জাতীয় পাট দিবসের প্রচারে বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে প্রকাশ করা একটি ছবি ঘিরে চলছে বিতর্ক; ছবিটিতে সোয়েটারের মতো দেখতে একটি জিনিসের ওপর বসানো হয়েছে একটি সবুজ পাতা। এই পাতা কী আসলেই পাটের?
সোমবার থেকে এ নিয়ে বিতর্কের পর কেউ বলেছেন, পাতাটি পাটের নয়। কেউ বলেছেন, এটি গাঁজার পাতা। কেউ বা বলেছেন, এই পাতা আঁশ জাতীয় ফসল কেনাফের। তবে একটি পরিবেশ ও লাইফস্টাইল বিষয়ক ওয়েবসাইটের তথ্যমতে, পাতাটি হেম্পের।
বাংলাদেশ জুট মিল অ্যাসেসিয়েশনের সৌজন্যে বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের প্রচার করা ফেস্টুনের ছবিটির সঙ্গে হুবহু মিল পাওয়া গেছে যুক্তরাষ্ট্রের নিউ ইয়র্ক ভিত্তিক ওয়েবসাইট গ্রিনমেটারস ডটকমের একটি ছবির।
২০২২ সালের ২৩ ডিসেম্বর স্থানীয় সময় দুপুর ১২টা ৩৮ মিনিটে ওই ছবিটি ছাপা হয়। গ্রিনমেটারস ছবিটি পেয়েছে গেটি ইমেজের কানাডাভিত্তিক ছবির অনলাইন প্লাটফর্ম আইস্টক থেকে। আইস্টক ছবিটি আপলোড করে ২০১৯ সালের ২ জুন।
গ্রিনমেটারসের যে প্রতিবেদনে ছবিটি ব্যবহার করা হয়েছে, তার শিরোনাম ’হেম্প ফেব্রিক কি পরিবেশবান্ধব?’ এই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, একটা বিষয় পরিষ্কার হওয়া দরকার যে, হেম্প ও গাঁজা মারিজুয়ানা কিন্তু এক জিনিস নয়। যদিও তারা একই উদ্ভিদ গোত্রের।
পুরো প্রতিবেদনে কোথাও পাটের কথা উল্লেখ নেই। তবে হেম্প থেকেও যে বস্ত্র তৈরির উপাদান পাওয়া যায় তা লেখা হয়েছে এতে। পৃথিবীর অনেক দেশেই গাঁজা নিষিদ্ধ, হেম্প নিষিদ্ধ নয়। মূলত হেম্প একটি আঁশ জাতীয় উদ্ভিদ। গাঁজা গাছের একটি প্রজাতি হলো এই হেম্প।
গ্রিনমেটারসে প্রকাশিত ছবি
সোমবার একটি নিউজ ওয়েবসাইটে মন্ত্রণালয়ের ওই প্রচারের ছবি দিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। এরপর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে বিষয়টি ভাইরাল হয়ে যায়।
প্রতিবেদনে বলা হয়, ৬ মার্চ জাতীয় পাট দিবস পালনের দিন রাজধানীর বিজয় সরণী মোড়ে পাট ও বস্ত্র মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে বাংলাদেশ জুট মিলস অ্যাসোসিয়েশনের সৌজন্যে একটি ফেস্টুনে পাটজাত পণ্যের সঙ্গে সবুজ পাতার ছবি দেয়া হয়। খাঁজ কাটা ওই সবুজ পাতা দেখে অনেকেই এটা পাট পাতা কি না, তা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেন। কয়েকজন পথচারী মন্তব্য করেন, এটা পাটের পাতা না কি গাঁজা গাছের পাতা?
পাট দিবস উপলক্ষে প্রচার করা ফেস্টুনে ওই পাতার ছবি ব্যবহার নিয়ে দুদিন ধরেই চলছে বিতর্ক। কৃষি গবেষকরা বলছেন, ওই পাতা কোনোভাবেই পাটের পাতা নয়। সরল ও একক আকৃতির পাট পাতা দেখেই এতদিন অভ্যস্ত মানুষ।
এর মধ্যে এই সোনালি আঁশের পাতা বলে ব্যবহার করা ছবিটি নিয়ে এসেছে নানা তথ্য। ফেসবুকে পাট পাতার ছবি ও সেই ফেস্টুনের ছবি পাশাপাশি পোস্ট দিয়েছেন অনেকে।
রাজধানীর শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন সহযোগী অধ্যাপক নাম না প্রকাশ করার শর্তে নিউজবাংলাকে বলেন, ‘এটা মোটেই পাটের পাতা না। যে ছবিটি প্রকাশ করা হয়েছে সেটির মতো এক ধরনের পাট পাতা আছে ঠিক, তবে এটি সেই পাতা না।’
পাট পাতা চেনার উপায় জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘পাটের পাতা সরল প্রকৃতির। যে কয় ধরনের পাতা আছে, এরকমই। এক ধরনের পাটের পাতা আছে যেটি কিছুটা আঙ্গুলের মতো। তবে ফেস্টুনের দেয়া ছবির সঙ্গে এর মিল নেই।’
একজন কৃষি গবেষক জানান, কেনাফ পাতার সঙ্গে কিছুটা মিল আছে ছাপা হওয়া ছবিটার। এটিও পাটের মতো পরিবেশবান্ধব আঁশ জাতীয় ফসল।
কৃষি সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দেশে সাধারণত দুু ধরনের পাট চাষ হয়। একটি হলো সাদা বা তিতা পাট আর অন্যটি হলো তোষা বা মিঠা পাট। এছাড়া আরও একটি উদ্ভিদ থেকেও পাটের মত তন্তু পাওয়া যায়, যার নাম মেস্তা। কিছু কিছু দেশে পাটের বিকল্প হিসেবে চাষ হয় কেনাফ।
বাংলাদেশের জাতীয় প্রতীকেও আছে পাট পাতার আকৃতি। ভাসমান একটি শাপলা, শাপলার দুই পাশে ধানের শীষবেষ্টিত পাট পাতা ও চারটি তারকা সেঁটে দিয়ে তৈরি হয়েছে এই প্রতীক। জাতীয় প্রতীকে যে পাট পাতা, সে পাট পাতাও সরল ও একক আকৃতির।