‘আগামী ৫০ বছরের জন্য শিক্ষা ব্যবস্থাকে সম্পূর্ণভাবে ধ্বংস করে দেয়া হয়েছে। তার বদলে টাকার সংস্কৃতি আনা হয়েছে। টাকা দিয়ে এখন পেশি কেনা যায়, মাস্তান কেনা যায়। নেপথ্য কারণ, ত্বকীর মতো আবার কাউকে হত্যার পরও যেন প্রতিবাদ না হয়।’
বিশিষ্ট নাট্য ব্যক্তিত্ব মামুনুর রশীদ বুধবার নারায়ণগঞ্জে এক আলোচনা সভায় এসব কথা বলেন।
তানভীর মুহাম্মদ ত্বকী হত্যার ১০ বছর উপলক্ষে শীতলক্ষ্যা নদীর তীরে আলোর ভাসান অনুষ্ঠিত হয়েছে। ২১ দিনব্যাপী কর্মসূচির অংশ হিসেবে বুধবার সন্ধ্যায় নারায়ণগঞ্জ শহরের পাঁচ নম্বর ঘাট এলাকায় (যেখানে ত্বকীর লাশ পাওয়া যায়) এই কর্মসূচি পালন করা হয়।
এর আগে আলোচনা সভায় বক্তব্য দেন মামুনুর রশীদ। তিনি বলেন, ‘নারায়ণগঞ্জের শীতলক্ষ্যা নদীর পানি যেমন দূষিত হয়ে গেছে, তেমনই বাতাসও। সে সঙ্গে একের পর এক বিচারহীনতার দৃষ্টান্ত স্থাপন হয়েছে।’
দীর্ঘ ১০ বছরেও ত্বকীর হত্যার বিচার না হওয়ায় হতাশা প্রকাশ করে এই নাট্য ব্যক্তিত্ব বলেন, ‘ত্বকী এখন বাংলাদেশের মানুষের ঘরে ঘরে। ত্বকী তার অসমাপ্ত জীবনের কথা বলছে। অসমাপ্ত যত বঞ্চিত মানুষ বিচারহীনতার শিকার ত্বকী তাদের কথা বলছে। এটাই আমাদের সব চেয়ে বড় পাওয়া। অনেক বেদনার মধ্যে, অনেক বঞ্চনার মধ্যেই ত্বকী শিল্প, সংস্কৃতি ও জীবনের না পাওয়া বেদনার কাহিনীর অংশ হয়ে গেছে।’
দেশের শিক্ষা ব্যবস্থার সমালোচনা করে তিনি বলেন, ‘মানুষ কোথা থেকে মূল্যবোধ শিখবে? আরেকজনের জন্য দাঁড়ানো ও প্রতিবাদ করা- এগুলো আমাদের প্রাইমারি স্কুলে শেখানো হতো। এখন প্রাইমারি স্কুলে চাকরি পেতে হলে ১৬ থেকে ২০ লাখ টাকা লাগে। যে শিক্ষক এতো টাকা দিয়ে চাকরি নেন তিনি কি এগুলো শেখাবেন? তিনি তো ঋণ পরিশোধের জন্য কোচিং করে টাকা উপার্জনে ব্যস্ত থাকেন।’
আলোর ভাসানে ত্বকীর পিতা ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব রফিউর রাব্বি বলেন, ‘ঘাতকরা যতই চেষ্টা করুক সত্য চাপা থাকে না। লাশ যখন নিজে কথা বলা শুরু করে সেটি হয় ভয়ঙ্কর সত্য। লাখো মানুষ ত্বকী হত্যার বিচার চায়। শুধু ত্বকী নয়, এমন নৃশংস সব হত্যার বিচার চায়। আমরা আমাদের সন্তানদের জন্য নিরাপদ সমাজ চাই।’
‘আলোর ভাসান’ অনুষ্ঠানে নারায়ণগঞ্জ সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি ভবানী শংকর রায়ের সভাপতিত্বে আরও বক্তব্য দেন খেলাঘর আসরের সভাপতি রথীন চক্রবর্তী, কবি ও সাংবাদিক হালিম আজাদ ও জোটের সাধারণ সম্পাদক শাহীন মাহমুদ।
নারায়ণগঞ্জের রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক ও সামাজিক বিভিন্ন সংগঠনের প্রতিনিধিরা এতে উপস্থিত ছিলেন। এ সময় নাটক, আবৃত্তি আলেখ্য, গান ও কবিতা পরিবেশন করেন সংস্কৃতি কর্মীরা। পরে শীতলক্ষ্যা নদীতে আলোকশিখা ভাসানো হয়।