বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

সুদিনের প্রত্যাশায় ঠাকুরগাঁওয়ের বাঁশমালিরা

  •    
  • ৯ মার্চ, ২০২৩ ১৫:০৪

ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আবু তাহের সামসুজ্জামান বলেন, ‘ঠাকুরগাঁওয়ে বাঁশমালিরা শত বছর ধরে বাঁশের তৈরি পণ্য উৎপাদন করে থাকেন। এ পেশার মানুষকে সরকারের ঘরসহ নানা সুযোগ সুবিধা দেয়া হয়েছে। তাদের উৎপাদিত বাঁশের পণ্য যাতে বিদেশে রপ্তানি করা যায়, তারা যেন আধুনিক পণ্য উৎপাদন করতে পারে এর জন্য প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা নেয়া হবে।’

বর্তমান সময়ের বাঁশমালিদের পূর্বপুরুষরা শতাব্দীর বেশি সময় ধরে বাঁশের তৈরি পণ্য বানিয়ে বাজারজাত করে জীবিকা নির্বাহ করেছেন। পণ্যের গুণগতমান ও সৌন্দর্যের কারণে তাদের তৈরি পণ্য বিগত ৯০ দশকেও বাজার দখল করেছিল। সে সময় তাদের জীবনযাত্রার মান ছিল অনেক সুন্দর ও স্বাচ্ছন্দ্যময়, তবে কালের বিবর্তনে দিন দিন কদর কমেছে এসব পণ্যের।

প্লাস্টিকের তৈরি বিকল্প পণ্যের ওপর ঝুঁকেছে মানুষ। এতে জীবন ও জীবিকার সংগ্রাম চলছে এ সময়ের ঠাকুরগাঁওয়ের বাঁশমালিদের। তাদের প্রত্যাশা বাঁশের তৈরি আধুনিক পণ্যের ব্যবহার বাড়লেই সুদিন ফিরবে তাদের।

ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার ফকদনপুর, কালিতলা পীরগঞ্জের পালিগা, রাণীশংকৈলের বলিদ্বরা, বালিয়াডাঙ্গী বড়বাড়ি ও হরিপুর উপজেলার বেশকিছু উল্লেখযোগ্য গ্রামে বাঁশমালি জনগোষ্ঠীর বসবাস রয়েছে। এসব গ্রামের হাজার হাজার মানুষের একমাত্র পেশা বাঁশের তৈরি পণ্য বানানো।

উল্লেখযোগ্য এসব গ্রামে পুরুষদের পাশাপাশি নারীরাও নিপুণ হাতে তৈরি করেন বাঁশের তৈরি চাটাই, খাঁচা, বিটে, পলো, কুলা, পাখা, ডালি, ভাড়, ঝাড়ু, হাঁস-মুরগির খাঁচাসহ নানা পণ্য। শুধু তাই নয়, ঘরের বাহারি নকশার সিলিং ও বিভিন্ন রেস্টুরেন্টের টেবিল, চেয়ারসহ আধুনিক ডিজাইনের অনেক সাজসজ্জার সরঞ্জামও তৈরি করেন বাঁশমালি নামে পরিচিত নারী ও পুরুষরা।

ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার একটি গ্রামে ঘরের সিলিং তৈরির কাজ করছেন ১০ জন বাঁশমালি।

তাদের মধ্যে একজন বাঁশমালি মুন্না রায়। তিনি কাজের ফাঁকে জানান, এ পেশা তাদের একমাত্র রুজি রোজগারের পথ। কিন্তু বাঁশের তৈরি পণ্যের ব্যবহার কমে যাওয়ায় দিন দিন হারাতে বসেছে শত বছরের ঐতিহ্যবাহী পৈতৃক এ পেশাজীবি মানুষের সংখ্যা, তবে এখনো রুচিশীল মানুষজন ঘরের সিলিংসহ নানা রকম বাহারি সাজসজ্জার জন্য বাঁশমালিদের দিয়ে কাজ করান। তবে এসব মানুষের সংখ্যা কম বলে দাবি করেছেন এ সময়ের বাঁশমালি দীপক চন্দ্র রায়।

বাঁশমালি বিজন কুমার বলেন, ‘আমরা ৫০০ টাকার বাঁশ কিনে দেড় হাজার টাকার পণ্য বিক্রি করতাম, তবে এখন বাঁশের দাম বেড়ে যাওয়ায় পণ্য উৎপাদন সম্ভব হচ্ছেনা। প্লাস্টিকের তৈরি পণ্য এর চেয়ে কমদামে মানুষ কিনতে পারে। বর্তমানে অধিকাংশ বাঁশমালি দৈনিক মজুরিতে কাজ করছে। যদিও বাঁশমালির সংখ্যায় কাজের যোগান খুব সীমিত। মানুষ যদি বাঁশের তৈরি পণ্যের ব্যবহার বাড়ায় তবে আমাদের সুদিন ফিরবে।’

নারী বাঁশমালি দিপিকা রানী বলেন, ‘একটা সময় রমরমা ব্যবসা ছিল বাঁশের তৈরির পণ্যের, এখন নেই। বর্তমানে দৈনিক হাজিরায় কাজ করে যা আয় হয়, তা দিনযাপনেই চলে যায় আর সঞ্চয় হয়না। আমাদের এ সংগ্রাম থেকে উত্তরণের পথ আমাদের তৈরি পণ্যের ব্যবহার বাড়াতে হবে দেশের মানুষকে। আমাদের শিল্প বাঁচানো না গেলে আমাদের অর্থনৈতিক অবস্থা আরও খারাপ হবে৷ আমরা আমাদের সন্তানদের উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ নিয়ে এখনো চিন্তিত।’

ঠাকুরগাঁও শহরে বেশ কিছু রেস্টুরেন্ট ও সৌখিন অফিসে বাঁশের তৈরি আসবাবপত্রের ব্যবহার দেখা গেছে। যেসব দেখতে সুন্দর ও রুচিশীল ভাবে তৈরি করা হয়েছে। বাঁশমালিদের এমন সুনিপুন সৃষ্টি এ পেশাকে বাঁচিয়ে রাখবে। ধীরে ধীরে আবারও মানুষ ভিন্নরকম ভাবে বাঁশের তৈরি জিনিসপত্রের উপর নির্ভরশীল হবে এমন প্রত্যাশা চিন্তাশীল মানুষদেরও।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিসংখ্যান বিভাগের প্রাক্তণ ছাত্র মাহাবুব ইসলাম বলেন, ‘উন্নত দেশ চীনে প্রচুর বাঁশ উৎপাদন হয়। সেদেশে বাঁশের ব্যবহারও প্রচুর হয়। তেমনি ঠাকুরগাঁওয়ে প্রচুর বাঁশ ঝাড় রয়েছে। এখানকার বাঁশমালিদের বাঁশের পণ্য ও কাজ খুবই প্রশংসনীয়। বর্তমান সময়ের প্রজন্মের সঙ্গে এসব পণ্যের খুব একটা পরিচিতি নেই। আমি মনে করি বাঁশমালিদের এমন পেশা টিকিয়ে রাখতে বা তাদের সুদিন ফেরাতে উদ্যোগ নেয়া যেতে পারে৷ সরকারি বেসরকারি উদ্যোগে জেলাতে এসব পণ্যের মেলার আয়োজন হতে পারে। এমনটা হলে অনেকেই এসব পণ্য যেমন কিনবে তেমনি ব্যপক পরিচিতিও লাভ করবে। ফলশ্রুতিতে বাঁশমালিদের কদরও বাড়বে সারাদেশে।

ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আবু তাহের সামসুজ্জামান বলেন, ‘ঠাকুরগাঁওয়ে বাঁশমালিরা শত বছর ধরে বাঁশের তৈরি পণ্য উৎপাদন করে থাকেন। এ পেশার মানুষকে সরকারের ঘরসহ নানা সুযোগ সুবিধা দেয়া হয়েছে। তাদের উৎপাদিত বাঁশের পণ্য যাতে বিদেশে রপ্তানি করা যায়, তারা যেন আধুনিক পণ্য উৎপাদন করতে পারে এর জন্য প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা নেয়া হবে।’

এ বিভাগের আরো খবর