বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

আইনি লড়াইয়ের ৪৮ বছর, রায় পক্ষে এলেও বেঁচে নেই জিল হোসেন

  • নিজস্ব প্রতিবেদক   
  • ৭ মার্চ, ২০২৩ ১৭:৩৭

বিচারিক আদালত থেকে মামলার বাদী জিল হোসেনকে ক্ষতিপূরণ বাবদ ২ কোটি ২০ হাজার টাকা দেয়ার রায় বহাল রেখেছে হাইকোর্ট। একইসঙ্গে ২০০৮ সাল থেকে এই টাকার ওপর আরও ১০ শতাংশ লাভ দিতে বলেছে আদালত। এই অর্থ পাবেন বাদীর উত্তরাধিকারী।

সিরাজগঞ্জের কাজীপুর উপজেলার চিলগাছা গ্রামের বাসিন্দা জিল হোসেন। একটি মামলা তাকে ব্যাপক পরিচিতি এনে দিয়েছে। একইসঙ্গে তাকে করেছে নিঃস্ব। পুরোটা জীবন তার কেটে গেছে এই মামলার পেছনে।

শিক্ষা সনদের জন্য জিল হোসেন আইনি লড়াইটা শুরু করেছিলেন আজ থেকে ৫০ বছর আগে। এই লড়াই চালাতে গিয়ে সহায়-সম্বল বলতে কিছুই আর অবশিষ্ট নেই। কিন্তু তিনি থেমে যাননি। অবশেষে মামলার রায় তার পক্ষে আসে। মঙ্গলবার হাইকোর্টও সেই রায় বহাল রেখেছে। কিন্তু সেই যোদ্ধাই আজ আর বেঁচে নেই।

বিচারিক আদালত থেকে মামলার বাদী জিল হোসেনকে ক্ষতিপূরণ বাবদ ২ কোটি ২০ হাজার টাকা দেয়ার রায় বহাল রেখেছে হাইকোর্ট। একইসঙ্গে ২০০৮ সাল থেকে এই টাকার ওপর আরও ১০ শতাংশ লাভ দিতে বলেছে আদালত। এই অর্থ পাবেন বাদীর উত্তরাধিকারী।

বিচারপতি বিষ্মদেব চক্রবর্তী ও বিচারপতি মো. আলী রেজার হাইকোর্ট বেঞ্চ মঙ্গলবার এই রায় দেয়।

আদালতে জিল হোসেনের পক্ষে আইনজীবী ছিলেন চঞ্চল কুমার বিশ্বাস। আর বিবাদী কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষে ছিলেন ব্যারিস্টার তানিয়া আমীর ও মিয়া মো. ইশতিয়াক।

রায়ের পর আইনজীবী চঞ্চল কুমার বিশ্বাস নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আজ (মঙ্গলবার) আলোচিত এই মামলার রায় ঘোষণা করা হয়েছে। বিচারিক আদালতের রায় বহাল রেখেছে হাইকোর্ট। সে সঙ্গে ২০০৮ সাল থেকে দুই কোটি টাকার ওপর ১০ শতাংশ হারে লভ্যাংশ দিতে বলেছে আদালত।’

এই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল দায়ের করা হবে না কিনা জানতে চাইলে আইনজীবী মিয়া মো. ইশতিয়াক বলেন, ‘মামলার সিনিয়র আইনজীবী দেশের বাইরে আছেন। তাকে বিষয়টি জানাব। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকেও জানাব। তারপর তারা করণীয় বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন।’

হাইকোর্টের রায়ে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন মামলার বাদী জিল হোসেনের ছোট ছেলে নুর মোহাম্মদ কিরন। নিউজবাংলাকে তিনি বলেন, ‘এই রায়ে আমরা সন্তুষ্ট, খুশি। একইসঙ্গে খারাপ লাগছে যে বাবা আজ আর বেঁচে নেই। রায়টি বাবা দেখে যেতে পারলে আরও ভালো লাগতো। এখন আমাদের প্রত্যাশা, আদালতের এই রায় যেন দ্রুত বাস্তবায়ন হয়।’

মামলা থেকে জানা যায়, জিল হোসেন ১৯৭১-৭২ শিক্ষাবর্ষে ময়মনসিংহে অবস্থিত বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতকের পরীক্ষার্থী ছিলেন। এই পরীক্ষা হয় ১৯৭৩ সালে। কিন্তু ভুল করে মাত্র দশমিক ৫ নম্বর যুক্ত না করায় অকৃতকার্য হন জিল। এই ফল পুনর্বিবেচনার জন্য অ্যাকাডেমিক কাউন্সিলে তিনি আবেদন করলেও কোনো কাজ হয়নি। পরে প্রতিকার চেয়ে ১৯৭৫ সালের ২২ এপ্রিল ময়মনসিংহের প্রথম মুনসেফ আদালতে মামলা করেন তিনি।

এই মামলায় ১৯৭৫ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর অ্যাকাডেমিক কাউন্সিলের সিদ্ধান্ত এবং ভগ্নাংশ নম্বর যোগ না করে জিলকে অকৃতকার্য করানোকে বেআইনি ঘোষণা করে আদালত। এরপর বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ওই রায়ের বিরুদ্ধে প্রথমে জজ আদালতে এবং পরে হাইকোর্টে আপিল করে বসে। হাইকোর্ট মামলাটি পুনর্বিচারের জন্য ময়মনসিংহের প্রথম মুনসেফ আদালতে পাঠায়।

এবারও জিল হোসেনের পক্ষে আসে আদালতের রায়। ১৯৭৮ সালের ২৪ জানুয়ারি মুনসেফ আদালত ভগ্নাংশ নম্বর যোগ করে ৩০ দিনের মধ্যে তার পরীক্ষার ফল প্রকাশের নির্দেশ দেন। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ সে রায়ও মানেনি। রায়ের বিরুদ্ধে প্রথমে জেলা জজ আদালত ও পরে হাইকোর্টে আপিল করা হয়।

তবে ১৯৮৩ সালের ১৬ জানুয়ারি ফল প্রকাশে আগের সিদ্ধান্তকেই বহাল রাখে হাইকোর্ট। এই রায়ের ফলে ১৯৮৬ সালে আবেদন করলে পাস মার্ক দিয়ে জিলকে ১৯৯৭ সালের ২২ অক্টোবর সার্টিফিকেট দেয় বিশ্ববিদ্যালয়।

এই পর্যায়ে ২০০০ সালের ১৮ অক্টোবর ক্ষতিপূরণ দাবি করে ফের আবেদন করেন জিল হোসেন। তার এই আবেদনের শুনানি নিয়ে ২০০৮ সালের ২৬ অক্টোবর রায় দেয় ময়মনসিংহের প্রথম যুগ্ম জেলা জজ আদালত। রায়ে ৩০ দিনের মধ্যে ২ কোটি ২০ হাজার টাকা ক্ষতিপূরণের নির্দেশ দেয়া হয়। তবে ২০০৯ সালে এই নির্দেশের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে আপিল করে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। এরপর দীর্ঘ শুনানি শেষে ১৪ বছর পর মঙ্গলবার রায় ঘোষণা করল হাইকোর্ট।

কিন্তু দীর্ঘ আইনি লড়াইয়ের শেষটা দেখে যেতে পারলেন না জিল হোসেন। গত বছরের ২১ ফেব্রুয়ারি ৭২ বছর বয়সে মারা যান তিনি।

এ বিভাগের আরো খবর