রাজধানীর গুলিস্তানের নর্থ সাউথ রোডে মঙ্গলবার বিকেলে বিস্ফোরণে মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত ‘ক্যাফে কুইন টাওয়ার’ ভাঙার বিষয়ে এখনই কোনো সিদ্ধান্ত নেয়া হবে না বলে জানিয়েছে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক)।
দুই দিন আগে ভবনটিতে বিস্ফোরণে ২২ জনের প্রাণহানি হয়। আহত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন অনেকে।
ভবনের সামনে বৃহস্পতিবার দুপুরে রাজউকের টেকনিক্যাল টিমের আহ্বায়ক ও সদস্য প্রকৌশলী শামসুদ্দিন আহমেদ চৌধুরী সাংবাদিকদের বলেন, ‘প্রথম কাজ হলো ভবনটিকে স্থিতিশীল অবস্থায় আনা। এরপর ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যাসেসমেন্ট করে সিদ্ধান্ত নিতে হবে ভবনটি ভাঙা হবে নাকি সংস্কার করা হবে। কারণ আমাদের এটা নিশ্চিত করতে হবে, ভবনটি যেন হুড়মুড় করে ভেঙে না পড়ে। এরপর সিদ্ধান্ত নেয়া যাবে কী করা হবে।
‘কারণ ভেতরে ঝুঁকি থাকায় ফায়ার সার্ভিস কাজ করতে পারছে না, তবে সাপোর্ট পিলার কিংবা পাইপ দিয়ে ভবনের ওজন ছড়িয়ে দিতে পারলে সবাই নিরাপদে কাজ করতে পারবে। পানির লাইন ভেঙে গেছে; প্রচুর পানি জমছে। সবকিছু মিলিয়ে ভবনটি স্থিতিশীল করতে পারলে সব ধরনের কাজ করা যাবে।’
ভবনের ৯টি কলাম বা পিলার মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘এই ভবনটিতে ২৪টি কলাম বা পিলার রয়েছে। এর মধ্যে সামনের দিকের ৯টি পিলার সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। কোনো কোনো পিলারের গোড়ায় ঢালাই সরে গিয়েছে। রড বেঁকে গেছে। ২ হাজার ৭০০ স্কয়ার ফিটের ভবনটি অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ।’
ঝুঁকিপূর্ণ ভবনটি স্থিতিশীল করতে যে যন্ত্রপাতি দরকার, রাজউকের সেগুলো আছে কি না জানতে চাইলে এ কর্মকর্তা বলেন, ‘এটার জন্য বেশি যন্ত্রপাতির দরকার নেই। আমাদের টেকনিক্যাল টিম এসেছে। আমরা আজই স্থিতিশীল অবস্থায় আনার জন্য কাজ শুরু করব এবং এক দিনের মধ্যেই করা সম্ভব।
‘নির্মাণ সামগ্রী আসলেই আমরা কাজ শুরু করব। এই ভবনটি যদি ভাঙতে হয়, তাহলেও এটাকে আগে কলামগুলো ঠিক করে স্থিতিশীল অবস্থায় আনতে হবে। কারণ আপনারা জানেন যে, ভবন ওপর থেকে ভাঙতে হয়।’
ভবনের নির্মাণসংক্রান্ত নথি পাওয়া গেছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এই ভবনটি কত সালে নির্মাণ হয়েছে, এই বিষয় সঠিক তথ্য পাওয়া যায়নি। একবার জানা গেছে ৮৫ সালের দিকে নির্মাণ করা হয়েছে, কিন্তু পরে আবার জানা গেছে ৮০ সালে। সব মিলিয়ে আমরা নথিপত্র খোঁজার কাজ করছি, কিন্তু এখনও পাওয়া যায়নি।
‘রাজউকের এই কমিটি মূলত টেকনিক্যাল কমিটি। আমাদের কাজ হলো এই ভবনটির সর্বশেষ অবস্থা জানা ব্যবহার করা যাবে কি না। সেটা নিয়েই কাজ করছি। আমাদের কমিটিতে বুয়েটের দুজন শিক্ষক আছেন; ফায়ার সার্ভিসের সাবেক মহাপরিচালক আছেন। এ ছাড়া রাজউকের কর্মকর্তারা আছেন। আমরা ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যাসেসমেন্ট করে সিদ্ধান্ত দিতে পারব। এরপর যে সিদ্ধান্ত আসে, আমরা সেটা সুপারিশ করব।
‘কারণ এটা মানুষের মূল্যবান সম্পদ। এটা তৈরি করতে অনেক টাকা ব্যয় হয়েছে। সব মিলিয়ে যেটা ভালো হবে আমরা সেই সিদ্ধান্ত জানাব।’
ঝুঁকিপূর্ণ ভবনের কারণে এর সামনের রাস্তা খুলে দেয়ার বিষয় কোনো সিদ্ধান্ত জানাবেন কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘ভবনটি যদি স্থিতিশীল অবস্থায় আনা যায় এবং এর ওজন যদি গ্র্যাভিটিকে ছড়িয়ে দেয়া যায়, তাহলে, প্রাথমিক যে সাপোর্ট দিব, তাতে যদি নিরাপদ মনে হয়, তাহলে রাস্তা ছাড়ার সিদ্ধান্ত আসবে। কারণ এটা অনেক ব্যস্ত সড়ক। গাড়ি চলাচল করলে একটা ভাইব্রেশন সৃষ্টি হবে। আজ কিংবা আগামীকাল বসে আমরা এই সিদ্ধান্ত জানাব।’