বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

মিটুনের স্ত্রীর অপেক্ষা আর কখনও ফুরোবে না

  •    
  • ৭ মার্চ, ২০২৩ ১৪:৩৩

রেলওয়ের বিভাগীয় ব্যবস্থাপক আবিদুর রহমান জানান, দুর্ঘটনা তদন্তে রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের চট্টগ্রাম বিভাগীয় পরিবহন কর্মকর্তা মুহাম্মদ তারেক ইমরানকে প্রধান করে তিন সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে।  

প্রতিদিন স্বামী-স্ত্রী প্রায় একই সময়ে বাসায় ফিরলেও সোমবার সময়মত ফেরেননি মিটুন কান্তি দে। তাই স্ত্রী ফোন করে দেরি হওয়ার কারণ জানতে চেয়েছিলেন। মিটুন জানিয়েছিলেন স্যালারির টাকা তুলতে যাচ্ছেন এটিএম বুথে, একটু দেরি হলেও একেবারে বাজার করে তবেই ফিরবেন। ফোন কেটে বাজারসহ স্বামীর অপেক্ষায় ছিলেন স্ত্রী সাগরিকা দে রিয়া। সেই অপেক্ষা যে আর কখনও ফুরাবে না কল্পনা করতে পারেননি রিয়া।

সোমবার ইপিজেডের অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানে একসঙ্গে স্যালারি হওয়ায় ওই এলাকার সবগুলো এটিএম বুথে ভিড় ছিল। তাই ভিড় এড়াতে মিটুন ৬ কিলোমিটার দূরের সাউথ ইস্টার্ন টার্মিনাল এলাকার আরেকটি বুথে গিয়েছিলেন। পরবর্তীতে টাকা তুলে ফিরছিলেন আকমল আলী সড়কের বাসায় ৷ ফেরার পথে ওই এলাকাতেই তাদের বহনকারী বাস দ্রুতগতিতে ধাক্কা দেয় ট্রেনের খালি ইঞ্জিনকে। এতে বাসটি উল্টে গিয়ে নিহত হন মিটুনসহ তিনজন।

নগরীর ইপিজেডের কর্ণফুলী সুজ লিমিটেডে (গার্মেন্টস) অপারেটর হিসেবে চাকরি করতেন মিটুন কান্তি দে। মাত্র ১৯ দিন আগে এই চাকরিতে যোগ দিয়েছিলেন। চাকরিতে যোগ দিয়ে গেল ফেব্রুয়ারি কর্মস্থলে উপস্থিত ছিলেন ১৩ দিন। এই ১৩ দিনের ১২ হাজার ৫৭৩ টাকা স্যালারি পেয়েছিলেন। সেই স্যালারি থেকে ওঠানো টাকা এখনও মিটুনের ব্যাগে পড়ে আছে। আর মিঠুন চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের মর্গে।

বাজার করে ফিরতে স্ত্রীকে একটু দেরি হওয়ার কথা জানিয়েছিলেন মিটুন। স্ত্রীও অপেক্ষা করছিলেন। সেই অপেক্ষা যে আর কখনও ফুরাবে না কল্পনা করতে পারেননি রিয়া। মিটুন আর রিয়ার ৬ বছরের একটি ছেলে সন্তান আছে। নিজে পড়াশোনা খুব বেশি করতে না পারলেও মিটুনের স্বপ্ন ছিল ছেলেকে পড়াশোনা শিখিয়ে মানুষ করার। গ্রামের একটি স্কুলে ছেলেকে ভর্তি করিয়েছিলেন এবার। কিন্তু হঠাৎ ঝড়ে তছনছ হয়ে গেছে মিটুন-রিয়ার সংসার। এসবের কিছুই মেনে নিতে পারছেন না মিটুনের স্ত্রী সাগরিকা দে রিয়া।

দুর্ঘটনার খবর পেয়ে রাতেই হাসপাতালে পৌঁছান রিয়া। বারবার হুমড়ি খেয়ে পড়েছেন মৃত স্বামীর বুকে। কারণ জানতে চাইছেন অনন্ত অপেক্ষার ৷ ঘণ্টা খানেক আগেই অপেক্ষা করতে বলা মানুষটি এখন স্মৃতি এ যেন কোনোভাবেই বিশ্বাস হচ্ছিল না রিয়ার। তার গগন বিদারী আহাজারিতে ভারি হয়ে ওঠে হাসপাতালের পরিবেশ। চোখ ভিজে যায় আশেপাশে থাকা সবার। স্বজনদের শত সান্ত্বনাও থামাতে পারেনি রিয়ার আহাজারি। জীবনসঙ্গীকে ফেরত চেয়ে বার বার মূর্ছা যাচ্ছিলেন রিয়া।

দুর্ঘটনায় মিটুনের মৃত্যুর খবর পেয়ে হাসপাতালে ছুটে আসা খালাতো ভাই সুজন ধর জানান, অনেক সুখী একটা পরিবার ছিল তাদের। মিটুন তার স্ত্রীকে প্রচণ্ড ভালোবাসতো। একমাত্র ছেলে শিফনকে নিয়েও অনেক স্বপ্ন ছিল তার। এই একটা দুর্ঘটনা সব ওলট-পালট করে দিল।

সোমবার রাত আটটার দিকে নগরীর ইপিজেড থানার বিমানবন্দর সড়কে সাউথ ইস্টার্ন টার্মিনাল এলাকায় ট্রেনের চলন্ত ইঞ্জিনকে ধাক্কা দিয়ে উল্টে যায় একটি মিনিবাস। এ ঘটনায় একজন রেলকর্মী ও দুই বাসযাত্রীর মৃত্যু হয়। দুর্ঘটনায় ওই বাসে থাকা ১৫ থেকে ২০ জন যাত্রীর প্রায় সবাই আহত হন। তবে অধিকাংশেরই আঘাত হালকা। তারা স্থানীয় বিভিন্ন হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়েছেন।

ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী রেলওয়ের কর্মচারী আনোয়ার বলেন, ‘রাতে চিটাগাং গুডস পোর্ট ইয়ার্ড (সিজিপিওয়াই) থেকে খালি ট্রেনটি তেলের জন্য মেঘনা ডিপোতে যাচ্ছিল। ট্রেনটি ক্রসিং পার হওয়ার সময় বাসকে সিগন্যাল দেয়া হয়েছিল। কিন্তু বাসটি সিগন্যাল না মেনে দ্রুত গতিতে এগিয়ে গেলে সেটিকে ট্রেন ধাক্কা দেয়। ধাক্কার পর বাসটি উল্টে গিয়ে আজিজ ভাইয়ের ওপর পড়ে। তখন তাকে নিয়ে আমরা হাসপাতালে চলে গেছি।’

রেলওয়ের বিভাগীয় ব্যবস্থাপক (ডিআরএম) আবিদুর রহমান জানান, দুর্ঘটনা তদন্তে রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের চট্টগ্রাম বিভাগীয় পরিবহন কর্মকর্তা মুহাম্মদ তারেক ইমরানকে প্রধান করে তিন সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে।

এ বিভাগের আরো খবর