বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

বাড়ছে লাশ, ঝুঁকিপূর্ণ ভবনে উদ্ধার কাজ ব্যাহত

  •    
  • ৭ মার্চ, ২০২৩ ২২:০২

গুলিস্তানে ৭ তলা ভবনে বিস্ফোরণে এ পর্যন্ত ১৮ জন নিহত হয়েছে। আহতদের মধ্যে ৬৭জনকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। বার্ন ইনস্টিটিউটে ভর্তি দগ্ধ সাতজনের কেউই শঙ্কামুক্ত নয়। বিস্ফোরণে ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে ওঠায় ভবনটিতে আটকাপড়াদের খোঁজে অভিযানও বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।

রাজধানীর গুলিস্তানে ভবনে বিস্ফোরণের ঘটনায় লাশের সারি ক্রমশ দীর্ঘ হচ্ছে। ইতোমধ্যে নিহতের সংখ্যা ১৮ জনে দাঁড়িয়েছে। আহতরা ধুঁকছেন হাসপাতালে।

ফায়ার সার্ভিসের উদ্ধারকর্মীরা একের পর এক হতাহতকে উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠাচ্ছেন। বিস্ফোরণে ৭ তলা ভবনটির ছাদ ও দেয়াল ধসে পড়ায় ভেতরে অনেকে আটকা পড়ে আছেন বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

বিস্ফোরণে আহত হওয়া ১১২ জনকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে আনা হয়। তাদের মধ্যে ৬৭জনকে হাসপাতালের বিভিন্ন ওয়ার্ডে ভর্তি করা হয়েছে। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রাত ১১টার দিকে সিয়াম নামে এক যুবক মারা যান।

শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে ভর্তি দগ্ধ সাতজনের কেউই শঙ্কামুক্ত নয়।

ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণার পর ১৮০/১ নম্বর হোল্ডিংয়ের ভবনটির ভেতরে উদ্ধার কাজ বন্ধ রয়েছে। মঙ্গলবার রাত ৯টার দিকে উদ্ধার অভিযান বন্ধ করে দেয়া হয়।

ফায়ার সার্ভিসের দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ভবনের পিলারগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় সেগুলো স্ট্যাবল করার কাজ শেষে উদ্ধার কাজের জন্য ফায়ার ফাইটাররা ভবনের ভেতরে প্রবেশ করবেন।

ফায়ার সার্ভিসের পরিচালক (অপারেশনস অ্যান্ড মেইনটেনেন্স) লে. কর্নেল মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, চরম ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় ভবনের বেজমেন্টে যাওয়া যাচ্ছে না। ভবনটি স্ট্যাবল করে আমরা ভেতরে ঢুকব। এটাও উদ্ধার প্রক্রিয়ারই অংশ। সেনাবাহিনীর টিম সিকিউরড বলার পর আমরা ভেতরে যাব।’

‘উদ্ধার কাজে আমরা যে ধরনের যন্ত্রপাতি ব্যবহার করি সেগুলোতে অনেক ভাইব্রেশন হয়। এ অবস্থায় ভেতরে আমরা উদ্ধারের যন্ত্রপাতি ব্যবহার করলে পুরো ভবনই ধ্সে পড়ার আশঙ্কা আছে।’

রাত ১০টার দিকে সেনাবাহিনী ও র‍্যাবের পৃথক বোম্ব ডিসপোজাল টিম ঘটনাস্থল সুইপিং করতে ভবনের ভেতরে যায়।

রাত ১১টার দিকে সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে জানানো হয়, ভবনটির বেজমেন্টে বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে। ভেতরে বিস্ফোরকের কোনো আলামত পাওয়া যায়নি।

এদিকে উদ্ধার অভিযান দৃশ্যত বন্ধ থাকায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন ব্যবসায়ী ও নিখোঁজদের স্বজনরা। তারা বলেন, এখনও লোকজন ভেতরে আছে। কিন্তু ফায়ার সার্ভিস ভেতরে যাচ্ছে না।

ফায়ার সার্ভিসের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. মাইন উদ্দিন ঘটনাস্থল পরিদর্শন শেষে ব্রিফ করেন। তিনি জানান, ভবনটি ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। ভবনটি স্থিতিশীল হলে পরে উদ্ধার কাজ চালানো হবে।

বিস্ফোরণের কারণ সম্পর্কে তিনি জানান, বিষয়টি সেনাবাহিনী ও পুলিশ তদন্ত করবে।

বিস্ফোরণস্থল পরিদর্শন শেষে ব্রিফ করেন ফায়ার সার্ভিসের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. মাইন উদ্দিন। ছবি: নিউজবাংলা

ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার খন্দকার গোলাম ফারুক বলেন, ‘আমাদের বোমা বিশেষজ্ঞসহ অন্যান্য বিশেষজ্ঞরা ঘটনাস্থলে গিয়েছে। তারা তদন্ত করে দেখছে এটা নাশকতা নাকি দুর্ঘটনা। এছাড়া অনেক সময় গ্যাস জমতে পারে, এসির গ্যাস হতে পারে, পয়ঃনিষ্কাশনের গ্যাসও হতে পারে।’

মঙ্গলবার সন্ধ্যায় বিস্ফোরণস্থল পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের তিনি এমনটা জানান।

ডিএমপি কমিশনার বলেন, ‘আমরা ডাক্তারদের সঙ্গে কথা বলেছি। ডাক্তার ও নার্স পর্যাপ্ত আছে। আমি ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে এসেছি। উদ্ধার কাজ চলছে। কী কারণে বিস্ফোরণ হলো সেটা আমাদের বিভিন্ন সংস্থা খতিয়ে দেখছে।

‘আমরা যতটুকু জেনেছি, এটি একটি বাণিজ্যিক ভবন। গ্রাউন্ড ফ্লোরে বিভিন্ন স্যানেটারি সামগ্রী ছিল। পাশে একটা ব্যাংক ছিল। কিছু কমার্শিয়াল দোকানও ছিল। তদন্ত না করে বিস্তারিত বলা যাচ্ছে না।’

মঙ্গলবার সন্ধ্যায় বিস্ফোরণস্থল পরিদর্শন শেষে ব্রিফ করেন ডিএমপি কমিশনার খন্দকার গোলাম ফারুক। ছবি: নিউজবাংলা

বিস্ফোরণস্থলে উদ্ধার কাজ পরিদর্শন শেষে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) চেয়ারম্যান মো. আনিছুর রহমান মিঞা বলেন, ‘ফায়ার সার্ভিস প্রাথমিকভাবে আমাদের জানিয়েছে, ওই ভবনে গ্যাসের লাইনের ছিদ্র থেকে গ্যাস জমেছিল। সেটা থেকে বিস্ফোরণ হতে পারে।’

সার্বক্ষণিক ব্যস্ত এলাকা গুলিস্তানের সিদ্দিক বাজার। মঙ্গলবার বিকেলের চিত্রও এর ব্যতিক্রম ছিল না। নর্থ-সাউথ রোড ধরে ছিল ভিড় করে মানুষের যাতায়াত। এ মাঝেই ১৮০/১ নম্বর ভবনে ঘটে প্রচণ্ড শব্দে বিস্ফোরণ। কেঁপে উঠে পুরো এলাকা। ধোঁয়ায় আচ্ছন্ন হয়ে যায় চারপাশ।

‘ক্যাফে কুইন’ নামে সাততলা ভবনের নিচতলায় বিকট শব্দে বিস্ফোরণ ঘটে। এসময় পাশাপাশি থাকা দুটি ভবন ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ৭ তলা ভবনটির বেজমেন্ট এবং প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় তলা ধসে পড়ে।

বিস্ফোরণের এই ঘটনা ঘটে মঙ্গলবার বিকেল পৌনে ৫টার দিকে। ফায়ার সার্ভিসের ১১টি ইউনিট ও ৫টি অ্যাম্বুলেন্স উদ্ধার কার্যক্রম চালাচ্ছে। তবে ঝুঁকিপূর্ণ বিবেচনায় ভবনের ভেতরে উদ্ধার কাজ রাত ৯টার দিকে বন্ধ করে দেয়া হয়।

সরেজমিনে দেখা যায়, বিস্ফোরণের আঘাতে ১৮০/১ নম্বর হোল্ডিংয়ের ভবনের উপরে তিনটি ফ্লোর ভেঙে বেজমেন্ট ধসে পড়েছে।

৭ তলা ভবনটির বেজমেন্ট থেকে উপরের তিন ফ্লোরে কয়েকটি বিম দাঁড়িয়ে আছে। এসব বিমেরও এর প্রায় সবই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, ধসে পড়েছে ছাদ। বিস্ফোরণের ধাক্কায় কাচের দরোজা-জানালা ভেঙে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে পাশের রাস্তাজুড়ে।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বিস্ফোরণের সময় চন্দ্রা থেকে সদরঘাটগামী সাভার পরিবহন নামে একটি বাস সামনের রাস্তা দিয়ে যাচ্ছিল। ওই বাসও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বাসে থাকা অধিকাংশ যাত্রী আহত হয়েছেন। তাদের সরাসরি ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হয়েছে।

বিস্ফোরণে ভবনটির দেয়াল ভেঙে যাওয়ার পাশাপাশি ভেতরের জিনিসপত্র ছিটকে বাইরে বেরিয়ে এসেছে। ভাঙা টুকরোর আঘাতে আহত হয়েছেন পথচারী ও আশপাশের মানুষ।

উবারের গাড়ি চালক আনোয়ার হোসেন জানান, বিস্ফোরণের সময় তিনি নর্থ-সাউথ রোডেই রাস্তায় গাড়িতে ছিলেন। এ সময় হঠাৎ বিস্ফোরণে কেঁপে ওঠে সবকিছু, ধোঁয়ায় কয়েক হাত দূরের জিনিসও দেখা যাচ্ছিল না।

এর পরপরই তিনি দেখতে পান যে পায়জামা-পাঞ্জাবি পরা এক লোক উড়ে তার গাড়ির ছাদে এসে পড়েছেন। তার মাথা দিয়ে রক্ত ঝরছে। এ অবস্থায় তিনি হতবুদ্ধি হয়ে পড়েন। গাড়ি টান দিয়ে কিছুটা এগিয়ে যান। পরে রাস্তার পাশে গাড়ি দাঁড় করান।

ফায়ার সার্ভিসের উদ্ধার তৎপরতা। ছবি: নিউজবাংলা

বিস্ফোরণের ভয়াবহতা সড়ক জুড়েও। রাস্তায় চলাচল করা যাত্রীবাহী বাসও বিস্ফোরণে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বাসের জানালার কাচ ভেঙে গেছে। আহত হয়েছেন বাসে থাকা যাত্রীরাও।

ফায়ার সার্ভিস, পুলিশ ও স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ক্যাফে কুইন ভবনে বেশিরভাগই স্যানিটারি ওয়্যারের দোকান। ভবনের পাশে ব্র্যাক ব্যাংকের ভবন। ক্যাফে কুইন ভবনের বিস্ফোরণে ব্র্যাক ব্যাংক ভবনসহ আশপাশের স্থাপনারও ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

স্থানীয় বাসিন্দা ও ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী মো. ইয়াসিন জানান, বিকেল পৌনে ৫টার দিকে হঠাৎ বিকট আওয়াজ শুনতে পান। এরপরই দেখতে পান মানুষ দিগ্বিদিক ছোটাছুটি করছে। অনেককেই ক্যাফে কুইন ভবনের সামনে পড়ে থাকতে দেখা যায়। তাদের অনেকে ওভাবেই মারা যান।

এ বিভাগের আরো খবর