রাজধানীর গুলিস্তানের সিদ্দিকবাজারে বিস্ফোরণে ক্ষতিগ্রস্ত ভবনটির বেজমেন্টে উড়ছিল কিছু মাছি। আর তা দেখে সন্দেহ হলে ডাকা হয় র্যাবের ডগ স্কোয়াডকে। ডগ স্কোয়াডের সদস্যদের একটি জায়গায় বারবার হাঁটাহাঁটি দেখে ফায়ার সার্ভিস নিশ্চিত হয়, এই নির্ধারিত স্থানেই চাপা পড়ে আছেন কেউ।
এরপর সেখানে একটা একটা করে ইট ও ভবনের ভাঙা অংশ সরিয়ে বুধবার বিকেলে একে একে দুটি মরদেহ উদ্ধার করা হয়। পরে মরদেহ দুটি পাঠানো হয় ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে।
ঢাকা ফায়ার সার্ভিসের সহকারী পরিচালক আক্তারুজ্জামান বলেন, ‘রাজউক ও সেনাবাহিনীসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ ভবনটিকে অধিক ঝুঁকিপূর্ণ বলে জানিয়েছিল। এরপরও আমরা সর্বোচ্চ ঝুঁকি নিয়ে একদম ম্যানুয়ালি অভিযান পরিচালনার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করি।’
তিনি বলেন, ‘অভিযানকালে আমরা দেখেছি ভেতরে অনেক মাছি। তখন আমরা র্যাবের ডগ স্কোয়াডকে সেখানে ডাকি। ডগ স্কোয়াড সেখানে বারবার হাঁটাহাঁটি করে। তখন আমরা নিশ্চিত হই ওখানেই মরদেহ থাকতে পারে। আমরা একটি একটি করে ইট সরিয়ে সম্পূর্ণ ম্যানুয়ালি মরদেহ দুটি উদ্ধার করতে সক্ষম হই।’
মরদেহ উদ্ধার সম্পর্কে আক্তারুজ্জামান বলেন, ‘ভবনটির একদম বেজমেন্টে অনেক ইটচাপা অবস্থায় মরদেহ দুটি পড়েছিল।’
আরও কেউ নিখোঁজ রয়েছেন কি না এবং তাদের উদ্ধার সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমরা অভিযোগ পেয়েছি তিনজন নিখোঁজ। এরমধ্যে আপনারা দেখতে পেলেন যে আমরা দুজনের মরদেহ উদ্ধার করেছি। এখন আমরা মালিক সমিতি, ভবন মালিক, দোকান মালিকদের সঙ্গে কথা বলবো, ক্রস চেক করবো আরো কেউ নিখোঁজ রয়েছে কি না। থাকলে উদ্ধারে চেষ্টা করা হবে।’
পরবর্তী উদ্ধার অভিযান কিভাবে পরিচালিত হবে জানতে চাইলে আখতারুজ্জামান বলেন, ‘আমরা এখন তদন্ত কমিটির প্রধান ডিরেক্টর (অপস)-এর সঙ্গে বসবো, বসে প্ল্যান করে পরবর্তী সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবো। আমরা আমাদের উদ্ধার অভিযান বন্ধ করি নাই। তবে আমরা কোনো ইন্সট্রুমেন্ট ব্যবহার করতে পারিনি। শুধু লক কাটার ব্যবহার করতে পেরেছি।’
ভবনের ভেতরে ধ্বংসস্তূপে আপনারা অস্বাভাবিক কিছু দেখেছেন কি না, বিস্ফোরণের সুনির্দিষ্ট কোনো কারণ জানতে পেরেছেন কি না- জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমরা ধ্বংসস্তূপ, ধুলাবালি, ধোঁয়া দেখেছি। বিস্ফোরণের কি কারণ হতে পারে তা তদন্তের জন্য তদন্ত কমিটি গঠিত হয়েছে তদন্ত শেষে এ ব্যাপারে সুনির্দিষ্ট কারণ বলা যাবে।’
মঙ্গলবার বিকেল পৌনে পাঁচটার দিকে গুলিস্তানে বিআরটিসি বাস কাউন্টারের কাছে সিদ্দিকবাজারের একটি ভবনে ভয়াবহ বিস্ফোরণ ঘটে। এতে পাশাপাশি দুটি বহুতল ভবন ক্ষতিগ্রস্ত হয়। একটি ভবন সাততলা, আরেকটি পাঁচতলা।
এর মধ্যে সাততলা ভবন কুইন টাওয়ারের বেজমেন্ট, প্রথম ও দ্বিতীয় তলা বিধ্বস্ত হয়েছে। এতে আহত হয়েছেন অনেকে। ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল, পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিস সূত্রে বিস্ফোরণের ঘটনায় মঙ্গলবারই ১৮ জন নিহতের তথ্য নিশ্চিত হওয়া যায়। সর্বশেষ বুধবার বিকেলে উদ্ধার হয় দুই মরদেহ।