চট্টগ্রামের চন্দনাইশ উপজেলার কাঞ্চনাবাদ ইউনিয়নের কাঞ্চননগর গ্রাম। জমির উর্বরতা গুণে একসময় প্রচুর কাঞ্চনা ধান চাষ হতো এই এলাকায়। কাঞ্চনা পেয়ারার জন্যও দেশব্যাপী বিখ্যাত কাঞ্চননগর। এই কাঞ্চনা ধান ও কাঞ্চনা পেয়ারার নামেই কয়েক দশক আগে এলাকার নামকরণ হয়েছিল কাঞ্চননগর। কিন্তু ইটভাটার আধিক্যের কারণে ঐতিহ্য হারাতে বসেছে এই এলাকা।
গত দুই দশকে দুই ডজনেরও বেশি ইটভাটা গড়ে উঠেছে এই এলাকায়। এরমধ্যে বর্তমানে সচল রয়েছে দেড় ডজনের মত। এসব ইটভাটার অধিকাংশেরই পরিবেশগত ছাড়পত্র নেই। ভাটায় ইট তৈরিতে কৃষিজমির টপসয়েল কেটে নেয়ায় হারিয়ে যাচ্ছে জমির উর্বরতা। ট্রাকে করে ইট, ইট তৈরির মাটি ও জ্বালানি পরিবহনের কারণে নষ্ট হচ্ছে গ্রামের সড়ক, ধূলোয় অসুস্থ হচ্ছে সাধারণ মানুষ।
শনিবার কাঞ্চননগর ঘুরে দেখা যায়, ওই গ্রামের দুই কিলোমিটার এলাকায় বর্তমানে সচল ইটভাটা রয়েছে সতেরটি ৷ এসব ইটভাটার কোনো কোনোটি পাহাড় কেটে তৈরি। ইটভাটার গাড়ি চলাচলের কারণে সড়ক ও সড়কের দুপাশের গাছপালায় জমেছে ধূলোর আস্তরণ। কৃষি জমির টপসয়েল কেটে নেয়ার ফলে উর্বরতা কমে যাওয়ায় এখন আর আগের মত ফসলও পাননা কৃষকরা। তাই চাষাবাদ না করে অনাবাদি রেখে দিয়েছেন কৃষি জমি। এতে শত শত হেক্টর কৃষি জমি পড়ে আছে খালি।
ইটভাটার কারণে কৃষির ক্ষতি ও পরিবেশ দূষণের বিষয়ে চন্দনাইশ ইটভাটা মালিক সমিতির সভাপতি আব্দুর রহমান বলেন, ‘এখানকার প্রায় সব ইটভাটায় জিকজ্যাক। মানে এগুলো পরিবেশ দূষণকারী নয়। আমাদের অনেক ইটভাটার পরিবেশগত ছাড়পত্র আছে। কিছু কিছু ইটভাটার নেই সেগুলোর জন্য পরিবেশ অধিদপ্তরে আবেদন করা হয়েছে।’
এদিকে আদালতের নির্দেশনা সত্ত্বেও ইটভাটা গুড়িয়ে না দেয়ার পেছনে স্থানীয় প্রশাসনের অন্য কোনো উদ্দেশ্য থাকতে পারে বলে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন বাংলাদেশ হিউম্যান রাইটস ফাউন্ডেশনের (বিএইচআরএফ) মহাসচিব অ্যাডভোকেট জিয়া হাবীব আহসান।
জিয়া হাবীব আহসানের নেতৃত্বে বিএইচআরএফের ১২ সদস্যের একটি দল কাঞ্চননগরের এসব ইটভাটা পরিদর্শন ও চিহ্নিত করেন।
এ সময় তিনি বলেন, ‘প্রশাসনের ছত্রছায়ায় টিকে থাকা এসব ইটভাটা মালিকরা এতই প্রভাবশালী যে তারা মহামান্য সুপ্রিম কোর্টের আদেশের তোয়াক্কা করেন না। এলাকার ঐতিহ্যবাহী কাঞ্চন পেয়ারা বাগান ও কাঞ্চন ধানের চাষ ধ্বংস হয়ে গেছে, ক্ষেত কামারে ফলন নেই, ধূলায় ধোঁয়ায় বিবর্ণ হয়ে গেছে ফুলে সুশোভিত আমের মুকুল ও গাছের পাতা, জমির টপসয়েল বলতে কিছু নেই।
‘এলাকাবাসী ভুগছে চর্মরোগ আর শ্বাসকষ্টে। পরিবেশ অধিদপ্তর বা মোবাইল কোর্ট নির্লিপ্ত এসব এলাকায়। ভয়ে মুখ খুলতে পারেন না এলাকাবাসী। অবিলম্বে এসব অবৈধভাবে পরিচালিত ইটভাটা উচ্ছেদ না করলে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে মহামান্য সুপ্রিম কোর্ট এ আদালত অবমাননার অভিযোগ করব আমরা।’
ইটভাটার আধিক্যের কারণে কৃষি ক্ষেত্রের ক্ষতির বিষয়ে জানতে চাইলে কর্মস্থলের বাইরে প্রশিক্ষণে থাকায় তাৎক্ষণিক এই বিষয়ে তথ্য দিতে অপারগতা প্রকাশ করেন চন্দনাইশ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা স্মৃতি রানী সরকার।