বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

নতুন গমের দামে ও ফলনে খুশি মেহেরপুরের চাষিরা

  • প্রতিনিধি, মেহেরপুর   
  • ৯ মার্চ, ২০২৩ ১৩:০১

মেহেরপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক শঙ্কর কুমার মজুমদার নিউজবাংলাকে বলেন, ‘মেহেরপুরে ২০১৬ সাল থেকে ব্লাস্ট শুরু হওয়ার পর গম চাষ প্রায় বন্ধ হয়েছিল। চলতি মৌসুমে চাষিদের ব্লাস্ট প্রতিরোধী জাত বারি-৩৩, ডব্লিউএমআরআই অন টু থ্রি এগুলো চাষ করার জন্য পরামর্শ দিয়েছে কৃষি বিভাগ। কৃষি বিভাগের পরামর্শ মোতাবেক চাষিরা ব্লাস্ট প্রতিরোধী গমের চাষ করে ভালো ফলন পাচ্ছে।

কৃষি নির্ভর মেহেরপুরে চলতি মৌসুমে গম বপনের সময় বীজের সংকট দেখা দেয়াছিল। এতে দ্বিগুণ দাম দিয়েও স্থানীয় বাজারে পণ্যটি না কিনতে পাওয়ার কারণে অনেক ভোগান্তির শিকার হতে হয়েছিল জেলার কৃষকদের।

তবে পরবর্তী সময়ে আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় প্রত‍্যাশা অনুযায়ী ফলন ও গম পণ‍্যটির বাজার দর ভালো পওয়ায় সব কষ্ট ভুলে গিয়ে খুশিতে রয়েছেন জেলার গম চাষিরা।

কৃষকরা বলছেন, চলতি মৌসুমে এখন পযর্ন্ত গম চাষ করে ফলন বিপর্যয়ের মুখে পড়তে হয়নি তাদের, তাই খরচের বিপরীতে অধিক মুনাফার আসা তাদের।

কৃষি বিভাগ বলছে, আমাদের ধারণা চলতি মৌসুমে গম চাষ লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাবে। আর সেই সঙ্গে ফলন ও বাজার দর ভালো হলে কৃষকরা গম চাষে আরও আগ্রহী হবে। আর যত বেশি গম চাষ হবে, ততো আমদানি নির্ভরতা কমবে।

জেলার মাঠ ঘুরে কৃষক ও ব‍্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বতর্মানে জেলার বিস্তৃর্ণ মাঠ জুড়ে রয়েছে সোনালী রঙের পাকা ও সবুজের মাঝে হলদে বর্ণের গম ক্ষেত। আবার অনেক চাষি আগাম গম চাষ করাই মাঠ থেকে ফসল ঘরে তুলতে শুরু করেছেন। আবার অধিকাংশ গম চাষি অপেক্ষায় রয়েছেন আর কিছুদিনের।

তবে জেলায় গত ২০১৬ সাল থেকে গমে ব্লাস্ট রোগ আক্রমণ দেখা দিলে চাষিরা প্রতিনিয়ত গম চাষ করে লোকশানের পড়তে হয়েছে। এ কারণে মাঝের সময়টিতে গম চাষে আগ্রহ হারিয়ে চাষ বন্ধ রেখেছিল জেলার অনেক কৃষক। সম্প্রতি সময়ে কৃষি বিভাগের পরামর্শে চলতি মৌসুমে ব্লাস্ট প্রতিরোধী জাত বারি-৩৩, ডব্লিউএমআরআই অন টু থ্রি এগুলো চাষ করে সফলতা পেয়েছেন চাষিরা।

এ জাতের গম ব্লাস্ট প্রতিরোধী এবং তাপ সহনশীল হওয়ার কারণে ফলন বিপর্যয়ে পড়তে হয়নি কৃষকদের। এতে প্রত‍্যাশিত ফলন পাওয়ার পাশাপাশি বাজার দর অনেক ভালো পাচ্ছেন চাষিরা। বতর্মানে প্রকারভেদে নতুন গম প্রতি মণ বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ৭০০ থেকে, ১ হাজার ৭৫০ টাকা করে। এক বিঘা জমিতে মানভেদে ১৪ থেকে ১৭ মণ পযর্ন্ত গম পাওয়া যাচ্ছে।

জেলার গাংনী উপজেলার ঝোড়াঘাট গ্রামের কৃষক মামুন আলী বলেন, ‘এবার আমি আগাম এক বিঘা জমিতে গম বপণ করেছিলাম। এ বছর আবহাওয়া ভালো থাকায় মাঠে গম খুব ভালো হয়েছিল। গত দুইদিন আগে গম কেটে মাড়াই শেষ করেছি। সব মিলিয়ে প্রায় ১৭ মণ গম পেয়েছি। অন্তত খাবারের দুশ্চিন্তা থেকে তো রক্ষা পেলাম। আমরা চাষি মানুষ, আমদের মাঠে ঘাটেই খাওয়া লাগে। সে বিবেচনায় আমাদের কাছে রুটিই প্রধান খাবার হয়ে গেছে। তাই ঘরে গম থাকলে খাবারের চিন্তা থাকে না।’

একই উপজেলার বালিয়াঘাট গ্রামের গম চাষি আতাউল হক জানান, তার আড়াই বিঘা জমিতে গমের আবাদ ছিল। এ বছর আবহওয়া অনুকূলে থাকায় আমাদের কীটনাশক কম লেগেছে। তবে বীজের দাম এ বছর খুব বেশি ছিল। সে হিসেবে বিঘা প্রতি জমিতে সাড়ে ৬ থেকে ৭ হাজার টাকার মতো খরচ হয়েছে।

তিনি বলেন, ‘আমি আড়াই বিঘা জমিতে ৩৫ মণ গম পেয়েছি। আর বতর্মান বাজারে প্রতি মণ গম বিক্রি হচ্ছে ১৭০০ টাকা মণ হিসেবে। খরচ বাদ দিয়ে প্রতি বিঘা জমিতে ১৫ থেকে ১৬ হাজার টাকার মতো লাভ হবে।’

বাদিয়াপাড়া গ্রামের গম চাষি শাহ আলম জানান, আমি বেশ কয়েক বছর ধরে গম চাষ করে লোকশানে পড়েছিলাম। কারণ আমি কৃষি অফিসারদের কথা না শুনে বাড়িতে থাকা শতাব্দী ও প্রদীপ জাতের বীজ বপণ করাই। ব্লাস্ট রোগের আক্রমণ সব গম অসময়ে পেকে গিয়ে গমের দানা জিরার মত হয়ে গিয়েছিল। তবে এবার ব্লাস্ট প্রতিরোধী গম বপণ করেছি। গম ক্ষেতে খুব ভালো হয়েছে। গমে দানাও খুব ভালো হয়েছে। আবহওয়া এরকম থাকলে সপ্তাহ খানেক পরে গম কেটে ফসল ঘরে তুলতে পারব।

গাংনীর বাজারের গম ব‍্যাবসায়ী ফারুক হোসেন বলেন, ‘আমাদের বাজারে এখন নতুন গম আসতে শুরু করেছে। দাম বেশ ভালো। প্রতি মণ গম ফইড়িদের গাছ থেকে ১৭০০ টাকা দরে কিনছি। কিছু গম আবার মণে ৫০ টাকা বেশি দামেও কেনা লাগছে।’

এ উপজেলার বামন্দী বাজারের গম ব‍্যাবসায়ী লাল্টু মিয়া বলেন, ‘আমাদের এ এলাকায় চারটি অটো ফ্লাওয়ার মিল রয়েছে। এতে আমাদের সবসময় গমের একটা চাহিদা থাকে। এলাকার গম দিয়ে আমাদের চাহিদা মেটানো সম্ভব হয়ে ওঠে না। চাষিরা গম বাজারে আনা মাত্রই আমরা তাদের কাছ থেকে গম কিনে নেই। এ বছর নতুন গম উঠেই ১৭০০ টাকা করে মণ বিক্রি হচ্ছে। বাজারে যে গমের চাহিদা তাতে মনে হচ্ছে, গমের বাজার আর কমবে না। তবে দেশের বাইরে থেকে কম দামে আমদানি করলে সেক্ষেত্রে আলাদা।

মেহেরপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক শঙ্কর কুমার মজুমদার নিউজবাংলাকে বলেন, ‘মেহেরপুরে ২০১৬ সাল থেকে ব্লাস্ট শুরু হওয়ার পর গম চাষ প্রায় বন্ধ হয়েছিল। চলতি মৌসুমে চাষিদের ব্লাস্ট প্রতিরোধী জাত বারি-৩৩, ডব্লিউএমআরআই অন টু থ্রি এগুলো চাষ করার জন্য পরামর্শ দিয়েছে কৃষি বিভাগ। কৃষি বিভাগের পরামর্শ মোতাবেক চাষিরা ব্লাস্ট প্রতিরোধী গমের চাষ করে ভালো ফলন পাচ্ছে।

‘সেই সঙ্গে বতর্মান বাজার দর অনেক ভালো। চলতি মৌসুমে মেহেরপুরে ১৩ হাজার হেক্টরের বেশি জমিতে গম চাষের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে, যা গত মৌসুমের চেয়ে চলতি মৌসুমে তিন হাজার হেক্টর বেশি জমিতে। ইতোমধ্যে লক্ষ‍্যমাত্রা ছাড়িয়ে ১৫ হাজার হেক্টর আবাদ হয়েছে। যত বেশি গম উৎপাদন হবে, ততো বেশি আমদানি নির্ভরতা কমবে। আমার বিশ্বাস সব গম চাষিদের ঘরে ওঠার আগ পযর্ন্ত আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে আগামীতে আরও বেশি গম চাষে আগ্রহী হবে জেলার চাষিরা।’

এ বিভাগের আরো খবর