বিস্ফোরণের ঘটনায় ২১ জনের প্রাণ গেছে। আহত হয়েছে শতাধিক। এই ঘটনায় একটি অপমৃত্যুর মামলা হয়েছে। ঘটনার তদন্ত করছে ডিবি, সিটিটিসি, র‌্যাবসহ অন্যান্য সংস্থা।

‘ওই বিস্ফোরণের ঘটনার কী কারণ তা উদঘাটনে আমরা ভবনের মালিক, দোকান মালিকসহ বেশ কয়েকজনকে হেফাজতে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করি। ঘটনাস্থল পরিদর্শন করা হয়। ঘটনাটি ডিবি পুলিশ শুরু থেকে গুরুত্বের সঙ্গে তদন্ত করছে। আমরা তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছি।’

ডিএমপি ডিবির প্রধান বলেন, “সিদ্দিক বাজারের যে ভবনটিতে বিস্ফোরণ ঘটে, তার নাম কুইন স্যানিটারি মার্কেট। একসময় এটার নাম ছিল ‘কুইন ক্যাফে’। ১০ তলা ভবনের প্ল্যান করা হলেও ১৯৯২ সাল পর্যন্ত বেইজমেন্ট ও এক তলা কমপ্লিট ছিল। এর বেইজমেন্টে ছিল রান্নাঘর আর এক তলায় ছিল খাবারের হোটেল। এই রান্নাঘরে কমার্শিয়াল গ্যাসের বড় লাইন ছিল, যা পরে লিখিতভাবে তিতাসের কাছে সারেন্ডার করা হয়।”

ভবন নিয়ে তিনি বলেন, ‘২০০৪ সালে ভবনটির সাত তলা পর্যন্ত কমপ্লিট করা হয়। বর্তমানে একটি আন্ডারগ্রাউন্ড বেইজমেন্টসহ সাত তলা পর্যন্ত ভবনটি কমপ্লিট আছে। ভবনটির প্রকৃত মালিক মরহুম হাজী মোহাম্মদ রেজাউর রহমান। ২০১১ সালে তার মৃত্যুতে তার তিন ছেলে, দুই মেয়ে এবং স্ত্রী বর্তমানে ভবনটির মালিক।’

গ্রেপ্তারদের জিজ্ঞাসাবাদ ও ভবন পরিদর্শন পরবর্তী পর্যবেক্ষণ সম্পর্কে তিনি বলেন, “ভবনটির বেইজমেন্টে পার্কিংয়ের কথা থাকলেও সেখানে একসময় রান্নাঘর ছিল। বর্তমানে ‘বাংলাদেশ স্যানিটারি’ নামক একটি কমার্শিয়াল প্রতিষ্ঠানে স্যানিটারি মালামাল বিক্রি করা হয়। প্রায় ১ হাজার ৮০০ স্কয়ার ফিটের এ আন্ডার গ্রাউন্ডে যা সম্পূর্ণটাই গ্লাসে ঘেরা। বড় বড় দুটি এসিতে ঠান্ডা করা হয় এ স্যানিটারি দোকান।

“ভবনটির আন্ডারগ্রাউন্ডে আরও আছে একটি বড় পানির ট্যাংকি। সাত তলা ভবনের কোথায় স্যুয়ারেজ সেপটিক ট্যাংক অবস্থিত, তা ভবনের মালিকগণ নিশ্চিত না। ধারণা করা হয় উত্তর পাশের ভবনের সাথে এ ভবনের যে আড়াই/তিন ফিট গলি আছে, সেখানেই দুই ভবনের সেপটিক ট্যাংকি অবস্থিত।”

পর্যবেক্ষণ

সংবাদ সম্মেলনে ভবনটি নিয়ে আটটি পর্যবেক্ষণ তুলে ধরেন হারুন অর রশীদ।

১. বেইজমেন্টে কার পার্কিং থাকলে বাতাসের ভেন্টিলেশন থাকত। কোনো গ্যাসের জমা হতো না। বিস্ফোরণও হয়তো হতো না।

২. সাত তলা ভবনের বেজমেন্টসহ তিনটি ফ্লোরের কমার্শিয়াল লোকজন, বাসাবাড়ির লোকজনের পয়োবর্জ্য যেখানে জমা হয়, দীর্ঘ সময় সেই জায়গা পরিষ্কার না করায় সেখানেও বায়োগ্যাসের জন্ম হতে পারে, যা বিভিন্ন কারণে বিস্ফোরিত হয়ে ব্যাপক ক্ষতির সৃষ্টি করে।

৩. একসময় এ বেজমেন্টের রান্নাঘরে কমার্শিয়াল বড় লাইনে গ্যাস সরবরাহ করা হতো, যা পরবর্তী সময়ে বন্ধ করে দেয়া হয়, কিন্তু বাড়ির অন্যান্য ফ্লোরের ডোমেস্টিক লাইন এখনও চলমান। ফলে এই লাইন সম্পূর্ণ বন্ধ না হয়ে সেখান দিয়েও তিতাস গ্যাস লিক হতে পারে। কোনোভাবে জমা গ্যাসে স্পার্কের মাধ্যমে বিস্ফোরণের হতে পারে।

৪. ভবন মালিকদের তথ্য অনুযায়ী, মূল ক্ষতিগ্রস্ত ভবন এবং তার উত্তর পাশে ব্র্যাক ব্যাংকের ভবনের মাঝখানে সরু একটি গলি আছে। এ গলিতে পয়োবর্জ্য পদার্থের সেপটিক ট্যাংকি, এসির আউটার রয়েছে। বিস্ফোরণে সেপটিক ট্যাংকের পাশের দেয়ালগুলো সম্পূর্ণ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। পয়োবর্জ্য পদার্থের বায়ো গ্যাসের বিস্ফোরণে এমনটি হতে পারে।

৫. ভবনটির আন্ডারগ্রাউন্ড বা বেজমেন্টে বড় একটি স্যানেটারি দোকান, নিচ তলায় পাঁচটি দোকান, দোতলাতে কাপড়ের দুটি দোকান ছিল, যেগুলোর জন্য অনেক কাচ এবং ইন্টেরিয়রের কাজ করা হয় এবং পাওয়ারফুল এসি ব্যবহার করা হয়। এসিগুলোকে সময়ে সময়ে সার্ভিসিং না করালে বা ত্রুটিপূর্ণ থাকলে তা থেকেও বিস্ফোরণের কারণ হতে পারে, যেটা ২/৩ বছর আগে গুলশানে আরব আমিরাতের ভিসা সেন্টারে ঘটেছিল।

৬. ভবনটি কোনো পরিত্যক্ত পাবলিক স্পেস বা ভবন নয়। ব্যক্তি মালিকানাধীন। বিভিন্ন ব্যবসায়ীর সার্বক্ষণিক নজরদারি ও সিসি ক্যামেরার সার্ভেইল্যান্সে ছিল এটি। ফলে বিপুল ক্ষয়ক্ষতির জন্য যে পরিমাণ বিস্ফোরক প্রয়োজন, তা এখানে সবার অজান্তে জমা রাখা প্রায় অসম্ভব।

৭. বিস্ফোরণের প্রকৃত কারণ সম্পর্কে ফায়ার সার্ভিস, বাংলাদেশ সেনাবাহিনী, ঢাকা মহানগরীর সিটিটিসির বোম্ব ডিসপোজাল টিম আলাদা আলাদাভাবে তদন্ত করছে। বিভিন্ন দিক পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে তারা একটা যৌক্তিক সিদ্ধান্তে উপনীত হয়ে রিপোর্ট দেবেন। তাতেই প্রকৃত কারণটি জানা যাবে, তবে এখনও পর্যন্ত বিস্ফোরক বা সেবুট্যাজের কোনো আলামত সেখানে পাওয়া যায়নি।

৮. ভবনটির বিভিন্ন ফ্লোরের বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানে সিসি ক্যামেরা ছিল। সিসি ক্যামেরার ডিভিআর থেকে ফুটেজ সংগ্রহ করার চেষ্টা চলছে। ভবনের মালিক, দোকানের মালিকদের জিজ্ঞাসাবাদ করে বিস্ফোরণের কারণ জানার চেষ্টা অব্যাহত আছে।

ভবন মালিক ও যারা ভাড়া নিয়ে সেখানে ব্যবসা ও বসবাস করে আসছিল তারা ঘটনার দায় এড়াতে পারে না দাবি করে হারুন বলেন, ‘সেপটিক ট্যাংকি অপরিষ্কার রাখা, এসি মেরামত না করা, গ্যাসের লাইন বন্ধ না রাখার দায় এড়ানো যায় না। ভেন্টিলেশন ব্যবস্থা ছিল না, পার্কিং স্থানও ভাড়া দেয়া ছিল। সব মিলিয়ে বিল্ডিং কোড মানা হয়নি। এ জন্য তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছি।’

এ বিভাগের আরো খবর