মসলা জাতীয় ফসল পেঁয়াজ, আদা, রসুনসহ সবজি জাতীয় ফসল ও বিভিন্ন ফলের সংরক্ষণকাল বৃদ্ধিতে সাফল্য পাওয়ার দাবি করেছেন ময়মনসিংহে অবস্থিত বাংলাদেশ পরমাণু কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের (বিনা) বিজ্ঞানীরা।
তারা বলছেন, গামা রশ্মি প্রয়োগের মাধ্যমে পেঁয়াজসহ অন্য ফসলের ওজন হ্রাস, পচন ও স্পাউটিং কমিয়ে আনা একটি গুরুত্বপূর্ণ পদ্ধতি। এ পদ্ধতির মাধ্যমে ফসলের গুণগত মান বজায় রেখে সংরক্ষণকাল বৃদ্ধি করা হয়। এর ফলে পেঁয়াজসহ অন্য ফসলের সংরক্ষণউত্তর ক্ষতি কমবে এবং অসময়ে বাজারে এসব ফসলের যোগান দিয়ে দাম স্থিতিশীল রাখা যাবে।
এই গবেষণার ফলে কৃষিপণ্যের আমদানি নির্ভরতা কমে আসবে এবং বিদেশে রপ্তানি করে কৃষকরা লাভবান হবেন বলেও মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
চলছে বিনার গবেষণা। ছবি: নিউজবাংলা
ইনস্টিটিউট সূত্রে জানা যায়, মসলা জাতীয় ফসলের মধ্যে পেঁয়াজ অন্যতম। শুধু শীতকালে পেঁয়াজ চাষ করে পেঁয়াজের চাহিদা মেটানো সম্ভব না। দেশে সারা বছর পেঁয়াজ চাষাবাদ না হওয়ায় চাহিদা মেটাতে বিদেশ থেকে আমদানি করতে হয়। ফলে মাঝেমধ্যেই সাধারণ ক্রেতাদের হাতের নাগালের বাইরে থাকে এই মসলা জাতীয় খাদ্যটি।
২০২০-২১ সালে বাংলাদেশে ১ লাখ ৯৪ হাজার হেক্টর জমিতে প্রায় ২ দশমিক ৩ মিলিয়ন মেট্রিক টন পেঁয়াজ উৎপাদন হয়। ওই সময়ে দেশে পেঁয়াজের চাহিদা ছিল ৩ মিলিয়ন টন। উৎপাদিত পেঁয়াজের মধ্যে ৩০ শতাংশ পচে যাওয়ার কারণে উৎপাদিত পেঁয়াজ দাঁড়ায় ১ দশমিক ৯ মিলিয়ন টন। বাকি চাহিদা পূরণের জন্য পেঁয়াজ আমদানি করতে হয়েছে।
পেঁয়াজসহ অন্য ফসলের সংরক্ষণকাল বৃদ্ধির জন্য এক পর্যায়ে বিনার বিজ্ঞানীরা গবেষণা শুরু করেন। পেঁয়াজ ছাড়া আদা, রসুন, আলু, সবজি, টমেটো, করলা, পটল, আম, কলাসহ সর্বশেষ পান নিয়ে চলছে এই গবেষণা।
বিনার উদ্যানতত্ত্ব বিভাগের ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. নাসরীন আখতার জানান, মসলা জাতীয় ফসল পেঁয়াজ, আদা, রসুন, সবজি জাতীয় আলু, পটল, করলা ও ফল জাতীয় আম, কলায় গামা রশ্মি ব্যবহারের মাধ্যমে সংরক্ষণকাল বৃদ্ধি করতে ২০২০ সালে গবেষণা কাজ শুরু করা হয়।
তিনি জানান, গবেষণায় দীর্ঘ ট্রায়ালের মাধ্যমে এসব ফসলের ওজন হ্রাস ও পচনের মাত্রা অনেকাংশেই কমে আসে এবং পেঁয়াজে অংকুরোধগম হয় না। এর ফলে ৭ থেকে ৯ মাস সংরক্ষণকাল বৃদ্ধি পেয়েছে।
পেঁয়াজ রসুন আদা নিয়ে বিনার গবেষণা। ছবি: নিউজবাংলা
উদ্যানতত্ত্ব বিভাগের প্রধান ড. রফিকুল ইসলাম জানান, দেশে উচ্চ তাপমাত্রা ও উচ্চ আদ্রতার কারণে কৃষক নিজ বাড়িতে দুই থেকে তিন মাস পেঁয়াজ সংরক্ষণ করে রাখতে পারেন। ফলে পরবর্তী পর্যায়ে কৃষককে উচ্চ মূল্যে পেয়াঁজ কিনতে হয় এবং বিদেশ থেকে পেঁয়াজ আমদানির ওপর নির্ভর করতে হয়।
তিনি বলেন, ‘গবেষণার ফলাফলে দেখা যায়, গামা রশ্মি প্রয়োগের মাধ্যমে সংরক্ষণকাল বৃদ্ধি পেয়ে প্রায় সাত থেকে নয় মাস পর্যন্ত কৃষক নিজ বাড়িতে পেঁয়াজ সংরক্ষণ করে রাখতে পারবেন। এর ফলে বাংলাদেশে পেঁয়াজের আমদানি নির্ভরতা কমবে এবং বৈদেশিক মুদ্রার অপচয় রোধ হবে। শুধু পেঁয়াজ না, এ রকম মসলা সবজি এবং ফুল জাতীয় ফসলেও গামা রশ্মি প্রয়োগের মাধ্যমে সংরক্ষণকাল বৃদ্ধি করা যায়।’
এ বিষয়ে বাংলাদেশ পরমাণু কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের (বিনা) মহাপরিচালক ড. মির্জা মোফাজ্জল ইসলাম বলেন, ‘কৃষিপণ্যের সংরক্ষণকাল বেড়ে গেলে আমদানির পরিবর্তে রপ্তানি করা সম্ভব হবে। এতে একদিকে কৃষিপণ্যের অপচয় রোধ হবে, অন্যদিকে সরকারের রাজস্ব আয় বাড়বে। লাভবান হবে কৃষকও।’
তিনি আরও বলেন, ‘কৃষিপণ্যের সংরক্ষণকাল বাড়ানোর লক্ষ্যে গাজীপুরে বৃহৎ আকারে ইরাডিয়েশন সেন্টার স্থাপনের প্রকল্প বাস্তবায়নে কাজ করছে সরকার। এই প্রকল্পের কাজ শেষে পেঁয়াজসহ কৃষিপণ্যে গামা রশ্মি প্রয়োগের ব্যবস্থা করা গেলে এসব পণ্যের সংরক্ষণকাল ব্যবহার বাড়ানো সম্ভব হবে।’