জ্বালানি, অবকাঠামো, পর্যটন, কৃষি প্রক্রিয়াজাত শিল্পসহ বাংলাদেশের বিভিন্ন সেক্টরে বিনিয়োগে কাতারের উদ্যোক্তাদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বিষয়ে বাংলাদেশ ও কাতারের একটি যৌথ একটি কমিটি গঠনেরও আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।
সোমবার দোহার সেন্ট রেজিস হোটেলে কাতারের ব্যবসায়ীদের সঙ্গে ‘দ্য রাইজ অফ বেঙ্গল টাইগার: পটেনশিয়ালস অফ ট্রেড অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট ইন বাংলাদেশ’ শীর্ষক অনুষ্ঠানে তিনি এই আহ্বান জানান।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘যৌথ ব্যবসায়িক ফোরাম প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে বাংলাদেশ ও কাতারের বেসরকারি খাতগুলোকে পারস্পরিক লাভজনক অর্থনৈতিক অংশীদারত্বের জন্য একক প্লাটফর্মে আনতে হবে।
পারস্পরিক লাভজনক অর্থনৈতিক অংশীদারত্বের ভিত্তিতে আমাদের সম্পর্ককে পুনঃস্থাপন করতে হবে।’
এ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী কাতারের ব্যবসায়ীদের একটি প্রতিনিধি দলকে বাংলাদেশ সফরের আমন্ত্রণ জানান। পাশাপাশি কাতারে বসবাসরত অনাবাসী বাংলাদেশিদেরকে দেশে বিনিয়োগ এবং জাতি গঠন প্রচেষ্টায় অংশগ্রহণের আহ্বান জানান তিনি।
সরকার প্রধান বলেন, ‘আমরা আমাদের অবকাঠামো এবং লজিস্টিক খাত বিনিয়োগের জন্য উন্মুক্ত রেখেছি। নবায়নযোগ্য জ্বালানিসহ জ্বালানি খাতে কাতারি বিনিয়োগের সুযোগ রয়েছে। সমুদ্রে গ্যাস অনুসন্ধান ও জ্বালানি বিতরণে কাতারের দক্ষতা থেকে আমরা লাভবান হতে পারি। আমরা তিনটি বিশেষ পর্যটন অঞ্চল প্রতিষ্ঠা করছি, যেখানে রিয়েল এস্টেট ও সেবা সেক্টরে কাতার সম্পৃক্ত হতে পারে।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘স্মার্ট বাংলাদেশে আমরা অন্তত দশটি ইউনিকর্ন (মেগা বিনিয়োগ ও উদ্যোগ) পেতে চাই। আমাদের প্রাণবন্ত স্টার্ট-আপ কাতারের বিনিয়োগের জন্য প্রস্তুত। কাতারের বিনিয়োগকারীরা বাংলাদেশকে বিনিয়োগের পোর্টফোলিও হিসেবে বিবেচনা করতে পারেন।
‘আমাদের অঞ্চলে বাংলাদেশে বিনিয়োগ ব্যবস্থা সবচেয়ে উদার। ট্যাক্স হলিডে, যন্ত্রপাতি আমদানিতে রেয়াতি শুল্ক, রয়্যালটি রেমিট্যান্স, প্রযুক্তিগত জ্ঞান এবং ফি, শতভাগ বিদেশী ইক্যুইটি, অবাধ বহির্গমন নীতি, লভ্যাংশের সম্পূর্ণ প্রত্যাবাসন সুবিধা এবং মূলধন ফেরতসহ বিভিন্ন ধরনের সুবিধা দিচ্ছে বাংলাদেশ।’
১০০ বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল এবং ঝামেলাহীন বিদেশি বিনিয়োগ প্রক্রিয়ার উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা) বিদেশি বিনিয়োগকারীদের এক ছাদের নিচে সব সেবা দিচ্ছে।’
বাংলাদেশের পুঁজিবাজারকে শক্তিশালী করতে সরকারের উদ্যোগের উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বন্ড মার্কেটকে একটি দৃঢ় ভিত্তির ওপর প্রতিষ্ঠিত করতে আমরা বেশকিছু পদক্ষেপ নিয়েছি। আমরা দ্রুতই আমাদের পুঁজিবাজারে ডেরিভেটিভ পণ্য অন্তর্ভুক্ত করতে যাচ্ছি।’
সরকার প্রধান বলেন, ‘পদ্মা বহুমুখী সেতু, কর্ণফুলী টানেল, মাতারবাড়ি গভীর সমুদ্র বন্দর, ঢাকা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের সম্প্রসারিত তৃতীয় টার্মিনাল, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র, ঢাকায় মেট্রো রেল ব্যবস্থার মতো মেগা প্রকল্পগুলো আমাদের এগিয়ে যাওয়ার প্রমাণ।
‘আমাদের রয়েছে সস্তা মজুরিতে সহজে প্রশিক্ষণযোগ্য বিশাল কর্মী বাহিনী। আছে বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম নিবন্ধিত আইটি ফ্রিল্যান্সাররা। আমরা প্রত্যন্ত অঞ্চল পর্যন্ত আমাদের ডিজিটাল ব্যবস্থার বিকাশ ঘটিয়েছি। আমাদের ছেলেমেয়েরা চতুর্থ শিল্প বিপ্লবে যোগ দিতে নিজেদের প্রস্তুত করছে।’
শেখ হাসিনা বলেন, “জ্বালানি চাহিদা মেটাতে আমরা কাতার থেকে এলএনজি আমদানি বাড়াতে আগ্রহী। বাংলাদেশে আরও রপ্তানির সুযোগ অন্বেষণ করতে আমরা কাতারকে অনুরোধ করছি। কাতারের ‘ভিশন-২০৩০’ বাস্তবায়নে অংশীদার হতে চায় বাংলাদেশ। জ্ঞান ও দক্ষতার সঙ্গে আমাদের কর্মীবাহিনী দিয়ে আমরা কাতারের উন্নত কর্মসংস্থান বাজারের চাহিদা পূরণ করতে পারি।”
অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সম্ভাবনা তুলে ধরে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম এবং বিডার নির্বাহী চেয়ারম্যান লোকমান হোসেন মিয়া দুটি আলাদা প্রেজেন্টশন উপস্থাপন করেন।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে সঙ্গে নিয়ে যৌথভাবে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে বিএসইসি ও বিডা।