রাজধানীর গুলিস্তানের সিদ্দিক বাজারে ভবনে বিস্ফোরণ, চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে অক্সিজেন প্ল্যান্টে বিস্ফোরণ ও কক্সবাজারের রোহিঙ্গা ক্যাম্পে আগুনে বিএনপির কোনো সম্পৃক্ত আছে কি না, তা সরকার খতিয়ে দেখছে বলে জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।
বুধবার ২৩ বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউতে দলীয় কার্যালয়ে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে মহানগর, সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের নেতাদের যৌথ সভা শেষে সাংবাদিকদের তিনি এ কথা বলেন।
কাদের বলেন, ‘গুলিস্তান, সীতাকুণ্ড ও রোহিঙ্গা ক্যাম্পে অগ্নিসংযোগের যে ঘটনা ঘটেছে, তা বিএনপি আন্দোলনে ব্যর্থ হয়ে ঘটিয়েছে কি না, তা খতিয়ে দেখছে সরকার। প্রধানমন্ত্রী যখন দেশের কাজে বাইরে, ঠিক সেই সময় কয়েকটি অনভিপ্রেত ঘটনা ঘটনা ঘটে গেছে।
‘এটা নাশকতা কি না, স্বাভাবিক দুর্ঘটনা অথবা নাশকতা, সেটা সরকারের পক্ষ থেকে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে গভীরভাবে খতিয়ে দেখা হচ্ছে। এই নিয়ে কারও মাথাব্যথার প্রয়োজন নাই।’
মির্জা ফখরুলের বিবৃতির প্রসঙ্গ টেনে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘মির্জা ফখরুল হুট করে একটা বিবৃতি দিয়েছেন। তার বিবৃতির ভাষা হচ্ছে যে, এ ধরনের একের পর এক ঘটনা রহস্যজনক। আমরা তার সঙ্গে একমত।
‘দেশে এ ধরনের ঘটনা রহস্যজনক। এই রহস্যের ভেতরের বিষয়টি কী, সেটা আমাদের খতিয়ে দেখতে হবে।’
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘আন্দোলনে ব্যর্থতা যাদের, তারা এখন আন্দোলনে ব্যর্থ হয়ে নাশকতার পথ খুঁজছে কি না, নাশকতার পথে হাঁটছেন কি না, সেটাও আমাদের খতিয়ে দেখতে হবে। সেটা আমরা খতিয়ে দেখছি। গুলিস্তানের সিদ্দিক বাজার, চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড, কক্সবাজারের বালুখালীর রোহিঙ্গা ক্যাম্পে যে অগ্নিসংযোগের ঘটনা, এতে যারা মারা গেছেন, তাদের মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করছি।
‘এসব রহস্যজনক ঘটনার পেছনের কোনো ব্যক্তি, সংস্থা বা দলের সংশ্লিষ্টতা আছে কি না, তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। নাশকতামূলক ঘটনা ঘটানো হচ্ছে কি না, তা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, তারা খতিয়ে দেখছেন।’
তিনি বলেন, ‘বিএনপি আন্দোলনে ব্যর্থ হলে আগুন সন্ত্রাসে লিপ্ত হয়। এই ব্যাপারে আমরা সর্তক আছি।’
সিদ্দিক বাজারের ভবনে মঙ্গলবার বিকেলে বিস্ফোরণে ১৮ জনের মৃত্যু হয়।
এ দুর্ঘটনায় আহত হন শতাধিক মানুষ, যাদের মধ্যে ৭০ জনকে ভর্তি করা হয় ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে ভর্তি রয়েছেন ১০ জন, যাদের কেউই শঙ্কামুক্ত নন বলে জানিয়েছেন চিকিৎসক।
বিস্ফোরণের পর মঙ্গলবার ভবনটি থেকে ৪০ জনকে জীবিত উদ্ধার করে ফায়ার সার্ভিস।
ভবনে বিস্ফোরণের ঘটনায় এখনও তিনজন নিখোঁজ রয়েছেন বলে দাবি করেছেন তাদের পরিবারের সদস্যরা।
অন্তর্ঘাতমূলক কি না, সন্দেহ মানবাধিকার কমিশনের
ঘটনার পরের দিন ক্ষতিগ্রস্ত ভবন পরিদর্শন শেষে জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান ড. কামাল উদ্দিন আহমেদ সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমরা ধ্বংসস্তূপ পর্যবেক্ষণ করেছি। কী কারণে এমন ঘটনা ঘটল, এটা তদন্ত করে বের করা দরকার। এটি কোনো স্বাভাবিক কেমিক্যাল বিস্ফোরণের ঘটনা নাকি অন্তর্ঘাতমূলক কর্মকাণ্ড, সেটা তদন্তের প্রয়োজন আছে।
‘আমরা দেখতে পাচ্ছি একটার পর একটা দুর্ঘটনা ঘটেই চলেছে। এটা আমাদের জন্য অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক। আমরা অনেকগুলো প্রাণ হারিয়েছি। এটি একটি মর্মান্তিক ঘটনা। এ ঘটনার যাতে কোনো পুনরাবৃত্তি না ঘটে, সে বিষয়ে সচেতন থাকতে হবে।’
স্বাভাবিক বিস্ফোরণ নয়: র্যাব
সিদ্দিক বাজারে মঙ্গলবার বিকেলের বিস্ফোরণ স্বাভাবিক নয় বলে বুধবার দুপুরে মন্তব্য করেছেন র্যাবের বোম্ব ডিসপোজাল ইউনিটের প্রধান মেজর মশিউর রহমান।
তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমরা প্রাথমিকভাবে পেয়েছি ভবনের বিস্ফোরণ বেজমেন্ট থেকে হয়েছে। এটা স্বাভাবিক কোনো বিস্ফোরণ নয়। গ্যাস জমে কিংবা অন্য কোনোভাবে বিস্ফোরণ ঘটেছে। এ ঘটনা এসি থেকে ঘটেনি, এটা নিশ্চিত হয়েছি।’